ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

পদ্মার ভাঙনে ৪৬ বাড়ি বিলীন, হুমকির মুখে ৩ শতাধিক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২২
পদ্মার ভাঙনে ৪৬ বাড়ি বিলীন, হুমকির মুখে ৩ শতাধিক

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় ২ ঘণ্টার মধ্যে পদ্মার গর্ভে প্রায় ৪৬টি বাড়ি-ঘর বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে হুমকির মধ্যে রয়েছে প্রায় ৩ শতাধিক বাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

 

রোববার (১৪ আগস্ট) সকালে উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে নদী ভাঙনের তীব্রতা এবং সাধারণ মানুষদের আহাজারি। বাড়ি-ঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন অনেকে। আবার যাদের সার্মথ্য আছে তারা আশ্রয় নিচ্ছেন নিরাপদ স্থানে।  

এদিকে জরুরি ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড উজান ছেড়ে ভাটিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে। এতে উজানে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ কাজে স্থানীয়দের মধ্যে আরও আতঙ্ক বাড়ছে।

নদী ভাঙনের কবলে পড়া শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের মৃত জোহর আলীর ছেলে আব্দুস সামাদ জানান, মাত্র ২ ঘণ্টার ব্যবধানে প্রায় ৪৬টি বাড়ি পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। তার মধ্যে ২৬টি বাড়ির মালিক এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা ও বাকি ২০টি পরিবার এর আগেরবার ভাঙনের কারণে অন্য স্থান থেকে এসে এখানে বাড়ি করে বসবাস করছিলেন।  

তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে আরও জানান, আমার ১০ বিঘা জমি ছিল। ৪/৫ বার ভাঙনের কবলে পড়ে আগেই প্রায় সাড়ে ৯ বিঘা বিলীন হয়েছে। এবার বাকি সবটুকুই বিলীন হয়ে গেল। আমার ৮টি ছেলের ৮টি বাড়িসহ সবকিছুই বিলীন হয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে বাস করছি। কিছু টাকা পয়সার ব্যবস্থা হলে চেষ্টা করছি কারো জমি বর্গা নিয়ে অস্থায়ীভাবে বাড়ি তৈরি করবো।

শুধু আব্দুস সামাদই নন, এ প্রতিবেদককে দেখে প্রশাসনের লোক ভেবে গ্রামের ২০/২৫ জন ঘিরে ধরেন। এ সময় দেলওয়ার হোসেন, মুক্তার হোসেন, আমরুল হক, জোবদুল হক , জোহর আলি, খাইরুল ইসলাম সহ স্থানীয় বলেন, এখনো গ্রামের জামে মসজিদসহ প্রায় ২০/২২টি বাড়ি মাত্র ৬/৮ ফুটের ব্যবধানে অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে আছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে ২ দিনের মধ্যে সব পদ্মার পেটে চলে যাবে।

ওই গ্রামের এনামুল হক বলেন, ভাঙন রোধের কাজ চলছে, তবে ত্রুটিযুক্ত। যেখানে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে তার উজানে প্রায় ৫/৬শ মিটার ভাঙনের মুখে। ত্রুটিপূর্ণ কাজের কারণে আরও আতঙ্ক বেড়েছে। উজানের ভাঙন রোধ না হলে মনোহরপুর ৩০ রশিয়া ও ঝোপপাড়া গ্রামের প্রায় ২শ বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও কয়েকশ বিঘা জমি বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।  

এখনো স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, এর আগে মনোহরপুর ক্যাইঠাপাড়া গ্রাম বিলীন হয়েছে। তারা এ পর্যন্ত কোনো সাহায্য পায়নি। বারবার ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার আইডি কার্ড নিয়ে গেলেও আমাদের কপালে এক ছটাক চালও জোটেনি। অত্যন্ত গরিব হওয়ায় ও আর জমি না থাকায় কোথাও যেতে পারছি না। আমরা দুই মাস থেকে মানবেতর জীবন যাপন করলেও কেউ সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। কেউ কেউ বাড়ি-ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। কারণ এখনো বন্যা ও ভাঙন বাড়ছে।

মনোহপুরের কুপপাড়া গ্রামের সোহরাব আলী বলেন, পৈত্রিক সম্পত্তিগুলো দিনে দিনে পদ্মার ভাঙনে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। এই এলাকায় ছাড়া আর আমার কোথাও জায়গা জমি নাই। কোথায় যাবো, কোথায় থাকবো। পরের জমিতে ঘর তুলেছি। এ জমির মালিক এখন কিছু না বললেও, স্থায়ীভাবে তো আর জায়গা ছেড়ে দেবে না।

একই ভাবে ভাঙনের কবল থেকে বাঁচতে বাড়ি ভেঙে মুন্সিপাড়ায় ঘর তুলেছেন তবজুল হক। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এই এলাকায় নদী ভাঙন নতুন কিছুই না। এর আগেও কয়েকবার ভাঙন থেকে বাঁচতে পূর্বের ভিটামাটি ছেড়ে এসেছি। আর কতবার এলাকা ছাড়লে, কর্তৃপক্ষের নজরে আসবে?

ঘটনাস্থলে উপস্থিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মবিন বলেন, জরুরি হিসেবে গত ১ আগস্ট থেকে পদ্মার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ৬০ লাখ টাকা ব্যয় ধরে ৩টি প্যাকেজে কাজ শুরু হয়েছে। প্রতি প্যাকেজে ৭৫ ফিট করে মোট ২২৫ফিটের কাজ চলছে। কখন শেষ হবে এ ব্যাপারে তিনি বলেন, একমাত্র ঠিকাদারই বলতে পারবেন। তবে আশা করছি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে দুর্লভপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মনোহরপুর কুপপাড়াসহ সব ভাঙন কবলিত এলাকার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের কিছু চাল দেওয়া হয়েছে। অনুদান পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের অবশ্যই সহায়তা করা হবে।

আর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকার তালিকা ইউপি চেয়ারম্যান দেওয়ার পর সে মোতাবেক অনুদান দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসংগে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মুখলেশুর রহমান জানান, শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুরের মনোহরপুর ভাঙনের কবলে পড়েছে। তার মধ্যে মনোহর কুপপাড়া ও তার ভাটিতে ৪৫০ মিটারে টিউবসিস্টেমের জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি নদী ভাঙন এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। প্রকল্পটি পাস হলে, কাজ শুরু করা হবে।

অপরদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেন, পদ্মার ভাঙনকবলিত এলাকা নিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। ইতোমধ্যে ভাঙন রোধে কাজ শুরু হয়েছে এবং বর্তমানে ভাঙন রোধে রয়েছে। মনোহরপুর কুপপাড়ার উজানের ভাঙন রোধে টিউবসিস্টেম জি আর ব্যাগ ফেলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া ভাঙনকবলিত এলাকার একটি মানুষও যেন কষ্টে না থাকে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। যা দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।