ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

মধ্যরাতে ধরা প্রেমিক যুগল, রাতভর শিকল বেঁধে নির্যাতন!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২২
মধ্যরাতে ধরা প্রেমিক যুগল, রাতভর শিকল বেঁধে নির্যাতন!

পাবনা: পাবনার চাটমোহর উপজেলায় অনৈতিক কাজের সময় এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়েছে পরকীয়া প্রেমিক যুগল। তাদেরকে সারা রাত শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে অমানবিক নির্যাতনেরও অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়াও বিচারের নামে প্রহসনেরও অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার (১৩ আগস্ট) দিনব্যাপী উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটে। এর আগে শুক্রবার (১২ আগস্ট) রাতে নিমাইচড়ার করোকোলা গ্রামের আব্দুল খালেকের বাড়িতে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী, এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, করোকোলা গ্রামের সুমন আলীর স্ত্রী এক সন্তানের জননী শাপলা খাতুনের (২২) সঙ্গে পার্শবর্তী ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়নের হঠাৎপাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামে ছেলে এক সন্তানের জনক মো. হেলাল উদ্দিনের (২৭) পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। বিভিন্ন সময় তারা একে অপরের সাথে দেখা করতো ও একান্তে সময় কাটাতো। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে শাপলার ঘরে প্রবেশ করে হেলাল। এসময় এলাকাবাসী টের পেয়ে তাদেরকে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করে। পরে গাছের সঙ্গে শিকল দিয়ে বেধে সারারাত অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়।

পরে শনিবার সকালে তাদেরকে নিয়ে আসা হয় নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদে। সেখানে নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরজাহান বেগম মুক্তি এবং তার বোন অষ্টমনিষা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুলতানা জাহান বকুল সালিশি বৈঠক করেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলা সালিশি বৈঠকে প্রেমিক হেলালকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে মুক্তি দেওয়া হয় এবং প্রেমিকা শাপলাকে ফিরিয়ে নিতে স্বামী সুমনকে বলা হয়।

এই বিষয়ে হেলাল উদ্দিনের বাবা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছেলেকে বেঁধে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। পরবর্তীতে পরিষদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দিয়েছে। এই টাকা পরিষদের চৌকিদারসহ লোকজনরা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে। ’

এবিষয়ে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে শাপলা খাতুনের স্বামী সুমন আলীর কল রিসিভ করেননি। তবে জরিমানার বিষয়টি জানে না এবং সেই টাকাও তিনি পাননি বলে এলাকাবাসীকে জানিয়েছেন।

নিমাইচড়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরজাহান বেগম মুক্তি বলেন, ‘এলাকার ব্যক্তিবর্গ ও পাশ্ববর্তী অষ্টমনিষার চেয়ারম্যান আমার বড় বোন সুলতানা জাহান বকুল আপার উপস্থিতিতে তাদের সাংসারিক ও সন্তানদের কথা চিন্তা করে বিষয়টি মিটমাট করে দেয়া হয়েছে। কারোর প্রতি জোর-জুলুম করা হয়নি। তবে রাতে অভিযুক্তদের শিকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতন বিষয়টি আমি জানতাম না, পরবর্তীতে জেনেছি। আর জরিমানার বিষয়টিও আমার জানা নেই। ’

এ বিষয়ে অষ্টমনিষা ইউপি চেয়ারম্যান সুলতানা জাহান বকুল বলেন, ‘আমি সালিশের পুরো সময় ছিলাম না। জরুরি কাজে আমি চলে এসেছিলাম। পরবর্তীতে কি হয়েছে আমি জানিনা। নির্যাতনের বিষয়টিও আমি জানতাম না। ’

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। রাতে ওই যুগল আটক হলে আজ সকালে স্থানীয়রা বসে সমাধান করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ বা জরিমানা হয়েছে কিনা আমি জানি না। নির্যাতনের বিষয়টিও আমাদের জানা নেই। কেউ যদি থানায় অভিযোগ দেয়, তাহলে অবশ্যই আমরা প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেব। ’

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২২
আরইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।