ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

অভাবের তাড়নায় সন্তান বিক্রি করতে বাজারে তুললেন মা!

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২২
অভাবের তাড়নায় সন্তান বিক্রি করতে বাজারে তুললেন মা!

খাগড়াছড়ি: স্বামীর সঙ্গে দীর্ঘদিন যোগাযোগ নেই। নিজে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত।

থাকেন বাবার সংসারে। সেখানেও অভাব। নুন আনতে পান্তা ফুরায়। এ অবস্থায় সন্তান মানুষ করা কঠিন। তাই কলিজার টুকরা সন্তানকে ‘বিক্রির জন্য’ বাজারে তুলেছিলেন এক মা! দাম হাঁকিয়েছিলেন ১২ হাজার টাকা। পরে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির হস্তক্ষেপে সন্তান নিয়ে ঘরে ফেরেন ওই নারী।  

খাগড়াছড়ি জেলা শহরের এক বাজারে বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) এমন ঘটনা ঘটে।  

বিষয়টি জানাজানির পর জেলাজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার (১২ আগস্ট) পরিবারটির জন্য আর্থিক সহায়তা নিয়ে ছুটে যান সংরক্ষিত মহিলা আসনের এক এমপি।

জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি হাট বাজারে নিজের ৬ বছরের সন্তান রামকৃষ্ণ চাকমাকে বিক্রি করতে আনেন মা সোনালী চাকমা। সন্তানের বিনিময় তিনি ১২ হাজার টাকা চান। বিষয়টি কয়েকজনের নজরে এলে তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানান।

পরে সন্তানসহ মাকে কমলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুনীল চাকমার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। চেয়ারম্যান ওই মাকে বুঝিয়ে পরিবারের কাছে পাঠান।  

সোনালী চাকমা খাগড়াছড়ি ভাইবোনছড়ার পাকোজ্জ্যাছড়ি এলাকার কালাবো চাকমার মেয়ে। স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার পর সন্তান নিয়ে তিনি বাবার বাড়িতে থাকেন।

কমলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুনীল চাকমা জানান, বিষয়টি জানার পর আমি সন্তানসহ মাকে অফিসে নিয়ে আসি। পরে পরিবারের জিম্মায় তাদের হস্তান্তর করি।

ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুজন চাকমা বলেন, এমনিতে অভাব। সোনালী চাকমা শারীরিকভাবে অসুস্থ। মূলত সন্তানকে কোনো ভালো পরিবারে দত্তক দেওয়ার জন্য বাজারে নিয়ে যান তিনি। সেখানে কয়েকজনের কাছে তিনি সন্তানের বিনিময়ে ১২ হাজার টাকা চান। পরে বিষয়টি জেনে আমি দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি। বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক।

এ বিষয়ে শিশু রাম কৃষ্ণ চাকমার মা সোনালী চাকমা বলেন, ঘরে খাবার নাই। আমার ওষুধ কেনার টাকা নাই। কিভাবে চলব কিভাবে বাঁচবো। তাই ছেলেকে ভালো পরিবারে দিতে চেয়েছিলাম।

এদিকে শুক্রবার (১২ আগস্ট) সকালে সোনালী চাকমা ও তার সন্তান রামকৃষ্ণকে দেখতে যান সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা এমপি। এসময় তিনি পরিবারটিকে ৬ মাসের খাবার সামগ্রী, নগদ অর্থ সহায়তা দেন। একই সঙ্গে তাদের একটি সরকারি ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে জানান।

বাসন্তী চাকমা এমপি বলেন, এই যুগে এমন ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। বিষয়টি আমি জানার পর তাদের দেখতে এলাম। মূলত অভাব থেকে এমনটা করেছেন বলে জেনেছি।  শিশুটিকে কোনো সরকারি শিশু সদনে পাঠানো যায় কিনা দেখব।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২২
এডি/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।