ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

শোক দিবসের নামে নূর হোসেনের ভাইয়ের কোটি টাকা চাঁদাবাজি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২২
শোক দিবসের নামে নূর হোসেনের ভাইয়ের কোটি টাকা চাঁদাবাজি

নারায়ণগঞ্জ : ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস পালনের নামে কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলায় মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনের ছোট ভাই নুরুজ্জামান ওরফে জজ মিয়ার বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, শিমরাইলের প্রতিটি ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিকদের ডেকে নিয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন তিনি।

৫০ হাজার টাকা করে তাদের কাছ থেকে চাঁদাও নিচ্ছেন।

একটি সূত্র জানিয়েছে, শোক দিবসের নামে নারায়ণগঞ্জের ৫ শতাধিক ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিকদের কাছ থেকে কোটি টাকা চাঁদাবাজির মিশনে রয়েছেন নূর হোসেনের ছোট ভাই।

ইতোমধ্যে তিনি ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে শিমরাইল মোড়ে বিশাল আকৃতির একটি প্যান্ডেল তৈরি করেছেন। আগামী ১৫ আগস্ট সেখানে শোক দিবসের অনুষ্ঠান হবে।

কয়েকজন ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমানের নাম ভাঙিয়ে জজ মিয়া চাঁদাবাজি করছেন। সহযোগীদের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের নিজ অফিসে ডাকিয়ে নিচ্ছেন। সেখানে তাদের কাছ থেকে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে।

ভুক্তভোগীরা আরও জানান, জজ মিয়ার সহযোগীরা তাদের বলছেন, মুজিবুর রহমান সাহেবের নির্দেশ বড় করে ১৫ আগস্ট শোক দিবস অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। এজন্য ৩৬৫ ডেক বিরিয়ানির রান্না করতে হবে। এ আয়োজনে তাদের খরচ দিতে হবে।

গত শুক্রবার (৫ আগস্ট) থেকে শিমরাইল ট্রাক টার্মিনালের পাশে বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিকদের ডাকিয়ে নিচ্ছেন জজ মিয়া। ফোন করে তাদের অফিসে (আন্তঃ জেলা ট্রাক চালক ইউনিয়ন কার্যালয়) নিয়ে ভয়-ভীতি ও হুমকি-ধমকি দিয়ে চাঁদা আদায় করছেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সভাপতি মো. আব্দুর রশিদ বলেন, গত সোমবার (৮ আগস্ট) দুপুরে জজ মিয়ার সাঙ্গপাঙ্গরা আমাকে ফোন করে আন্তঃজেলা মালিক সমিতির অফিসে যেতে বলেন। আমি তার অফিসে না যাওয়ায় বিপুল সংখ্যক লোকজন নিয়ে আমার অফিসে আসেন জজ মিয়া। আমার অফিসের বাইরে দশ পনের জন ছিল। চার-পাঁচজনকে সঙ্গে নিয়ে জজ মিয়া আমার কক্ষে ঢোকেন।

জজ মিয়া তাকে বলেন, ‘এখানে ব্যবসা করবেন না চলে যাবেন। এখানে ব্যবসা করতে হলে আমি যেভাবে বলব, সেভাবে আপনাকে চলতে হবে। কাল লোকজন ফোন করে আপনাকে ডেকেছিল আপনি আমার অফিসে কেন যাননি। ’

এ ঘটনার পর সমগ্র ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বলে জানান রশিদ।

সাধারণ ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির কয়েকজন মালিক নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, গত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নূর হোসেনের অপর ছোট ভাই নুরুদ্দিন মিয়া কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেন জজ মিয়া। আন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের কার্যালয়ে নিজের অফিস নির্মাণ করেন তিনি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার চাঁদাবাজির ব্যাপারে সংবাদও প্রকাশ হয়। কিন্তু প্রশাসন থেকে এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

যার নাম ভাঙিয়ে চাঁদা তোলা হচ্ছে, সেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, আমার কাছে এখনও কেউ এমন অভিযোগ নিয়ে আসেনি। তবে আমি শুনেছি নুরুজ্জামান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মালিকদের কাছ থেকে ২০ হাজার, ৫০ হাজার এমন টাকা চেয়েছে। এ বিষয়ে জানতে আমি কয়েকবার তাকে ফোন করলেও সে আমার ফোন রিসিভ করেনি।

বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি হাজী ইয়াসিন মিয়াও। তিনি বলেন, কেউ আমার কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ নিয়ে আসেননি। খোঁজ নেওয়া হবে।

এসব ব্যাপারে জানতে জজ মিয়ার মোবাইলে কয়েকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান এ ব্যাপারে বলেন, কয়েক জায়গায় এমন চাঁদা দাবীর ঘটনা ঘটেছে। তবে কেউ টাকা দেয়নি। আমরাও বিষয়টি শুনেছি এবং তাৎক্ষণিক আমাদের একটি টিম সেখানে গেছে। এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলেও তিনি জানান।

জানা গেছে, জজ মিয়া আন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়ন শিমরাইল শাখার সভাপতি। এ পদে দীর্ঘদিন দায়িত্বে ছিলেন আলোচিত সাত খুন মামলার মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেন।

বাংলাদেশ সময় : ১৪১০ ঘণ্টা, ১২ আগস্ট, ২০২২
এমআরপি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।