ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

মাসে সরকারি গাড়ির ১৮ হাজার লিটার তেল হাওয়া!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২২
মাসে সরকারি গাড়ির ১৮ হাজার লিটার তেল হাওয়া!

ঢাকা: সরকারি গাড়ির জ্বালানি তেল চুরি করে বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছেন খোদ চালকরাই। দৈনিক গাড়ি প্রতি ৩-৪ লিটার তেল সরিয়ে ফেলতেন তারা।

অন্তত ৫০টি সরকারি গাড়ি থেকে সরানো এই জ্বালানি তেল কিনতো আগারগাঁওয়ের তিনটি দোকান।

হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন একটি দোকানে সরকারি গাড়ির প্রায় ২০০ লিটার তেল যেতো, যার মাসিক হিসাব প্রায় ৬ হাজার লিটার। মোট তিনটি দোকানে মাসে প্রায় ১৮ হাজার লিটার চোরাই তেল কেনবেচা হয়ে আসছিল।

সরকারি গাড়ির চুরি করা তেল কেনাবেচা চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতাররা হলেন— মো. আবু কালাম (৫৬), মো. সুমন (৪০), মো. বাবু (২১), মো. শাহিন (১৯)। তাদের কাছ থেকে প্রায় ৬০০ লিটার অকটেন ও পেট্রোল উদ্ধার করা হয়েছে।

বুধবার (১০ আগস্ট) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।

তিনি বলেন, বেশকিছু দিন ধরে আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল আগারগাঁওয়ে বিজ্ঞান প্রযুক্তি জাদুঘরের সামনের কয়েকটি দোকানে সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের গাড়ির জ্বালানি তেল চুরি করে বিক্রি হচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার দুপুরে তেজগাঁও জোনের এসি মো. মাহমুদ খানের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে তিনটি দোকান থেকে প্রায় ৬০০ লিটার অকটেন ও পেট্রোল উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিসি আজিমুল হক বলেন, প্রতি লিটার অকটেন ১০০ টাকায় কিনতো তারা। এরপর খোলাবাজারে ১২৮ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করতো। প্রতি লিটার পেট্রোল ১১০ টাকায় কিনে খোলাবাজারে ১৩০ টাকায় এবং প্রতি লিটার ডিজেল ১০০ টাকায় কিনে খোলাবাজারে ১০৮ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি করে আসছিল।

তারা প্রতিটি সরকারি গাড়ি থেকে ৩-৪ লিটার তেল কিনতো এবং দৈনিক ৪৫-৫০টি গাড়ি থেকে তেল সংগ্রহ করতো। প্রতিদিন একটি দোকানে সরকারি গাড়ি থেকে আনুমানিক ২০০ লিটার তেল কিনতো তারা, যা মাসিক হিসাবে প্রায় ৬ হাজার লিটার।

এরকম মোট তিনটি দোকানে মাসে প্রায় ১৮ হাজার লিটার চোরাই তেল কেনাবেচা হয়ে আসছিল জানিয়ে ডিসি বলেন, আগারগাঁও এলাকায় সরকারি অফিসের আধিক্যের কারণে এই চক্রটি এই এলাকাকে টার্গেট করে এমন অসাধু কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য পেয়েছি, যা যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি যে সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়িচালক এই তেল চুরি চক্রের সঙ্গে জড়িত তাদেরও বিষয়টি অবহিত করা হবে।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক ক্রাইসিস মোকাবিলায় সরকার থেকে জ্বালানি তেলের ব্যবহারে কৃচ্ছ্রতা সাধন নীতি অবলম্বন করার বিষয়ে সরকারের সকল বিভাগে এই সংক্রান্তে নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়।

কিন্তু সরকারি গাড়ির চালকদের একটি অসাধু অংশ সম্প্রতি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগাতে সরকারি গাড়ি থেকে তেল চুরি করে তা একটি চক্রের কাছে বিক্রি করে আসছিল বলে জানান ডিসি আজিমুল হক।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২২
পিএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।