ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

খুলনায় পলিথিনের আগ্রাসন, নীরব প্রশাসন!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২২
খুলনায় পলিথিনের আগ্রাসন, নীরব প্রশাসন!

খুলনা: পলিথিন আর প্লাস্টিক বর্জ্যে দিয়ে ঠাসা পুরো খাল। কোথাও কোথাও পলিথিনের বড় স্তূপ থাকার কারণে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এমন ভয়াবহ চিত্র খুলনা নগরীর নিরালা কবরস্থান সংলগ্ন দীঘির পাড়ের পূর্বপাশের ময়ূর খালটির।

একই ভাবে নগরীর ছোট বয়রা, হাসানবাগ এলাকার তালতলা খালটিও পলিথিন, ময়লা-আবর্জনায় প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। এছাড়া খুলনা মহানগরীর বুক চিরে প্রবাহিত ময়ূর নদী একদিকে যেমন পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য একাকার হয়ে আছে, অন্যদিকে  দখলে-দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে।

অপচনশীল সর্বনাশা পলিথিনের যত্রতত্র ব্যবহারের ফলে ভরাট হচ্ছে নগরীর পয়নিষ্কাশনের খাল, নালা-নর্দমা। ভেঙে পড়ছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের একটি সূত্র জানাযায়, দখল-দূষণে মৃতপ্রায় ময়ূর নদী আবারও খনন করা  হবে। এর দুই পাড় বাঁধাই করে ওয়াকওয়ে  নির্মাণ, পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

খুলনার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, অভিজাত রেস্টুরেন্ট, মুদি দোকান, কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে ফুটপাতের প্রায় সব দোকানের পণ্য বহনে ব্যবহৃত হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ। সহজলভ্য ও ব্যবহারে সুবিধা থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই ক্ষতির দিক বিবেচনা না করে পলিথিন ব্যাগ দেদারছে ব্যবহার করছেন।

পলিথিন আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হলেও এক শ্রেণির অসচেতন অসাধু ব্যবসায়ী নানা কৌশলে প্লাস্টিক বস্তা ও পলিব্যাগে (পলিথিন) বিক্রি করছে চাল, ডাল, মাছসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য। যে কারণে পলিথিন ব্যাগে সয়লাব খুলনার সব এলাকা। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সংগৃহীত বর্জ্যের বড় অংশই পলিথিন ব্যাগ। নগরবাসীর ব্যবহৃত এসব পলিথিনের বড় একটা অংশ সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয় সিটি করপোরেশন। ফলে এসব ব্যাগ যত্রতত্র পড়ে থেকে দূষণ ঘটাচ্ছে মাটিতে। এছাড়া নগরবাসীর ব্যবহৃত পলিথিনের চূড়ান্ত গন্তব্য খাল ও নদী হওয়ায় মারাত্মক দূষণ ছড়াচ্ছে পানিতে। নগরীর অধিকাংশ ড্রেনে পলিথিনের স্তূপ জমে থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, পলিথিন ও প্লাস্টিকের কাঁচামাল আমদানি ও উৎপাদনের যথার্থতা নিরূপন ও নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও কঠোর হতে হবে। পলিথিন নিষিদ্ধ করে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলকের পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে।

পরিবেশ অধিদফতর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার বন্ধে মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জরিমানা করে ও কারাদণ্ড দেয়। তবুও পলিথিন ব্যবহার বন্ধ হয় না। আইনের কঠোর প্রয়োগ না করায় অভিযানের কয়েক দিন পরই আবারও স্বাভাবিকভাবেই চলে উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার।

অভিযোগ রয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে নিয়মিত অভিযান না থাকায় পলিথিনের বিক্রি ও ব্যবহার আগের তুলনায় ভয়াবহ ভাবে বেড়েছে।

এ অবস্থায় পলিথিন নিষিদ্ধের আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নে পরিবেশ অধিদপ্তরকে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) খুলনার সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, পলিথিনিরে ভয়াবহ আগ্রাসন চলছে খুলনায়। বাজার থেকে যা কিনবেন সবই পলিথিন  ব্যাগে  দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরকে স্মারকলিপি দিয়েছি। তাদের বক্তব্য জনবল ও পরিবহনের অভাব, নিজস্ব ম্যাজিট্রেট নেই। সঙ্গে বাজেটেরও অভাব রয়েছে। তবে, আমরা মনে করি অভিযানের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সদিচ্ছা নেই।

তিনি আরও বলেন, খুলনায় বেশকিছু পলিথিনের কারখানা ও মজুদদার রয়েছে। কিন্তু সেখানে  অভিযান নেই। জেলা প্রশাসনের গঠিত টাস্কফোর্স রয়েছে। টাস্কফোর্সের দায়িত্ব রয়েছে অভিযান চালানো। তাদেরও কোন কার্যক্রম নেই।
পরিবেশবাদী সংগঠন কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (সিডিপি) এর খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব বাংলানিউজকে বলেন, পরিবেশ দূষণের যেসব উপাদান রয়েছে তার মধ্যে পলিথিন অন্যতম। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য দেশের তৃতীয় বৃহৎ মহানগরী খুলনা পলিথিনে সয়লাব হয়ে গেছে। একই সঙ্গে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েছে বহুগুণ । যে কারণে যত্রতত্র ড্রেন, নালা, খাল ও নদীতে পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য দেখা যায়।

তিনি বলেন, প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ। অধিকাংশ মানুষ প্লাস্টিক পণ্য সহজলভ্য হওয়ায় ব্যবহারে আগ্রহী। ব্যবহার্য প্লাস্টিক জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন এই পরিবেশকর্মী।

খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, খুলনায় আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট ছিল না। এ জন্য অভিযান পরিচালনা করতে পারিনি। ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ হয়েছে। এখনো যোগদান করেননি, অভিযান শুরু করা হবে। পলিথিনিরে ওপর অভিযান চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে গল্লামারী একটি অভিযান করা হয়েছে। এছাড়া বিভাগের জেলাগুলোতে আমি বলে দিয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১০ , ২০২২
এমআরএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।