ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লঞ্চে ভেনিস ভ্রমণ! 

শামসুল ইসলাম সনেট, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২২
লঞ্চে ভেনিস ভ্রমণ! 

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): সমুদ্রের নীল জলরাশির ওপর দাঁড়িয়ে আছে গোটা একটি শহর, দেখে মনে হবে পানিতে ভাসছে শহরটি। ব্রেচা ও লিলে নদীর ওপর ভাসমান শহর ভেনিসের সৌন্দর্য সারাবিশ্বে বিরল।

এখানে কোনো গাড়ি বা গাড়ি জাতীয় কোনো যানবাহন পাওয়া যায় না, তাই ভেনিসে চলতে হলে নৌকা বা পায়ে হেঁটে চলতে হবে। সৌন্দর্যের লীলাভূমি, অপূর্ব নৈসর্গিক নদীমাতৃক বাংলাদেশেও নদীকে ঘিরেই হয়েছে বসতি। রাজা-বাদশা থেকে শুরু করে বিদেশি বনিকেরা, স্থানীয় জমিদাররাও নদী পাড়েই গড়ে তুলেছিলেন তাদের বসতবাড়ি, হাট-বাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।  

দেশের বড় জেলা শহরগুলোতে রেল ও নৌ যোগাযোগ থাকায় সেখানকার সভ্যতাও গড়ে উঠেছে উভয় কেন্দ্রিক, ব্যতিক্রম শুধু বরিশাল! বৃহত্তম বরিশালের রেল ও সড়ক যোগাযোগ কম থাকায় সেখানে রাস্তা-ঘাট, বসতবাড়ি, বাজার, প্রার্থনালয়, বিশ্রামাগার সবই নদ-নদী ও পানি কেন্দ্রিক। বরিশালের নদী কেন্দ্রিক নানা কর্মযজ্ঞ দেশের মানুষকে ইতালির ভেনিস শহরের কথা মনে করিয়ে দেয়।

ভেনিস শহরকে যেমন ২টি নদী ও একটি সাগর ঘিরে রেখেছে তেমনি বরিশালকেও ৪২টি নদ-নদী ও অসংখ্য খাল-বিল ঘিরে রেখেছে। ভেনিসে যেমন নৌকা ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া কল্পনাতীত বরিশালেও তাই। তবে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের নদ-নদী শুকিয়ে চিত্র বদলেছে। তবুও যতটুকু রয়েছে তা বরিশালে এলেই চোখে পরবে। বরিশালের সাগর কন্যা কুয়াকাটা, দূর্গা সাগর দিঘি, শাপলা বিল, ভাসমান পেয়ারা বাগান, দেশের তৃতীয় সামুদ্রিক বন্দরসহ নানা নদী ও সাগর কেন্দ্রিক দর্শনীয় স্থান প্রাচ্যের ভেনিসের সাক্ষী বহন করে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বরিশালে এসে প্রচুর নদ-নদী, খাল-বিল, শস্যের প্রাচুর্য এবং সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে একে প্রাচ্যের ভেনিস উপাধি দিয়েছিলেন।

ধান-নদী-খাল এই তিনে বরিশাল হলেও অনেকে লঞ্চ-নদী-খালের বরিশালকেই বেশি চিনে। কারণ এই রোডেই চলাচল করে দেশের সবচেয়ে বড় এবং বিলাসবহুল লঞ্চ স্টিমারগুলো। এ রোডের একাধিক বড় লঞ্চ এক সঙ্গে দেখলে মনে হবে একটি শহর পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে।  

তাই প্রাচ্যের ভেনিস বরিশালকে উপভোগ করতে চাইলে লঞ্চ বা স্টিমারে ভ্রমণের বিকল্প নেই। নদী পথে বরিশাল গেলে পথে পথে দেখা মিলবে নদী ঘেঁষা ছোট বড় গ্রামীণ হাট-বাজার, কাঁচা-পাকা ঘাটলায় প্রশান্তির গোসল, জেলেদের মাছ ধরা, কৃষকের উৎপাদিত শস্য নৌকায় আনা-নেওয়া, নদী পাড়ের শিশু-কিশোরদের দুরন্তপনা আপনাকে শৈশবে নিয়ে যাবে। লঞ্চে অসংখ্য হকারদের আনাগোনা আপনাকে শিক্ষা দেবে জীবন সংগ্রাম কাকে বলে। লঞ্চের বাহারি ফ্রেশ খাবার দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও তেমন সুস্বাদু।  

আর লঞ্চ ভ্রমণ যেমন নিরাপদ তেমনি আরামদায়ক।  লঞ্চে কম খরচে ভেনিস তথা প্রাচ্যের ভেনিস যেতে হলে সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ঢাকার সদরঘাট থেকে চেপে বসতে পারেন এমভি গ্রিন লাইন, এম ভি সুরভী-৭, ৮, ৯ এম ভি পারাবত-৯০, ১০, ১১, ১২, এম ভি সুন্দরবন-১০, ১১, কীর্তনখোলা ২, ১০, অ্যাডভেঞ্চারের মত বিলাসবহুল লঞ্চে।

ভাড়াও হাতের নাগালে। ইতোমধ্যে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ভাড়া কমিয়েছে। সিঙ্গেল কেবিনে যেতে চাইলে গুনতে হবে মাত্র ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। ডাবল কেবিনে ১৫০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা। আর ডেকে যেতে চাইলে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় যাওয়া যাবে বরিশাল। তাহলে আর দেরি কেনো? আজই ঘুরে আসুন প্রাচ্যের ভেনিস বরিশাল থেকে। মাছে ভাতে বাঙালি আর নদীমাতৃক বাংলাদেশ যেন টিকে আছে শুধু বরিশালেই।

লঞ্চ ভ্রমণ নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ এর যুগ্ম পরিচালক মো. শহিদুল বলেন, আমরা দেশ-বিদেশের ট্যুরিস্টদের কথা চিন্তা করে লঞ্চে নতুনত্ব আনতে কাজ করছি। নদী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন লঞ্চে চমক আসছে শিগগিরই।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।