ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাটুরিয়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্প এখন ভুতের বাড়ি!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০২২
সাটুরিয়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্প এখন ভুতের বাড়ি!

মানিকগঞ্জ: সরকার প্রধান ভূমিহীনদের কথা চিন্তা করে আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তুলেছেন। প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় ভূমিহীনদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত সেমিপাকা ঘরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ১৭টি ঘর তৈরি করা হলেও সেখানে বর্তমানে বসবাস করছে মাত্র ২টি পরিবার। বাকি সব  ঘরে ঝুলছে তালা।

সঠিক নিয়মে বরাদ্দ না হওয়া ও কর্মস্থল দূরে হওয়াতেই মূলত সরকারের তৈরি আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এখন ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। আশ্রয়ণের ঘরে তালা ঝুললেও উঠান ও বারান্দায় হরহামেসাই চলছে মাদক সেবীদের আড্ডা। , এতে করে আতঙ্কে আছেন ওই এলাকায় বসবাসকারীরা। তবে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে শিগগিরই নতুন করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো সঠিক ভূমিহীনদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাটুরিয়ায় ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ৫০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে খাসজমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ৫০টি ঘরের মধ্যে ইতোমধ্যে ৩০টি ঘর ভূমিহীনদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও ১৫টি ঘর নির্মাণে সাটুরিয়া ইউনিয়নের হামন্দুলিয়া গ্রামে জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। ১৮টি ঘর অন্য ইউনিয়নে করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নে ভূমিহীনদের জন্য বর্তমান সরকার কয়েক লাখ টাকা ব্যয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে এসব ঘর নির্মাণ করে। তবে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে জনশূন্য হয়ে পড়ে আছে এসব ঘর।

২০২১ সালের ২৩ জুনুয়ারি ( শনিবার ) সারা দেশের মতো মানিকগঞ্জ জেলায় ওই দিন ভার্চ্যুয়ালি ১৩৫টি ঘর আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর মাস খানেক এসব ঘরে বেশ কয়েকটি পরিবার বসবাস করলেও পরে এক এক করে তারা সেখান থেকে চলে যায়। বরাইদ ইউনিয়নে ১৭টি ঘরের মধ্যে এখন মাত্র দুটি পরিবার বসবাস করছে। বাকি ঘরগুলোতে ঝুলছে তালা। ফলে সেগুলো এখন ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি ঘরের আশপাশ ঝোপঝাড়ে ছেয়ে গেছে। এসব ফাঁকা ঘরের বারান্দা এখন মাদক সেবীদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। নিচু জমিতে ঘর নির্মাণ করায় বৃষ্টি হলে হাঁটুপানি জমে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় ঘরের মেঝে ও দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে, চাল দিয়ে পানি পড়ে। ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত বরাদ্দ ছিল একটি নলকূপ ও শৌচাগার, তাও এখন দেবে যাচ্ছে। বসবাসকারীদের ধারণা নিচু জমিতে এই বাড়ি নির্মাণ করায় বন্যা হলে এ এসব ঘর ডুবে যাবে।

বরাইদ ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর বসবাসকারী আয়নাল হকের স্ত্রী বলেন, আমি ছাড়া এখানে আর মাত্র একটি পরিবার বসবাস করে। বাকি ঘরগুলোর সদস্যরা অন্যত্র চলে গেছে। এত বড় একটি আশ্রয়ণে থাকতে রাতের বেলায় অনেক ভয় করে।

তিনি বলেন, এছাড়া অসুস্থ হয়ে পড়লে দেখার কেউ নেই। আমি যে ঘরে বসবাস করছি, সেই ঘরেও এখন বৃষ্টির পানি পড়ে। পাশের ঘরের ভূমিহীন মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘরগুলো সবাইকে বুঝিয়ে দেওয়ার পর কিছুদিন অনেকে বসবাস করেছেন। কিন্তু তারপর এক এক করে তারা অন্যত্র চলে গেছেন। তবে মাঝে মধ্যে এসে ঘর দেখে চলে যায় তারা।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এসব ঘরের একটির মালিক বলেন, সরকার আমাদের ঘর করে দিয়েছে, কিন্তু আয়ের পথ করে দেয়নি। আমরা কাজ-কর্ম করি বালিয়াটিতে, কিন্তু ঘর করে দিয়েছে বরাইদে। বালিয়াটি থেকে বরাইদ প্রায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে। ফলে প্রতিদিন যে টাকা আয় করি, তা যদি গাড়ি ভাড়া দিতে হয় তাহলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। এছাড়া নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি করায় ঘরগুলোতে রাতে থাকতে ভয় করে।

সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও ) শারমিন আরা বলেন , যেহেতু বরাইদের আশ্রয়ণে দুটি পরিবার ছাড়া বাকি সবাই অন্যত্র চলে গেছেন,  সে জন্য ওই বরাদ্দ বাতিল এবং নতুন করে বরাদ্দের কথা ভাবছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে, ওই এলাকায় যদি কোনো ভূমিহীন বা গৃহহীন থাকে, তাদেরকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৬ ঘণ্টা, ৮ আগস্ট ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।