ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লুটের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব, চালক পেছনে তাকালে উল্টে যায় বাস

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০২২
লুটের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব, চালক পেছনে তাকালে উল্টে যায় বাস গ্রেফতাররা।

টাঙ্গাইল: কুষ্টিয়া থেকে ঢাকার দিকে যাওয়ার পথে ঈগল এক্সপ্রেসের বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের পর লুণ্ঠিত টাকা এবং মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য জিনিসপত্র বাসের ভেতরেই ভাগাভাগি করে ডাকাতদল।  

এসময় এক যাত্রীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ২০ হাজার টাকা নিয়ে ডাকাত দলের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হলে ডাকাতরা একে অন্যের দেহ তল্লাশি শুরু করে।

একপর্যায়ে বাসের চালকের আসনে থাকা ডাকাত দলের সদস্য কথা কাটাকাটি দেখার জন্য পেছনে তাকালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এসময় বাসটি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়ায় রাস্তার পাশে বালুর স্তুপের মধ্যে কাত হয়ে পড়ে।

পুলিশের রিমান্ডে থাকা গ্রেফতার রাজা মিয়া এবং শুক্রবার গ্রেফতার হওয়া আব্দুল আওয়াল ও নুরনবী জিজ্ঞাসাবাদকালে পুলিশকে এ তথ্য জানিয়েছে।

এছাড়া মামলার বাদী ওই বাসের যাত্রী হেকমত আলীর স্ত্রী জেসমিন আরা বলেন, ডাকাতদল সব কাজ শেষ করার পর একে অপরকে ডাকাডাকি করেন। ডাকাত দলের সরদারকে তারা ‘কাকা’ বলে সম্বোধন করছিলেন। মাঝেমধ্যে নুরু, সাব্বির, রকি নামেও ডাক দিচ্ছিল। রাত ৩টার দিকে ডাকাতরা টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণালংকার নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি শুরু করে। বাসের ভেতরে ভাগাভাগি নিয়েও তাদের মধ্যে বাগ-বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সড়কের এক পাশে বাসটি কাত হয়ে যায়। পরে ডাকাতরা দ্রুত নেমে পালিয়ে যায়। বুধবার রাত ৯টার দিকে বিআরটিসির গাড়িতে পুলিশ টিকিট কেটে আমাদের কুষ্টিয়া পাঠিয়ে দেয়।

পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, বাসটি ঢাকার দিকে মির্জাপুরের গোড়াই পর্যন্ত গিয়ে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে ইউটার্ন নিয়ে আবার টাঙ্গাইলের দিকে যাত্রা শুরু করে। একপর্যায়ে লুণ্ঠিত টাকা ও মোবাইল ফোনের সংখ্যা নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এক সদস্য ২০ হাজার টাকা একজন যাত্রীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন এবং ওই টাকা লুকিয়ে ফেলেন বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন ডাকাত। পরে একজন আরেকজনের দেহ তল্লাশি করেন। এসময় চালকের আসনে গ্রেফতার রাজা মিয়া ছিলেন না, ডাকাত দলের আরেক সদস্য বাস চালাচ্ছিলেন। তিনি পেছন দিকে তাকিয়ে ভালো করে তল্লাশি করার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। এসময় রাস্তার পাশে কাত হয়ে যায় বাসটি।

পরে ডাকাত দলের সবাই জানালা দিয়ে দ্রুত বের হয়ে পড়েন। তারা রক্তিপাড়া থেকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়ক ধরে মধুপুরের দিকে দৌড়াতে থাকেন। প্রায় এক কিলোমিটার যাওয়ার পর একটি বাস এলে সেটি সংকেত দিয়ে থামায়। সেখান থেকে প্রথমে তিনজন ওই বাসে ওঠেন। কিছু দূর যাওয়ার পর এগিয়ে থাকা অন্য সদস্যরা বাসটিতে ওঠেন। তারা নিজেদের পরিবহন শ্রমিক বলে পরিচয় দেন।  

দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির শ্রমিক বলেও তারা জানান। ওই বাসে মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে নেমে পড়েন ডাকাতরা। পরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ডাকাত দলের এক সদস্যের আত্মীয় বাড়ি গিয়ে ওঠেন তারা। বেলা বাড়ার পর এক এক করে তারা ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যান।

ডাকাতিকালে তারা পাঁচটি স্মার্ট ফোন, ১২/১৩টি বাটন ফোন এবং তিন হাজার ৪০০ টাকা লুণ্ঠন করেন। যে ২০ হাজার টাকা নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়, সে টাকা শেষ পর্যন্ত আর উদ্ধার করতে পারেননি তারা।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে ঈগল পরিবহনের একটি বাস নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জের একটি খাবার হোটেলে যাত্রা বিরতি করে। সেখান থেকে যাত্রা শুরুর পর তিন দফায় যাত্রীবেশে ১০জন ডাকাত বাসে ওঠে। বাসটি টাঙ্গাইল অতিক্রম করার পর ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে চালককে জিম্মি করে বাসটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। তারা যাত্রীদের হাত, পা, চোখ বেঁধে তাদের সব লুটে নেয়। এ সময় বাসে থাকা এক নারী যাত্রী ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হন। পরে ডাকাতরা বাসটি টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের দিকে নিয়ে যায়। রাত সাড়ে তিন টার দিকে বাসটি মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া নামক স্থানে রাস্তার খাদে পড়ে যায়। পরে স্থানীয় লোক ও ফায়ার সার্ভিস যাত্রীদের উদ্ধার করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে যাত্রীরা ডাকাতি ও নির্যাতনের বিষয়টি জানান।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।