ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ডিবি পরিচয়ধারী ৬ ডাকাত গ্রেফতার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০২২
ডিবি পরিচয়ধারী ৬ ডাকাত গ্রেফতার

ঢাকা: ব্যাংকের ভেতরে সাধারণ গ্রাহকের ছদ্মবেশে থাকতেন কয়েকজন। একই ভাবে ব্যাংকের বাইরেও থাকতো চক্রের অন্য একটি দল।

ভেতরে থাকা লেনদেনকারীদের অনুসরণ করে তথ্য জানানো হতো বাইরে অপেক্ষা করা দলটিকে। ব্যাংক থেকে টাকা তুলে যখনই গ্রাহক বের হতেন তখনই চারপাশ থেকে তাকে ঘিরে ধরা হতো।

এরপর নকল জ্যাকেট পরিহিত ও ওয়াকিটকি দেখিয়ে ‘ডিবি পুলিশ’ পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীকে মাইক্রোবাসে তুলে নিতো চক্রটি। গাড়িতে বসেই ভুক্তভোগীর সঙ্গে থাকা উত্তলনকৃত টাকা, মোবাইলসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নির্জন স্থানে ভুক্তভোগীকে ফেলে পালিয়ে যেত ‘ডিবি পুলিশ’ পরিচয় দেওয়া দুর্ধর্ষ ডাকাতরা।

সম্প্রতি ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর মতিঝিল ১১/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডিবি পরিচয়ধারী (ভুয়া) ডাকাত দলের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের একটি টিম।

গ্রেফতার ডাকাত সদস্যরা হলেন—ফরিদ উদ্দিন (৫০), মো. পারভেজ (৩৫), সাইফুল ই নাদিম (৩০), শফিকুল ইসলাম ওরফে বাবুল (৫০), মো. জসিম (৩৪) ও মো. নাছির (৩৮)।

অভিযানে তাদের কাছ থেকে ডিবি পুলিশ লেখা ৩টি জ্যাকেট, ১টি হাতকড়া, ১টি লাঠি (স্টেইনলেস স্টিলের), ২টি হোলস্টার, ৩টি খেলনা পিস্তল, ১টি ওয়াকিটকি (খেলনা), বিভিন্ন নামের অ্যাকাউন্টের ৫টি চেক বই, ১টি মাইক্রোবাস ও একটি ‘পুলিশ’ লেখা স্টিকার জব্দ করা হয়।

সোমবার (০১ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশিদ।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হারুন-অর-রশিদ বলেন, সম্প্রতি ব্যাংকে যারা বড় বড় লেনদেন করছেন তাদের টার্গেট করে ‘ডিবি’ পরিচয়ধারী ডাকাত সদস্যরা অপহরণ করে নগদ টাকা লুণ্ঠন করছিল।

তিনি বলেন, গ্রেফতার আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সাধারণ গ্রাহকের ছদ্মবেশে ব্যাংকে ঢুকে সেখানে আসা গ্রাহকদের লেনদেন সম্পর্কে তথ্য নেয়। এরপর তাদের অনুসরণ করে। বড় অঙ্কের টাকা লেনদেনকারীদের টার্গেট করে এবং তথ্যগুলো বাইরে তাদের অন্য দলকে দিয়ে দেয়। পরে ওই গ্রাহক ব্যাংক থেকে বের হলেই তাকে ডিবি পরিচয় দিয়ে অপহরণ করে মাইক্রোবাসে তুলে এবং টাকা পয়সা লুট করে তাকে নির্জন স্থানে নামিয়ে দেয়।

ভুক্তভোগীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ও প্রাণনাশের হুমকি দিতো ডাকাতরা। গ্রেফতার ডাকাত সদস্যদের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ডিবির ভুয়া পোশাক সম্পর্কে হারুন অর-রশিদ বলেন, ডিবি পুলিশের আগের পোশাক খুব সহজেই নকল করা যেতো। কোথাও তৈরি করাও যেতো। ডিবি পুলিশ পরিচয়ধারী ভুয়া ডিবির সদস্যরা ডাকাতিতে খেলনা পিস্তল ও হাতকড়া ব্যবহার করতেন। এতে করে আসল ডিবি পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।

ডিবি পুলিশের নতুন পোশাক নকল করা সম্ভব না উল্লেখ করে হারুন অর রশিদ বলেন, শুধু ব্যাংকে নয়, অনেক সময় বাসায় ডিবি পরিচয়ে মানুষজনদের তুলে এনে মুক্তিপণ আদায় করতো। এ রকম অনেককে আমরা গ্রেফতার করেছি। সম্প্রতি পুলিশ বাহিনীকে ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ডিবি পুলিশের পোশাকে কিউআর কোড সংযোজন করা হয়েছে। এতে করে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে ডিবি পুলিশের পোশাকে সংযোজিত কিউআর কোডটি স্ক্যান করলে পূর্ণাঙ্গ সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, ডিবির কুইক রেসপন্স (কিউআর) কোডে তিনটি বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে। গোপন নম্বর, গোয়েন্দা পুলিশের মনোগ্রাম ও রঙিন লোগো থাকবে। এছাড়াও গোয়েন্দা পুলিশের নতুন পোশাকে আরও কিছু গোপনীয় ফিচার থাকবে, যা আমরা প্রকাশ করছি না।

ডিবি জানায়, আগে ডিবি পুলিশ যে জ্যাকেট পরে অভিযান চালাতো, তা বেশ পুরনো। দীর্ঘ দিন ধরে এ জ্যাকেট ব্যবহারের ফলে অনেক প্রতারক চক্র বাইরে থেকে এটি তৈরি করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করে। অনেক সময় মানুষকে ফাঁদে ফেলারও অভিযোগ পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময় জ্যাকেটটির হুবহু কপি ভুয়া ডিবি সদস্যদের কাছে পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতে কাউকে যেন এভাবে প্রতারণার শিকার না হতে হয় সেজন্য ডিবিতে সংযোজন করা হয়েছে নতুন জ্যাকেট। এ জ্যাকেট নকল করা সম্ভব হবে না।

ডিবির জ্যাকেটের বৈশিষ্ট্য—
১. ডিএমপি ডিবির নতুন জ্যাকেটে প্রথম গোপনীয় নম্বর, গোয়েন্দা বিভাগ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সমন্বয়ে কুইক রেসপন্স কোড বা কিউআর কোডের ব্যবস্থা থাকছে। সন্দেহ হলেই যে কেউ ডিবি পোশাকে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করে ওই ব্যক্তি ডিবির প্রকৃত সদস্য কিনা, তা শনাক্ত করতে পারবেন।

২. নতুন জ্যাকেটে ডিবি এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রঙিন লোগো ব্যবহার করা হয়েছে, যা সহজেই দৃশ্যমান।

৩. জ্যাকেটে রাত্রিকালীন আলোতে দূর থেকে ডিবি পুলিশের উপস্থিতি বোঝা যাবে।

৪. নতুন জ্যাকেটে বিভিন্ন পকেটের সুবিধা রয়েছে, অভিযানকালে ডিবি সদস্যরা প্রয়োজনীয় নোটবুক, কলম ও কাগজপত্র নিরাপদে রাখতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০২২
এসজেএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।