ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ক্যামেরা ট্র্যাপিং করে তৃতীয়বার বাঘ গুনবে সরকার 

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২২
ক্যামেরা ট্র্যাপিং করে তৃতীয়বার বাঘ গুনবে সরকার 

ঢাকা: সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় তিন বছর মেয়াদী ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনে তৃতীয় বারের মতো ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘের জরিপ পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।

 

সেই সঙ্গে বাঘের শিকার প্রাণী-হরিণ ও শূকরের সংখ্যা গণনা, সুন্দরবনের লোকালয় সংলগ্ন ৬০ কিলোমিটার এলাকায় নাইলনের ফেন্সিং বা বেষ্টনী তৈরিসহ বাঘ সংরক্ষণ ও গবেষণা সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে।  

শুক্রবার (২৯ জুলাই) বিশ্ব বাঘ দিবস ২০২২ উপলক্ষ্যে বন অধিদফতরে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে সরকারি বাসভবন হতে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী এ তথ্য জানান। তিনি বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবন সংরক্ষণে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।


প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ এবং অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন প্রমুখ।

বনমন্ত্রী বলেন, ২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত বাঘ সমৃদ্ধ ১৩টি দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের সম্মেলনে বাঘ সংরক্ষণকে বেগবান করার জন্য তৈরি ঘোষণাপত্রের আলোকে প্রতি বছর ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস পালন করা হচ্ছে। এ বছর বিশ্ব বাঘ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘বাঘ আমাদের অহংকার, রক্ষার দায়িত্ব সবার’, যা সময়োপযোগী বলে আমি মনে করি।  

তিনি বলেন, সর্বশেষ ২০১৭-২০১৮ সালে পরিচালিত জরিপের তথ্যানুযায়ী আমাদের সুন্দরবন অংশে রয়েছে প্রায় ১১৪টি বেঙ্গল টাইগার এবং ২০২০-২০২১ সালের জরিপ অনুসারে ভারতের সুন্দরবন অংশে আছে প্রায় ৯৬টি বাঘ। আইইউসিএন গ্রোবাল স্পিশিজ রেড লিস্ট-২০২০ অনুসারে, বিশ্বে বাঘের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার ৪৮৫টি। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় হলো, সারাবিশ্বে বন উজাড় ও অবৈধ শিকারের ফলে বেঙ্গল টাইগার বিশ্বে ‘বিপন্ন’ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।  

মন্ত্রী সুন্দরবনের বাঘ রক্ষার জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করেন এবং বাংলাদেশে ‘মহাবিপন্ন’ বাঘ সংরক্ষণের জন্য সরকার যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে তার উল্লেখ করেন।  

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর ধারা-৩৬ তে বাঘ হত্যার জন্য ২ বছর এবং সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ১ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড করা এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বাঘ হত্যাকে জামিন অযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা হয়েছে। বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান (২০১৮-২০২৭) প্রণয়ন করা হয়েছে। বাঘের অবাধ বিচরণ ও বংশবিস্তারের লক্ষ্যে সুন্দরবনের ৫২ শতাংশকে এলাকাকে রক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।  

বনমন্ত্রী জানান, বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যে গঠিত ৪৯টি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম এর কর্মতৎপরতার ফলে লোকালয়ে বাঘ আসা মাত্র সংলগ্ন গ্রামগুলোতে দ্রুততম সময়ে তা জানানো এবং সে অনুযায়ী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে। সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জে স্মার্ট পেট্রোলিং পদ্ধতি ও ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে বাঘসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর শিকার, পাচার ও নিধন বন্ধের কার্যক্রম চলমান আছে। ‘অপরাধ উদঘাটনে তথ্য প্রদানকারীকে পুরস্কার প্রদান বিধিমালা, ২০২০’ জারি করা হয়েছে। এই বিধিমালায়, বাঘের ক্ষেত্রে, বনাঞ্চলের ভেতরে অপরাধী ধৃত হলে প্রদত্ত তথ্যের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা এবং বনাঞ্চলের বাইরে ধৃত হলে প্রদত্ত তথ্যের জন্য সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা আর্থিক পুরস্কারের বিধান রাখা হয়েছে।  

‘বন্যপ্রাণীর আক্রমণে জানমালের ক্ষতিপূরণ বিধিমালা-২০২১’ অনুযায়ী বর্তমানে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৩ লাখ এবং আহত ব্যক্তির পরিবারকে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। বাঘসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর জন্য সুপেয় মিঠাপানির চাহিদা মেটাতে সুন্দরবনে ৮০টি পুকুর নতুন খনন ও বিদ্যমান পুকুর সংস্কারের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।  

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইইউসিএন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রাকিবুল আমিন এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু। বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. এম মনিরুল এইচ খান এবং বন অধিদফতরের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২২
এমআইএইচ/এসএ 
 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।