ঢাকা: স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন নিশ্চিত করা ও তাদের নিয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে পরিকল্পিত নগরায়নে স্বল্প আয়ের মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এবং সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এর মতবিনিময় সভায়।
২৬ জুলাই (মঙ্গলবার) রাজধানীর বাংলামোটরের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এবং সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ‘জলবায়ু ন্যায্যতা ও আবাসন অধিকার: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ দাবি জানান।
বক্তারা জলবায়ু ন্যায্যতা ও আবাসন অধিকারের মধ্যকার আন্তঃসম্পর্ক, নগর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আবাসন অধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশে বিদ্যমান আইনি অবকাঠামো, নগর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আবাসন অধিকার সুরক্ষায় উচ্চ আদালত প্রদত্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা ও উত্তোরণে করণীয় এবং জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশে নগর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আবাসন অধিকার সমুন্নতকরণের দাবি করেন।
ব্লাস্টের গবেষণা প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথ কলেজের সহকারী অধ্যাপক ইফাদুল হক বলেন, বিশ্বজুড়ে সামাজিক বৈষম্য বাড়ছে। এখনও সবাই ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারছে না। করোনা মহামারি ও অর্থনৈতিক মন্দা পরবর্তী সময়ে এটা বোঝা যাবে।
জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ ডুবে যাবে না উল্লেখ করে এই গবেষক বলেন, আন্তর্জাতিক গবেষণায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ সক্রিয় ব-দ্বীপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ২১০০ সালে বাংলাদেশের ভূমি আরও বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি হুমকির সৃষ্টি করছে না উল্লেখ করে ইফাদুল হক বলেন, ঘন ঘন তীব্র ঝড়, সাইক্লোন এদেশের বড় চিন্তার কারণ। এমনকি দেশের সীমানার বাইরের বৃষ্টিপাতে সিলেট অঞ্চলে বন্যা হচ্ছে।
গবেষণায় দেখানো হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ৬ মিলিয়ন মানুষ রিফুইজি হয়েছে। তাদের বড় অংশই শহরের অস্থায়ী আবাসন (বস্তি) এলাকায় বসতি স্থাপন করে।
কড়াইল বস্তি এলাকাকে সন্ত্রাস, দ্রারিদ্র্য এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় দাবি করে গবেষণা প্রতিবেদনে দেখানো হয়, অস্থায়ী আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দারা বস্তি এলাকাকে সবুজায়নের আওতায় নিয়ে এসেছে। নগরের ইঞ্জিন এ এলাকার বাসিন্দারা হলেও অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে না। বরং উচ্ছেদের আতঙ্কের ভেতরে তারা থাকে। তাদের খারাপ সেনিটেশন ও পানির অভাবও প্রকট।
গবেষণা প্রতিবেদনে নেতিবাচক বিষয়ের সঙ্গে ইতিবাচক ঘটনাও উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯৯ সালে কড়াইল বস্তি উচ্ছেদের প্রতিবাদে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ১৫০০ পরিবার তাঁবু স্থাপন করে। তারপর কোর্ট সিদ্ধান্ত নেয় পুনর্বাসন না করে বস্তি উচ্ছেদ করা যাবে না। এরপর থেকে বস্তি উচ্ছেদ কমেছে আদালতের প্রগতিশীল ভূমিকার কারণে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট সারা হোসেনের সঞ্চালনায় ও বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের সভাপতিত্বে আলোচক হিসেবে আরও ছিলেন উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সাবেক সভাপতি স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) কনসালটেন্ট খন্দকার নিয়াজ রহমান, শেফিল্ড স্কুল অব আর্কিটেকচারের সহকারী অধ্যাপক তানজিল শফিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২২
এনবি/এমজেএফ