ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৩দিনে দুই খুন

ফেঞ্চুগঞ্জে একবছরে ছয় হত্যাকাণ্ড

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৫ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২২
ফেঞ্চুগঞ্জে একবছরে ছয় হত্যাকাণ্ড

সিলেট: আয়তনে সিলেটের উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট ফেঞ্চুগঞ্জ। কুশিয়ারা নদী ও হাকালুকি হাওরের তীরবর্তী এলাকাটি সার ও বিদ্যুৎ উৎপাদন, মৎস সম্পদের ভাণ্ডার।

রয়েছে দুটি চা-বাগানও।  

সমৃদ্ধ ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় হঠাৎ বেড়ে গেছে খুনের ঘটনা। মাত্র ৩ দিনের ব্যবধানে উপজেলায় দুটি খুনের ঘটনা ঘটে গেলো। আর বছরান্তে ছয়টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে এ উপজেলায়।   
 
গত রোববার (১৭ জুলাই) ও বুধবার (২০ জুলাই) মধ্যরাতে তিনদিনের ব্যবধানে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী সংস্থা ‘আশা’-এর ব্যবস্থাপক আবুল কাশেম (৪৮) ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ঘিলাছড়া ইউনিয়নের মোকামবাজারের দোকান কর্মচারী প্রতিবন্ধী সজল দাস (৩৮)।
 
গত রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে উপজেলার মাইজগাঁও ইউনিয়নের পুরানবাজার নিজামপুর এলাকায় আশার শাখা কার্যালয়ে খুন হন  সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ শাখা ব্যবস্থাপক আবুল কাশেম। তিনি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার খবিলাশপুর গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশের ধারণা, অফিস সহকারীর সঙ্গে বিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।  
 
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকালে আশার ফেঞ্চুগঞ্জ শাখা কার্যালয় থেকে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ কাজে বিভিন্ন এলাকায় চলে যান। তখন ব্যবস্থাপক আবুল কাশেম ও কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম বাবুর্চি মো. ফজল মিয়া (৩৬) কার্যালয়ে ছিলেন।
 
প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে, ব্যক্তিগত কোনো বিরোধের জেরে নৃশংসভাবে আবুল কাশেমকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন বাবুর্চি ফজল মিয়া। তিনি পলাতক রয়েছেন। পালানোর সময় নিজের ব্যবহৃত মুঠোফোনটি কার্যালয়েই ফেলে যান। তার বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায়। পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা উদ্ধার করেছে।
 
এদিকে, উপজেলার মোকামবাজারে হাকালুকির তীরবর্তী একটি দোকানেই সজল দাসকে গত বুধবার রাতে দোকানের ভেতরেই হত্যা করা হয়।  
 
রাত সাড়ে ১১টার দিকে দোকান বন্ধ করার সময় খুনীরা দোকানে ঢুকে গলায় গামছা্ পেচিয়ে তাকে হত্যা করে। সজল দাস স্থানীয় নিশিকেশ বাবুর দোকানে কর্মচারি ছিলেন। দোকানটি রাতে খোলা দেখে আশপাশের  লোকজন জড়ো হয়ে সজলের মরদেহ দোকানের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ থানা পুলিশ  রাতেই ঘটনাস্থলে যায় এবং অভিযান চালিয়ে ভোররাতে হত্যায় জড়িত ৫ যুবককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।  
 
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- উপজেলার ঘিলাছড়ার ইউনিয়নের পূর্ব যুধিষ্ঠিপুর (ঘাটেরবাজার) এলাকার মজম্মিল আলীর ছেলে আতিক (২৫), একই গ্রামের রহমত আলীর ছেলে দিপু (২১), মধ্য যুধিষ্ঠিপুরের কামাল মিয়ার ছেলে জুবেল (১৭), মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা গ্রামের মৃত দছির আলীর ছেলে শাকিল (১৯) ও মিয়াধন মিয়ার ছেলে সুমন আহমেদ (২২)।
 
ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাফায়েত হোসেন বলেন, সজল দাস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ইতোমধ্যে পাঁচজনকে আটক করেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে হত্যার রহস্য উন্মোচন করা যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
 
এছাড়া 'আশা'র ব্যবস্থাপক আবুল কাশেম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তি পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে পুলিশের কয়েকটি টিম অভিযানে রয়েছে।
 
থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, দোকান কর্মচারিকে হত্যা করা হয়েছে টাকা চাওয়ার কারণে। গ্রেফতারদের মধ্যে আতিকসহ কয়েকজন বাকিতে জিনিসপত্র নিতো। তাদের কাছে টাকা চাওয়ায় রাতের আধানে প্রতিবন্ধী দোকান কর্মচারিকে খুন করা হয়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে জবানবন্দি নেওয়ার জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত ৩০ জুন রাতে উপজেলার নুরপুর গ্রামের মৃত আনর আলীর ছেলে সেলিম মিয়া (৫৫) চাচাতো ভাইবোনদের হামলায় নিহত হন। এ ঘটনায় ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
 
গত ১২ মে বিকেলে ফেঞ্চুগঞ্জের পশ্চিম বাদেদেউলী গ্রামে সরকারি কাঁচা রাস্তার মাটি ভরাট নিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন গ্রামের চুনু মিয়ার ছেলে সেলিম মিয়া। এ ঘটনায় নিহতের বাবা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
 
এবছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে ফেঞ্চুগঞ্জের মোমিনছড়া চা বাগানে রেল লাইনের পাশ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন নয়ন চন্দ্র দেবনাথ (১৮) নামে এক যুবকের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ। নিহত নয়ন ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারের ‘উপমা ফ্যাশন’ কাপড়ের দোকানে কর্মচারী ছিলেন। এ ঘটনা্য় দোকান মালিক দুর্জয় দেবনাথ ভৌমিককে গ্রেফতার করা হয়।  
 
এর আগে এ বছরের ৪ জানুয়ারি উপজেলার সদর ইউনিয়নের পিঠাইটিকর গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় খুন হন আলতার হোসেনের ছেলে নাহিদ মিয়া (১৮)।
 
এর বাইরেও গত বছর তথা ২০২১ সালের শেষের দিকে ১৮ সেপ্টেম্বর উপজেলার ডাকবাংলো ইউনিয়ন ভূমি অফিসের একটি পরিত্যক্ত ঘরে জুয়েলারি শ্রমিক সুনাম মিয়ার (২১) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এ ঘটনায় গত ৩ জুলাই গ্রেফতার হন ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য শিব্বির আহমদ। তিনি এবং ঘটনার পর গ্রেফতারকৃত সামসুজ্জামান শিমুল আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২২
এনইউ/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।