ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দখলের কারণে মরে যাচ্ছে নৌকা চলা জয়গাছি খাল

এস.এস শোহান, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০১ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২২
দখলের কারণে মরে যাচ্ছে নৌকা চলা জয়গাছি খাল

বাগেরহাট: বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের জয়গাছি খাল এখন মৃতপ্রায়। বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, খালের জমি দখল করে পাকা স্থাপনা ও রাস্তা নির্মাণের ফলে খালটির চিহ্ন পর্যন্ত বোঝা যায় না।

 

স্থানীয় বাসিন্দাদের ধানী জমি ও খাল এখন একাকার। এক সময় খরস্রেতা খালটি এখন মৃতপ্রায়। পানির স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় স্থানীয় সমতল ভূমির বৃষ্টির পানিও এই খাল দিয়ে বের হতে পারে না। যার ফলে সামান্য বৃষ্টিতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে ওই এলাকায়। অতি দ্রুত খালটি দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছে বাগেরহাট সদর উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাগেরহাট শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদী থেকে উঠে আসা কাটা খালের একটি শাখা জয়গাছি খাল। পুরনো বেমরতা ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিছন থেকে উঠে, বর্তমান বেমরতা ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিছন দিয়ে রঘুনাথপুর মোড় হয়ে কচুয়া উপজেলার রাড়ীপাড়া ইউনিয়নের ধলনগর এলাকায় গিয়ে শেষ হয়েছে। প্রায় ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার লম্বা খালটি গড়ে ২০ থেকে ৪০ ফুট লম্বা ছিল। খালে স্রোতও ছিল, খাল দিয়ে অন্তত দশটি গ্রামের পানি নিষ্কাশন হতো। এই খালের পানি ওঠা নিয়ন্ত্রণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে খালের মুখে (বিদ্যালয়ের পাশে) একটি স্লুইস গেটও করা হয়েছিল। কিন্তু সেটিও এখন অকেজো। বৈটপুর-দেপাড়া রাস্তা দিয়ে পুরনো বেমরতা ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য করা কনক্রিটের রাস্তায় খালটির একটি অংশ আটকা পড়েছে। রাস্তার উত্তর পাশে খাল আটকে বেমরতা ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী, স্থানীয় এনামুল কবির, ছত্তারসহ অন্তত ১০-১৫ জন মৎস্য ঘের করেন। খালের মধ্যে অন্তত ১০-১৫টি বাঁধ ও নেট পাটা রয়েছে। পরে দখল হয়েছে রঘুনাথপুর মোড়ে। খালের পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য রাস্তার নিচে দেওয়া কালভার্টের মুখ আটকে করা হয়েছে ভবন। এখনও চলছে ভবন নির্মাণ। রঘুনাথপুর মোড়ে শঙ্কর দেবনাথ, আশিষ হালদার, সোহবান ডাকুয়াসহ কয়েকজন এই মোড়ে ভবন নির্মাণ করেছেন। যার ফলে পানির খালটির স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। খাল বাঁচাতে অতিদ্রুত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় মো. ইউনুস বলেন, জয়গাছি খাল দিয়ে বর্ষা মৌসুমে আমাদের এলাকার পানি নামতো এক সময়। খালটির জোয়ারের সময়ের পানি দিয়ে স্থানীয় কৃষকরা তাদের কৃষি কাজ করতো। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর দখল করে মাছ চাষ করার ফলে খালটি এখন মৃতপ্রায়। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন যে, কোনটা খাল আর কোনটা মাছের ঘের সেটাই খুঁজে পাওয়া যায় না।

জয়গাছি গ্রামের আলমগীর মোল্লা বলেন, হাইস্কুলের যাওয়ার রাস্তা নির্মাণের সময় খালটির একপাশ আটকে দেওয়া হয়। পরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী স্যারসহ অনেকে এখানে ঘের করেন। যার ফলে এই খাল আর আমাদের কোনো কাজে লাগে না। জয়গাছি মাঠ সংলগ্ন প্রায় একশ’ পরিবারের ঘর-বাড়ি সামান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায়। এমনকি যারা খাল দখল করে মাছ চাষ করছেন, তারাও জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছেন।

স্থানীয় ষাটোর্ধ হাবিবুর রহমান শিকদার বলেন, এই খালে এক সময় শ্রোত ছিল, টাবুরে নৌকা চলেছে। এখন আর খালে পানি নেই, যে যার মতো দখল করেছে। কেউ ভবন করেছে, কেউ মাছ চাষ করছে। এখন আর খাল দিয়ে নৌকাও চলে না, এলাকার পানিও নামে না। এই খালই এখন আমাদের গলার কাঁটা হয়ে গেছে। এই খাল খনন ও দখলমুক্ত না হলে এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে।

স্থানীয় গৌতম মিত্র নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, সরকার যেখানে নদী খাল রক্ষার জন্য এত চেষ্টা করছে, সেখানে আমাদের এলাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই খালটি দীর্ঘদিন দখল হয়ে আছে। এটা কি দেখার কেউ নেই। আমরা চাই অতিদ্রুত সরকার এই খালটি দখলমুক্ত করুক।

বেমরতা ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী মল্লিক বলেন, খালটির এক পাশ দিয়ে পুরনো একটি রাস্তা রয়েছে, যার নিচ দিয়ে কোনো কালভাট বা পানি যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নাই। এছাড়া খালটির বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ও নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। আমিও খালের বেশকিছু অংশ নিয়ে ঘের করছি। তবে সরকার যদি খাল খনন বা দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়, তাহলে আমি খাল আটকে ঘের করা বন্ধ করে দেব।

জুলফিকার আলী আরও বলেন, আমি নিজেও তো জলাবদ্ধার শিকার হচ্ছি। সামান্য বৃষ্টি হলেই আমার বাড়ি-ঘর সব পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কুমার স্বস্তিক বলেন, জয়গাছি খাল দখলের বিষয়টি খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। দ্রুতই খালটি দখলমুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, জয়গাছি খালটি দখলের বিষয়ে স্থানীয় অনেকেই অভিযোগ করেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে খালটি দখলমুক্ত করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২২
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।