ঢাকা, বুধবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ মে ২০২৪, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

জ্বালানির দাম বাড়ায় ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২২
জ্বালানির দাম বাড়ায় ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ

ঢাকা: জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ডিজেলভিত্তিক ১১০০ মেগাওয়াটের পাওয়ারপ্ল্যান্ট সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

তিনি বলেন, উপাসনালয়গুলোতে নির্দিষ্ট সময়ে এসি ছাড়তে পারেন।

যতটুকু পারেন, সাশ্রয় করুন, এটাই আমার অনুরোধ।

সোমবার (১৮ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দেশের সার্বিক বিদ্যুৎ সাশ্রয় সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ডিজেলভিত্তিক পাওয়ারপ্ল্যান্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আমাদের ১১০০ মেগাওয়াট ডিজেল পাওয়ারপ্ল্যান্ট আছে সেটা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছি। এতে আমাদের বিদ্যুতের ঘাটতি হবে। সে ঘাটতির পরিমাণ হয়তো এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট হবে। মূলত মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) থেকে এক ঘণ্টা করে, এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং দেওয়া হবে। সব জায়গায় এক সঙ্গে লোডশেডিং হবে না, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো দিনের বেলায় বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য। পিক আওয়ারে গিয়ে এক ঘণ্টা লোডশেডিং দেওয়ার চেষ্টা করবো। তবে আমরা এক সপ্তাহ এই পরিস্থিতি দেখবো।

তিনি বলেন, বিটভিত্তিক, জোনভিত্তিক, এলাকাভিত্তিক যে লোডশেডিং দেওয়ার চেষ্টা করবো, এটা আগেই জানিয়ে দেওয়া হবে। এতে যদি দেখি এক ঘণ্টা আমাদের জন্য পর্যাপ্ত হয় তাহলে যেভাবে চলছে সেভাবে রাখবো। আর যদি দেখি এক ঘণ্টা পর্যাপ্ত না হয় তাহলে আমরা আরও এক ঘণ্টা মানে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং এ যাবো। আমরা চেষ্টা করছি বিভিন্ন খাত থেকে বিদ্যুৎ কীভাবে আরও সাশ্রয়ী করা যায়।

তিনি আরও বলেন, এ পদ্ধতি শুধু বাংলাদেশে নয়, ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ নানাভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ব্যবস্থা নিয়েছে। এই পরিস্থিতি ইউরোপসহ এশিয়ার অনেক দেশের। আমাদের একটা ক্রাইসিস সময় যাচ্ছে। এজন্য সবাই মিলে এক সঙ্গে কাজ করি, নিজেরা সাশ্রয়ী হই।

আমদানিকৃত ডিজেলের ১০ শতাংশ ব্যবহার হয় বিদ্যুতে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমদানির ১০ শতাংশ বিদ্যুতে ও ৯০ শতাংশ ব্যবহার হয় ট্রান্সপোর্টসহ অন্যান্য খাতে। আমি ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ খাতের ডিজেল বন্ধ করে সাশ্রয়ী করলাম। আর অন্যান্য খাত থেকে যদি ১০ শতাংশ সাশ্রয়ী করতে পারি। তাহলে ২০ শতাংশ ডিজেল সাশ্রয়ী করে যে পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করতে পারবো সেটা বড় একটা বিষয় হবে। সুতরাং আমি মনে করি আপনারা সবাই আমাদের সঙ্গে যথেষ্ট পজিটিভ থাকবেন। এটা খুবই সাময়িক একটা ব্যাপার।  দীর্ঘমেয়াদি কোনো বিষয় হবে বলে আমি মনে করি না।

তিনি বলেন, যানবাহন যদি কম ব্যবহার করি, তাহলে তেল ব্যবহার কিছুটা কমবে। ফরেন কারেন্সির ওপর কিছুটা প্রেসার কম পড়বে। সরকারি যেসব মিটিং বা যেসব বৈঠক অন্য অফিসে হয় সেগুলো যদি অনলাইনে করি এতে যানবাহন কম ব্যবহার হবে। জ্বালানি তেল সাশ্রয়ী হবে।

এই সিদ্ধান্তে অর্থনৈতিক প্রভাব কি পড়বে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারা বছর আমরা যে পরিমাণ ডিজেল আমদানি করি, বিদ্যুৎকেন্দ্র ব্যবহৃত হয় তার ১০ শতাংশ। তার দাম ফরেন কারেন্সিতে দিতে হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ৪০ টাকা, বিক্রি করছি পাঁচ টাকা। সে ঘাটতি থেকেতো বাঁচবো। যে গ্যাস আমাদের আমদানি করতে পড়ছে ৩৯ টাকা প্রতি ইউনিট সেটা বিক্রি করছি সাত টাকায়। ফলে এতো ভর্তুকি দেওয়া সরকারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে যাবে।

পেট্রোল পাম্প বন্ধ করা হবে কেন জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিপিসি পেট্রোলপাম্প মালিকদের সঙ্গে বসবে। সেখানে সপ্তাহে একদিন পেট্রোলপাম্প বন্ধ রাখা যায় কিনা সেটা চিন্তা ভাবনা করবো পরবর্তী অবস্থায়।

প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আমরা শতভাগ বিদ্যুতায়নে পৌঁছে গেছি। বাংলাদেশের প্রতিটি এলাকাতে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে সেটা আমরা দাবি করতে পারি। এর পরবর্তী অবস্থায় বিশ্ব পরিস্থিতি অন্যরকম অবস্থায় চলে গেছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যাপকভাবে একটা স্বল্পতা, মূল্যবৃদ্ধি এ বিষয়গুলো প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। এটার মূল কারণ হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধের কারণে ইউরোপে জ্বালানি সংকট তীব্রভাবে দেখা দিয়েছে। এর পাশাপাশি ইউরোপে প্রচণ্ড তাপদাহ শুরু হয়েছে, ফলে আরও এনার্জি প্রয়োজন তাদের।

তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে দেশের অভ্যন্তর থেকে ২৩০০ এমএসসিএফ নিজস্ব গ্যাস ব্যবহার করতাম। ২০১৮-১৯ পর্যন্ত ২৭০০ এমএসসিএফ গ্যাস সেটা কমে এখন ২৩০০ হয়েছে।  কিছু কিছু ড্রিলিং করার কারণে খনি থেকে কিছু গ্যাস পাচ্ছি। আমাদের প্রায় সাড়ে ৮০০ এমএসসিএফ গ্যাস আমদানি করতে হয়। এরমধ্যে ৫০০ এমএসসিএফ দীর্ঘ চুক্তির মাধ্যমে আমদানি করি। যেটার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল তেলের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে। মানে হলো তেলের দাম বাড়লে গ্যাসের দাম বাড়বে। কাতার ও ওমানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি করা আছে। বাকি প্রায় ৪০০ এমএসসিএফ আমরা স্পট মার্কেট থেকে নিতাম। স্পট মার্কেট গতবছরের থেকেও কম পায়সায় ছিল। যার কারণে আমরা এই তিন জায়গা থেকে নিয়ে ব্যালেন্স করতাম। তারপর মূল্য নির্ধারণ করা হতো।

সরকার বিদ্যুতে ও গ্যাসে ভর্তুকি দিচ্ছি জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যখন স্পট মার্কেটে কম দাম ছিল তখনও সরকার ভর্তুকি দিতো এখনও দিচ্ছে। তবে ভর্তুকির পরিমাণে অনেক ব্যবধান হয়ে গেছে। এখন স্পট মার্কেটে গ্যাস ৩৬ থেকে ৪০ ডলারে ওঠানামা করছে। যার কারণে স্পট মার্কেট থেকে গ্যাস গত মাসের আগের মাস পর্যন্ত নেওয়া ছিল। এরপর আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর আমরা স্পট মার্কেট থেকে এই দামে গ্যাস নেবো না। এই দামে গ্যাস নিলে পরে সরকারকে যে পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হবে সেটা অসম্ভব একটা ফিগার চলে আসে। যে কারণে আমরা মনে করছি গ্যাসবেজড যে পাওয়ার প্ল্যান্ট ছিল সেখানে আমরা রেশনিং করবো।

আরও পড়ুন>>

>>> প্রথমে এক, প্রয়োজনে দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং হবে

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২২
জিসিজি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।