ঢাকা, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সাগরে ইলিশ ধরার প্রস্তুতি

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২২
সাগরে ইলিশ ধরার প্রস্তুতি

চাঁদপুর: চাঁদপুর নৌ-সীমানায় মেঘনা নদীতে নাব্য সংকট ও বিভিন্ন স্থানে চর জেগে ওঠায় রুপালি ইলিশের প্রাপ্যতা কমেছে। এখন আর বছর জুড়ে মেঘনায় জেলেদের বিচরণ থাকে না।

বেকার না থেকে অনেক জেলে জুলাই মাসে চলে যান সাগরে ইলিশ ধরতে। মেঘনা উপকূলীয় মতলব উত্তর, সদর ও হাইমচর উপজেলার শত শত জেলে সাগরে মাছ ধরার জন্য জাল প্রস্তুত করছেন।  

গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষেধ। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হতে আর মাত্র পাঁচ দিন বাকি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই তারা নোয়াখালীর হাতিয়ার উদ্দেশে রওনা হবেন।

সম্প্রতি সদর দক্ষিণ ও হাইমচর উপজেলার জেলে পল্লীতে গিয়ে জেলেদের জাল প্রস্তুত করতে দেখা গেছে। একই ধরনের প্রস্তুতি আনন্দ বাজার এলাকার জেলেদেরও। টানা তিন মাস সাগরে ইলিশ আহরণ করবেন জানালেন জেলেরা।

চাঁদপুর সদরের সীমান্তবর্তী এলাকা আখনের হাট মেঘনা পাড়ে জাল মেরামত করছেন ২০-২৫ জন জেলে। তাদের জিজ্ঞেস করা হয় ইলিশ পাওয়া যায় কিনা। বললেন, আমরা পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ ধরি না। সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

সদর উদপজেলার হানারচর ইউনিয়নের গোবিন্দিয়া গ্রামের জেলে হাসান চৌকিদার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এখানে আটটি ফিশিং ট্রলার আছে। প্রত্যেক ট্রলারে কমপক্ষে ১৩-১৪ জন জেলে থাকে। এসব ফিসিং ট্রলারের মহাজন হরিণা ফেরিঘাট এলাকার মোজাম্মেল হোসেন টিটু গাজী। আগামী সপ্তাহে সাগরে ইলিশ ধরার জন্য রওনা হব। গত কয়েকদিন ধরে জাল মেরামত করছি।

তিনি আরও বলেন, গত বছর সাগরে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ইলিশ পাইনি। তিন মাসের খাওয়া খরচ শেষে পেয়েছি মাত্র আট হাজার টাকা। এ বছর এখনও সাগরের অবস্থা ভালো। ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।

একই এলাকার জেলে জুয়েল মাঝি, মনির ও ইয়াছিন গাজী বাংলানিউজকে বলেন, সাগরে মাছ আহরণ করতে গেলে প্রতি এক মাস পর পর বাড়িতে আসা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে সাগর এলাকার কূলে আশ্রয় নিতে হয়। আর আহরণকৃত ইলিশগুলো মহাজনের অতিরিক্ত ট্রলারে করে চাঁদপুর মাছঘাটে নিয়ে আসে।

আখনের হাট এলাকার জেলে সুলতান হাওলাদার, সুমন হোসেন ও হানিফ গাজী একই ফিশিং ট্রলারে কাজ করেন। এর মধ্যে অভিজ্ঞ জেলে হানিফ গাজী। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা নদী ভাঙনের শিকার। তিন বার আমাদের বাড়িঘর ও ফসলি জমি মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়েছে। মাছ ধরাই আমাদের একমাত্র পেশা। বেড়িবাঁধের পাশে আশ্রয় নিয়ে থাকি।

তিনি আরও বলেন, সাগরে ইলিশ আহরণে অনেকটা ঝুঁকি আছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেই বিপদের মুখোমুখি হতে হয়। কি আর করা, মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে ইলিশ আহরণ করতে হয়। সবই আল্লাহর ইচ্ছা। গত ২৫ বছর সাগরে ইলিশ ধরি। এখন আর ভয় পাই না।

হাইমচর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা উপকূলীয় এলাকার অনেক জেলেই সাগরে মাছ ধরতে যান। বিশেষ করে জুলাই মাস থেকে শুরু করে কয়েক মাস সাগরে মাছ বেশি পাওয়া যায়। ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়ে। এসব জেলেদের প্রকৃত সংখ্যা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। প্রতি বছরই বাড়ে কমে। তথ্য নিয়ে আনুমানিক বলা যাবে। তাদের মাছ ধরার ট্রলারগুলো একটু ভিন্ন ধরনের।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২২
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।