ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ড্রাগন বাগান থেকে ১০ লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২২
ড্রাগন বাগান থেকে ১০ লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে শখের বসে করা একটি ড্রাগন ফলের বাগান রূপ নিয়েছে বাণিজ্যিক বাগানে।  

চলতি মৌসুমে এ বাগান থেকে ১০ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রির সম্ভাবনা দেখছেন বাগান মালিক মো. বাহার মোল্লা।

এরই মধ্যে বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রিও শুরু করেছেন তিনি। রসালো ও সুস্বাদু এ ফলটির চাহিদা রয়েছে স্থানীয় ক্রেতাদের মধ্যে।  

অল্প পুঁজিজে ড্রাগন চাষ লাভজনক হওয়ায় বাগান মালিক এ ফলের বাগান ছড়িয়ে দিতে চান জেলার সর্বত্র।  

জানা গেছে, কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের চরকাদিরা গ্রামে লতিফ এগ্রো কমপ্লেক্স অ্যান্ড ফিশারিজের মালিক বাহার মোল্লা তার এগ্রো কমপ্লেক্সের ভেতরে দুই একর জমিতে ২০১৮ সালে গড়ে তোলেন ড্রাগন ফলের বাগান। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় চার বছরের ব্যবধানে সে বাগান এখন লাভজনক বাগানে পরিণত হয়েছে। বাগান থেকে চারা বিক্রি করেও বাড়তি আয় হচ্ছে বাগান মালিকের।  

বাগান মালিক বাহার মোল্লার বলেন, ২০১৮ সালে আমি নাটোর জেলায় ঘুরতে যাই। সেখানে ড্রাগনের একটি বাগান দেখে আমার মধ্যে বাগান করার ইচ্ছে জাগে। ৯০ হাজার টাকা দিয়ে আমি সেখান থেকে এক হাজার চারা আনি। দুই একর জমিতে ৫৮০টি পিলারের মধ্যে চারাগুলো রোপণ করি। বাগান তৈরিতে জৈব সার এবং সামান্য কিছু অনান্য সার ব্যবহার করি। এতে ছয়-সাত লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। এক বছরের মাথায় গাছে ফল আসা শুরু করে। গত বছর দুই লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছি। আশা করছি, চলতি মৌসুমে ১০ লাখ টাকার ফল বিক্রি করতে পারব। প্রতিটি গাছ থেকে টানা ৪০ বছর ফল সংগ্রহ করা যাবে। এ ক্ষেত্রে সামান্য পরিমাণ সার, ওষুধ এবং পরিচর্যা ছাড়া তেমন কোনো খরচ হবে না।  

তিনি বলেন, বাগান তৈরিতে যে টাকা ব্যয় হয়, তা তিন থেকে চার বছরের মধ্যে উঠে যায়। এছাড়া বাগান থেকে চারা তৈরি করা যায়। প্রতিটি চারা ৩০ টাকা করে বিক্রি করি। এখান থেকে চারা নিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট বাগান গড়ে উঠেছে। আর জেলার মধ্যে এটিই সবচয়ে বড় বাগান।  


 
বাহার মোল্লা জানান, শখের বসে বাগান শুরু করলেও উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে আরও দুটি বাগান তৈরি করেছেন তিনি। সেগুলো থেকেও ফল দেওয়া শুরু হয়েছে।  

বাহার মোল্লার আশা, ড্রাগন বাগান জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশের মাটিতে বিদেশি এ ফলের বিপ্লব ঘটানো যাবে। এতে করে ফলটির নতুন করে বাজার তৈরি হবে। পুষ্টিকর এ ফলটি অল্প টাকায় কিনতে পারবে ক্রেতারা।  

প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও বাগান পরিচর্যাকারী নাজিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, খুব সহজ পদ্ধতিতে বাগান তৈরি করা যায়। এখানকার মাটি এবং আবহাওয়া বাগান তৈরির জন্য বেশ উপযুক্ত। কেউ ড্রাগনের বাগান করতে চাইলে আমরা সর্বত্মক সহযোগিতা করব। স্থানীয় কৃষি বিভাগও বাগান তৈরিতে সহযোগিতা করে।

তিনি বলেন, আমরা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে এ ফলের চাষ করি। এতে কোনো ওষুধ বা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়না। তবে বছরে একবার গাছে সার প্রয়োগ করতে হয়। প্রতি সপ্তাহে একবার করে টানা ছয় মাস ফল সংগ্রহ করা যায়। পাকা ড্রাগন ফলটি একেবারে রসালো এবং সুস্বাদু। তাই আশেপাশের বাজারের ক্রেতাদের কাছে এ ফলের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। প্রতি হাটবারে গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করে স্থানীয় হাটেই প্রতি কেজি ৩০০ টাকা করে বিক্রি করি।

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক সানা উল্যা বলেন, আগেও আমি ড্রাগন ফল খেয়েছি। তবে এ বাগানের ড্রাগন ফল অত্যন্ত রসালো ও সুস্বাদু।

 

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আতিক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বাহার মোল্লার ড্রাগন ফলের বাগানে আমাদের একটি প্রদর্শনী আছে। আমরা সার, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকি। অল্প সময়ে বাগানে ফল আসা শুরু করে, তাই এটি লাভজনক। তবে বেশি পরিমাণে বাগান তৈরি হলে হয়তো ড্রাগন ফলের দাম কমে যাবে। বিভিন্ন সময়ে এখন বাজারে ড্রাগন ফল দেখতে পাওয়া যায়। তবে শীতকালে এ ফল পাওয়া যায় না।

তিনি বলেন, শীতের মৌসুমে ড্রাগনের ফুল ফুটলেও ফল হয় না। তবে বাগানকে আলোকিত রাখা হলে শীতকালেও গাছে ফল আসে। তাই কৃত্রিমভাবে শীতকালের রাতে বাগানে লাইটের আলো দেওয়া হলে ফল ধরবে। আমরা বাগান মালিকদের সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।