রাজশাহী: রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন ধূমকেতু এক্সপ্রেসে এক্সট্রা থ্রি বগির নিচের চাকায় পোড়া গন্ধ ও ধোঁয়া দেখা দেওয়ায় বগিটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ট্রেন যাত্রীরা জানিয়েছেন ধোঁয়া নয়, আগুনই দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহীর বাঘার আড়ানী রেল স্টেশনে পৌঁছানের পর এই ঘটনা ঘটে।
পরে রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল কাঁচাবাজার এলাকার আমির হোসেন নামে এক যুবক ইমার্জেন্সি চেন টানেন। এরপর ট্রেনটি থামিয়ে দেওয়া হয়। এতে ট্রেনের শত শত যাত্রী বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান। এই ঘটনায় রাজশাহী রেল স্টেশন থেকে পরে অতিরিক্ত বগি নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে। রাতে ওই বগি লাগিয়ে ৩ ঘণ্টা বিলম্বে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
এই ঘটনায় তীব্র গরম আর ভিড়ে রাতে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহান সাধারণ যাত্রীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি আড়ানী স্টেশনে পৌঁছানোর পর ৭৬০৩ নম্বর কোচ বা এক্সট্রা ৩ বগির চাকায় আগুন ধরে যায়। আগুনের খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে হুড়োহুড়ি করে অনেক যাত্রী নেমে পড়েন। এতে আহত হন অনেকে। যাত্রী ও রেলকর্মীরা দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
রাজশাহীর বাঘা আড়ানী রেল স্টেশনের মাস্টার ময়েন উদ্দিন আজাদ বলেন, ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনের চাকার বিয়ারিং জাম হয়ে আগুন লেগে ধোঁয়া উঠছিল। ট্রেন থামার পর তা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ঘটনাটি জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অসিম কুমার তালুকদারকে জানিয়ে ট্রেনের বগি পরিবর্তন করা হয়। তবে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। রাজশাহী রেল স্টেশন থেকে একটি বগি এনে রাত ৩টার দিকে ২ ঘণ্টা ৫১ মিনিট বিলম্বে ধূমকেতু এক্সপ্রেস ঢাকার উদ্দেশে ছাড়া হয়।
এদিকে, ট্রেনে আগুন লেগে, শর্ট সার্কিট হয়ে চাকা ব্রেক হওয়া ঘটনাগুলো সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে কখনও এ ধরনের ঘটনার কথা শোনা যেত না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন- দক্ষ প্রকৌশলী ও কর্মচারীর অভাব, দায়িত্বহীনতা এবং দুর্নীতির কারণে সম্প্রতি সময়ে একের পর এক এমন ঘটনা ঘটছে।
পশ্চিমাঞ্চাল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যদি এসব বিষয় অত্যন্ত সতর্ক এবং দূরদর্শিতার পরিচয় না দেয় তাহলে তাদের গাফিলতির চরম মূল্য দিতে হবে। সিওএস দপ্তর থেকে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জাম কেনাকাটা এবং জোড়াতালি দিয়ে ট্রেন পরিচালনার কারণে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে। মেয়াদোত্তীর্ণ বগি ও রেললাইন ট্রেন পরিচালনার জন্য বর্তমানে ঝুঁকির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট রেল কর্মকর্তারা এই বিষয়গুলো জানেন এবং বোঝেন কিন্তু তারপরও তারা যাত্রীসেবার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে না।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার আবদুল করিম জানান, তারা নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন। এরপরও দুর্ঘটনা তো দুর্ঘটনাই। এটি যেকোনো সময় ঘটে যায়। তবে তারা সব সময় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকেন।
এর আগ গত ১২ জুন রাজশাহী থেকে খুলনাগামী সাগরদাঁড়ি আন্তঃনগর ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই তা নিয়ন্ত্রণে আনেন রেলকর্মীরা। সকালে রাজশাহী রেল স্টেশন থেকে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে ওই দুর্ঘটনা ঘটেছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২২
এসএস/কেএআর