ঢাকা, শুক্রবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

পাড়া-মহল্লার চামড়া সংগ্রহ করছে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২২
পাড়া-মহল্লার চামড়া সংগ্রহ করছে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা

ঢাকা: পশুর চামড়া সংগ্রহের সবচেয়ে বড় মৌসুম ঈদুল আযহা। দেশে সারা বছর যে পরিমাণ পশু জবাই হয়, তার ৬০ শতাংশই হয় ঈদুল আযহায় কোরবানির মাধ্যমে।

এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদের নামাজের পরপরই পশু জবাইয়ের মাধ্যমে শুরু হয়েছে রাজধানীসহ সারা দেশে কোরবানি।

এবার ঈদের দিন পশু কোরবানির পর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও পাড়া-মহল্লার মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহ করছে। এরপর পাড়া মহল্লার চামড়া সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য নিয়ে যাবে লালবাগের পোস্তায়।

রোববার (১০ জুলাই) রাজধানীর সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, ধোলাইখাল, লক্ষীবাজার এলাকা ঘুরে গেছে, ঈদের নামাজ শেষে শুরু হয় পশু কোরবানি। কোরবানির পর পরই শুরু হয় চামড়া ছাড়ানোর কাজ৷ ফলে সর্বত্র চলছে চামড়া সংগ্রহের তৎপরতা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে চামড়ার স্তূপ। এলাকায় স্থানীয় মাদ্রাসা কমিটির উদ্যোগে চামড়া সংগ্রহের কাজ চলছে। মাদ্রাসার প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে বিনা মূল্যে সংগ্রহ করছেন চামড়া। এক এলাকা থেকে কিছু চামড়া পেলে তা তোলা হচ্ছে রিকশা ভ্যানে। এরপর ছুটছেন তারা অন্যত্র।

সূত্রাপুর এক মাদ্রার ছাত্র মো. কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আজ সকাল ৮ টা থেকে পশু কোরবানি শুরু হয়েছে৷ এক ঘণ্টা লাগে পশুর শরীর থেকে চামড়া ছাড়াতে। আমরা ১২টার দিকে চামড়া সংগ্রহ করতে নেমেছি। দুপুর ২টা পর্যন্ত সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, নারিন্দাসহ ধোলাইখাল এলাকায় আমাদের ৫০ জন কাজ করছে। এ পর্যন্ত ৩৫০টি চামড়া সংগ্রহ করেছি। বিকাল ৫টার দিকে লালবাগের পোস্তায় নিয়ে বিক্রি করবো।  

তিনি বলেন, এবছর সরকার লবণযুক্ত চামড়া ৪৭ থেকে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। তবে আমরা লবন ছাড়া কাঁচা চামড়া নিচ্ছি৷ প্রতিটি বড় সাইজের চামড়া ১৫০০ টাকা, মাঝারি সাইজের চামড়া ১২০০ টাকা, এর থেকে ছোট ৮০০ থেকে এক হাজার এবং ছোট চামড়া ৫০০ টাকা এবং সবচেয়ে ছোট চামড়া ৩০০ টাকায় বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি। গত বছর পানির দামে চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। আশা করছি এবছর ভালো দাম পাবো।

জানা গেছে, কোরবানির চামড়া সংগ্রহের মাধ্যমেই টিকে আছে দেশের তৃতীয় বৃহৎ রফতানি খাত ট্যানারি ব্যবসা। শুধু তা-ই নয়, ঈদের সময় দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানার সংগ্রহ করা চামড়া বিক্রি করে যা টাকা হয়, তার মাধ্যমে তাদের চার-পাঁচ মাসের খরচও উঠে আসে। তাই প্রতি বছর ঢাকা শহরের অলিগলি ও প্রধান সড়ক এবং গ্রামে গ্রামে চামড়া সংগ্রহের কাজে এগিয়ে থাকে স্থানীয় মসজিদ-মাদ্রাসা ও এতিমখানা কর্তৃপক্ষ। পরে তা বিক্রি হয় চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে। বেশির ভাগ চামড়া মূলত তাদের মাধ্যমেই বড় ব্যবসায়ীদের কাছে যায়।

এছাড়া চামড়া সংগ্রহের কাজে মৌসুমি ব্যবসায়ীর সংখ্যা কম নয়। এর বাইরে কিছু কিছু ট্যানারি মালিকের পক্ষে নিয়োজিত ফড়িয়ারা বিভিন্ন স্থান থেকে সরাসরি কিছু চামড়া সংগ্রহ করে থাকে।

এদিকে প্রতি বছরের মতো সরকার লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার মূল্য ৪৭ থেকে ৫২ এবং সারা দেশে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। এছাড়া খাসির চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা বর্গফুট নির্ধারিত আছে।

গরুর আকৃতি ও ওজনভেদে চামড়ার পরিমাণ কমবেশি হয়। সাধারণত গরুর চামড়া সর্বনিম্ন ২২ থেকে সর্বোচ্চ ২৬ বর্গফুট পর্যন্ত হয়। আর ছাগল-খাসির চামড়ার গড়হার হচ্ছে সাড়ে ৪ বর্গফুট। এ বছর কোরবানি থেকে চামড়া আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা প্রায় ৯০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের আশা করছেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যানুসারে, এ বছর গরু, ছাগল, ভেড়া ও উট মিলিয়ে ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। গত বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি। এর মধ্যে কোরবানি হয় ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি পশুর।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২২
জিসিজি/এসএ 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।