ঢাকা: পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র একদিন বাকি। এরই মধ্যে কোরবানির পশুর হাটগুলোতে চলছে জমজমাট বেচাকেনা।
শুক্রবার (৮ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন পশুর হাট, পাড়া-মহল্লার অলিগলি ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন তথ্য।
দেখা যায়, শেষ মুহূর্তে রাজধানীর প্রতিটি মহল্লায় জমে উঠেছে গো-খাদ্য, কাঠের গুঁড়ি ও চাটাইয়ের মৌসুমি ব্যবসা। এগুলোর দাম নিয়ে ক্রেতাদের কারো কারো মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ থাকলেও ঘরের পাশ থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পেরে অনেকেই আনন্দিত।
তবে দাম নিয়ে বিক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় গো খাদ্য, কাঠের গুঁড়ি ও চাটাইয়ের দাম পাইকারি বাজারে কিছুটা বেড়েছে। ফলে তাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মিরপুর এলাকায় কাঠের গুঁড়ি ও চাটাই বিক্রেতা মো. সোলায়মান বাংলানিউজকে বলেন, গত বছরের চেয়ে বেশি দামে কিনেছি, তাই কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিটি আইটেমের দাম ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমার এখানেই কয়েক ধরনের কাঠের গুঁড়ি আছে। ভালোটা নিতে গেলে একটু দাম বেশি পড়ছে। তবে দামের জন্য ক্রেতারা ঘুরে যাচ্ছেন না বলে জানান তিনি।
আরেক বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, গাছের গুঁড়ি তৈরিতে তেঁতুল গাছের কাঠকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। কারণ অন্য কাঠের তুলনায় তেঁতুল কাঠের গুঁড়ি দা-ছুরির আঘাতে নষ্ট হয় না। তাই এর চাহিদা ব্যাপক, দামও কিছুটা বেশি। ক্রেতারা কেনার আগে তেঁতুল গাছের গুঁড়ি কিনা দেখেশুনে কেনেন। বিক্রেতারাও তেঁতুল গাছের গুঁড়ি হাঁকডাক করেই বিক্রি করেন। আমি প্রতিটা গাছের গুঁড়ি ছোটগুলো ৩০০ ও বড়গুলো ৪০০ টাকা বিক্রি করছি।
ফলের ব্যবসা বন্ধ রেখে তিন দিনের জন্য মৌসুমি এই ব্যবসা করছেন শেওড়াপাড়ার মোহাম্মদ বাবু মিয়া। এক যুগেরও বেশি ধরে এই সময়টায় তিনি কাঠের গুঁড়ি, চাটাই ও গো খাদ্য বিক্রি করেন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আমি ঈদের আগে এই সিজনাল ব্যবসা করি। মহল্লাবাসী আমার কাছ থেকেই এসব কেনেন। দামের জন্য তেমন আটকায় না। ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি, আর কম। ক্রেতারা ভালো জিনিস নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে।
শুধু পাড়ামহল্লা নয়, গরুর হাটগুলোর সামনেও গো-খাদ্যের রমরমা ব্যবসা চলছে। গরু বেপারিরা দামের দিকে দেখছেন না। হাতের কাছে খাদ্য কিনতে পারায় তারাও সন্তুষ্ট।
রাজধানীর একটি হাটের সামনে গো-খাদ্যের ব্যবসা করছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শরীয়তপুর থেকে এসেছি, এ হাটে ডালের ভূষি, ধানের কুড়া, গমের ভূষি, চালের খুদ, ভুট্টার ভূষি বিক্রি করছি। একেকটা একেক দামের।
তিনি জানান, প্রতি কেজি ডালের ভূসি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, কুড়া ২০ টাকা, গমের ভূসি ৫০ টাকা, চালের খুদ ৩৫ টাকা ,গুঁড়া মুসুরির ডাল ৬০ টাকা, ভূট্টার ভূসি ৬০ টাকা এবং লবণ ২০ টাকা দরে বিক্রি করছি। এসব পণ্য আমি প্রতি বছরই কোরবানির হাটে বিক্রি করি।
অন্যদিকে পশুর সৌন্দর্য বাড়াতে হাটের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ইউসুফ আলী। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি হাটে হাটে ঘুরে ঘুরে মালা বিক্রি করছি। পশুর সৌন্দর্য বাড়াতে লোকেরা আমার কাছ থেকেই মালা কিনে নিয়ে যায়। প্রতিটি মালা ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করছি।
এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছর আমরা এই সময়টার জন্য অপেক্ষায় থাকি। তিন চারদিনের ব্যবসায় আমাদের ভাল উপার্জন হয়। মৌসুমি এই ব্যবসা গ্রামীণ অর্থনীতিকে গতিশীল করেও বলে তারা উল্লেখ করেন।
এদিকে কাঠের গুঁড়ি ও গো খাদ্যের দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ থাকলেও ঘরের গেট থেকে পণ্য কিনতে পেরে আনন্দিত অনেকেই।
এ ব্যাপারে মিরপুর শেওড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা শেখ আব্দুল জামাল বাংলানিউজকে বলেন, কোরবানির জন্য লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনে এনেছি। আর এটা কিনতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি কোনো ব্যাপার না। আর বাড়ি দরজায় এ সব জিনিস বিক্রি করায় কষ্টও কম হ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০২২
এসএমএকে/এমএমজেড