ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ না করে গতিসীমা নির্ধারণের দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৩ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০২২
পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ না করে গতিসীমা নির্ধারণের দাবি

ঢাকা : ঈদ এলে প্রতিবছরই ভারী যানবাহনের পাশাপাশি হালকা বাহনে করে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরেন দেশের কর্মজীবীদের একাংশ। হালকা যানবাহনের একটি মোটরসাইকেল।

গত কয়েক বছর এ বাহনে বাড়ি ফেরার সময় দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা ব্যাপক। এসব কথা মাথায় রেখে এবার মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এমনকি মোটরসাইকেল নিয়ে জেলার সীমানা অতিক্রম করাও নিষিদ্ধ।

এদিকে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। গত ২৫ জুন উদ্বোধন হয়েছে পদ্মা সেতু। সব রকম যানবাহন চলাচলে সেতু খুলে দেওয়ার প্রথমদিনেই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুজন প্রাণ হারান। তারপর থেকে এ সেতুতে নিষিদ্ধ রয়েছে বাহনটি। কিন্তু ঈদ যাত্রার কথা মাথায় রেখে সেতুতে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ না করে গতিসীমা নির্ধারণ করে যাতায়াত সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

মঙ্গলবার (৫ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। বিবৃতিতে আসন্ন ঈদযাত্রায় মহাসড়কে মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং বন্ধের সিদ্ধান্তকে পুঁজি করে ব্যক্তিগত বাইক নিয়ে চলাচলকারীদের যাত্রাপথে হয়রানি করা হলে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে বলেও দাবি করা হয়।

বিবৃতিতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, রাইড শেয়ারকারী মোটরসাইকেলের সঠিক কোনো সংখ্যা বা ডাটাবেস বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) বা ট্রাফিক বিভাগের কাছে নেই। ফলে কোনটি রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল, কোনটি ব্যক্তিগত; তা আলাদা করার কোনো সুযোগ নেই।

চলার পথে কোথাও কোথাও সড়কের মাঝপথে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা দ্রুতগতির মোটরসাইকেল থামিয়ে কাগজপত্র চেক করছেন; এমন দৃশ্য প্রায়ই চোখে পড়ে। এ ধরনের চেকিং পদ্ধতি সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই উৎস মূলে যাতে যানজট তৈরি না হয় এমন নিরাপত্তা সমুন্নত রেখে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র চেকিং করা, চেকিংয়ের নামে অহেতুক কোনো বাইকার যাতে হয়রানি বা চাঁদাবাজির শিকার না হয় সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখার জন্য আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী আরও বলেন, বর্তমানে দেশে ৩৭ লাখের বেশি মোটরসাইকেল রাস্তায় চলছে। গণপরিবহন সংকট, বাস মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা, পদে পদে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য, রেলের টিকিট অব্যবস্থাপনা, শিডিউল বিপর্যয়, যানজটসহ নানা কারণে ক্রমেই মানুষ মোটরসাইকেলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ বাহনটি কখনোই গণপরিবহনের বিকল্প হতে পারে না। তবুও পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশের আদলে গণপরিবহনের সংখ্যা কমানোর মধ্য দিয়ে যানজট কমাতে দেশে রাইড শেয়ারিং চালু করা হলেও বাস্তবভিত্তিক নীতিমালা ও মনিটরিংয়ের অভাবে এসব রাইড শেয়ারকারী যানবাহন যানজট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

এমন অবস্থায় দেশের সড়কের তুলনায় মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এ বাহনটির নিবন্ধন বন্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তার আগে গণপরিবহন সংকট সমাধান করা, যাত্রী সেবার মানোন্নয়ন, যাত্রী হয়রানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

গত ঈদুল ফিতরে প্রায় ২৫ লাখ মোটরসাইকেল রাস্তায় নামার কারণে স্বস্তিদায়ক ঈদ যাত্রা লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। তাই আপাতত গণপরিবহন সংকটের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে ঈদ যাত্রা নিষিদ্ধ না করে বাহনটির গতিসীমা নির্ধারণ, লাগেজ-ব্যাগেজ নিয়ে না যাওয়া, পরিবারের একাধিক সদস্য নিয়ে চলতে না দেওয়ার পাশাপাশি এর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে চলাচলের সুযোগ দিতে অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বিবৃতিতে আরও বলেন, আমাদের গৌরব ও অহংকারের প্রতীক স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের গতি নির্ধারণ করে সিসিটিভি ক্যামেরায় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ঈদের আগে চালু করে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এর আগে গত ২৭ জুন ভোর ৬টা থেকে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। তথ্য অধিদফতরের এক তথ্য বিবরণীতে এ ব্যাপারে বলা হয়, পুনরায় আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে।

বাংলাদেশ সময় : ১৮১১ ঘণ্টা, ৫ জুলাই, ২০২২
এইচএমএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।