ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লুটপাট হয়নি ঘরের কিছুই, তবে কেনো হত্যা করা হলো বৃদ্ধাকে?

সাগর ফরাজী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৯ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২২
লুটপাট হয়নি ঘরের কিছুই, তবে কেনো হত্যা করা হলো বৃদ্ধাকে?

সাভার, (ঢাকা): বোরকা পরে বাসা ভাড়ার কথা বলে বাড়িতে প্রবেশ করে বাড়ির মালিক বৃদ্ধা নারীর রুমে গিয়ে দীর্ঘ দুই ঘণ্টা একাকী সময় পার করে বের হয়ে যান অজ্ঞাতপরিচয় এক নারী। তবে পরে বাড়ির দারোয়ান সেই রুমে গিয়ে দেখেন তার বৃদ্ধা মালিক হাত-পা ও মুখ বাধা অবস্থায় নিচে পড়ে আছেন।

  এসময় অর্থ-গহনা কিছু নিয়ে যায়নি সেই বোরকা পরিহিত নারী। হত্যার পর বাড়িটি থেকে বের হওয়ার সময় সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় সেই নারীকে। কিন্তু একবারের জন্য মুখ দেখা যায়নি তারা। তবে কেনো হাজেরা খাতুন নামের সেই বৃদ্ধা নারীকে হত্যা করা হলো? 

এমন প্রশ্ন মনে নিয়ে হত্যাকাণ্ডের আসল সত্যতা জানাতে বিভিন্ন তথ্যের পেছনে ছুটছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

এ ঘটনায় সাভার থানা পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগসহ (সিআইডি) বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছেন। পিবিআইর পক্ষ থেকে ঘটনাটি তদন্ত করেছেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) সালেহ ইমরান। এ ঘটনার পর থেকে মঙ্গলবার (২৮) গভীর রাত পর্যন্ত ঘটনাস্থলে তদন্ত করেছেন তিনি।

বুধবার (২৯ জুন) দুপুরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সালেহ ইমরান বাংলানিউজের কাছে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে এমন হত্যার কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘প্রথমে মনে করা হয়েছিল হত্যার মোটিভ চুরি বা লুট। তবে বাসার সব জিনিস যথাস্থানে রয়েছে। নারীর গলায় হার রয়েছে স্বর্ণের, ঘটনার কিছুক্ষণ আগে দারোয়ান টাকাও দিয়ে গিয়েছিলেন নারীকে, টাকাটা একটা ডায়েরির ভেতরে ছিল। এসব কিছুই নেয়নি সেই বোরকা পরা নারী। তবে কেনো সেই বৃদ্ধাকে হত্যা করা হলো?’

তিনি জানান, তারা ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত তদন্ত করেছেন। তারা দেখেছেন সেই নারীকে হাত দড়ি দিয়ে,পা ওড়না দিয়ে, মুখে কসটেপ দিয়ে বাঁধা হয়েছিল। যে কারণে তার শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। তবে ঘরের কিছুই লুট বা নিয়ে যায়নি হত্যাকারী। যদি সেই নারীর বাসায় ছিনতাই বা লুট করার উদ্দেশ্য থাকতো তাহলে অবশ্যই কিছু না কিছু নিয়ে যেতো। তবে এমন কিছু সেই বোরকা পরা নারী করেননি।

তিনি বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরপর অনেকজনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। অনেক কিছু নিয়ে তদন্ত করেছি। সেই নারীটা প্রায় দুই ঘণ্টা সময় বাসায় অবস্থান করেছে। আর এ সময়ের ভেতর তিনি হত্যাকাণ্ডটি চালিয়েছেন বলে আমাদের ধারণা। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা। আমরা বিভিন্ন তথ্য নিয়ে কাজ করছি দ্রুতই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা হবে। ঘটনাটিতে বুধবার রাতেই মামলা হওয়ার কথা জানতে পেরেছি।

সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে দেখে কিছু পাওয়া গেছে কিনা এমন প্রশ্নে? তিনি বলেন, ফুটেজ আমরা উদ্ধার করেছি। সেই ফুটেজে শুধু নারীর আসা-যাওয়ার চিত্রই পাওয়া গেছে। আর কিছু না। যতক্ষণ বাসায় ছিল বা যাওয়ার-আসার সময় মুখ খোলেননি, তখনও মুখ ঢাকায় ছিল। তবে পাশের বাসার এক ভারাটিয়া নারী যাওয়ার সময় তার মুখ দেখতে চেয়েছিলেন। সেই ভাড়াটিয়া আমাদের জানিয়েছেন, বোরকা পরা নারীর মুখটা একটু কালো দাঁতগুলো উঁচু উঁচু।

মঙ্গলবার দুপুরে পৌরসভা তিন নম্বর ওয়ার্ডের বিনদবাইদ এলাকার মৃত শাখাওয়াতের ছয়তলা বাড়ির চারতলায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত হাজেরা খাতুন মৃত শাখাওয়াত হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রী। শাখাওয়াত হোসেন বাড়ি মানিকগঞ্জ এলাকায়। সেই বৃদ্ধা নারী ছয়তলা ওই বাড়িতে চারতলা একটি রুমে একাই থাকতেন ও বাড়িটি দেখাশোনা করতেন।

বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী সাইদুল রহমান বাংলানিউজকে জানান, দুপুরে বোরকা পরা এক নারী বাসা ভাড়া নেওয়ার জন্য কথা বলতে আসেন। তিনি যখন চারতলার ফ্ল্যাটে যান সাইদুল তার সঙ্গেই ছিলেন। কিছুক্ষণ পরে তারা সাইদুলকে চলে যেতে বলেন। সেসময় ছাদে মিস্ত্রিরা কাজ করছিলেন। তাই সাইদুল তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় তিনি চারতলার ফ্ল্যাটের দরজা খোলা দেখতে পান। ভেতরে গিয়ে দেখেন হাজেরার হাত দড়ি দিয়ে, পা ওড়না দিয়ে বাঁধা এবং মুখে স্কচটেপ পেঁচানো। বোরকা পরা সেই নারী নেই। মিস্ত্রির সহায়তায় বাঁধন খুলে সাইদুল বুঝতে পারেন হাজেরা মারা গেছেন। তখন তিনি জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহায়তা চান।

বিষয়টি নিয়ে সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) মাঈনুল ইসলাম বলেন, ৯৯৯ থেকে তথ্য পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগও (সিআইডি) ও পিবিআই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের মনে হয়েছিল এটি হত্যাকাণ্ড হতে পারে। যে কারণে আমরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আমরা হত্যাকারীর পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। প্রথমে মনে করা হয়েছিল হত্যার মোটিভ চুরি বা লুট। তবে বাসার সব জিনিস যথাস্থানে রয়েছে। ফুটেজ বিশ্লেষণ করেই আমরা হত্যার মোটিভ বোঝার চেষ্টা করছি। ঘটনাটিতে মামলা কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৯ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২২
এসএফ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।