ঢাকা, রবিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাভারে শিক্ষক হত্যা:

আর কখনো মায়ের জন্য ওষুধ কিনবেন না উৎপল 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৭ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২২
আর কখনো মায়ের জন্য ওষুধ কিনবেন না উৎপল  ফেসবুক থেকে নেওয়া।

সাভার (ঢাকা): ছাত্রের মারধরে মারা যান শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার। পাঁচ ভাই তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি।

তাই মা গীতা বালার খুব বেশি আদরের ছিলেন। তিনিই খুব কাছ থেকে বৃদ্ধা মায়ের দেখভাল করতেন। তবে এখন আর উৎপল তার মাকে দেখভাল করতে পারবেন না এই কথা ভেবেই বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন মা গীতা ও বড় ভাই আসীম কুমার সরকার।

হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার নিহত হওয়ার তিনদিন পর মঙ্গলবার (২৮ জুন) বিকেলে মোবাইল ফোনে সিরাজগঞ্জে তার মা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।

তারা জানান, সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার লাহিরী মহনপুর দত্তপাড়া এলাকার দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের একটি স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাশ করার পর উল্লাপাড়া সরকারি কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করেন উৎপল কুমার সরকার। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স, মাস্টার্স শেষ করেন।  

২০১১ সালে আশুলিয়ার চিত্তশাই এলাকার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। শিক্ষকতাকালীন নীতি নৈতিকতার জন্য প্রতিষ্ঠানটির শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি করা হয় তাকে।

নিহত উৎপলের মা (৮০) গীতা বালা সরকার কান্না জড়িত কণ্ঠে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার ব্যাটাকে মাইরা ফালাইছে, আপনারা কি করলেন? আমার ব্যাটা আমারে ওষুধ কিনে দিত। ১০/১৫ দিন আগে আমার ছেলে আমারে দেখপার আইছিল। ফল নিয়া আইছিল। আমার ছেলে আমারে খুব ভালোবাসতো। আমি পাগল ওইয়্যা যামু। ব্যাটা ছাড়া আমার আর কেউ নেই। আপনারা আমার জন্য কিছু করেন। আপনারা আমার ছেলে হত্যার বিচার করেন। ’

মোবাইল ফোনে কথাগুলো বলার পর ওই প্রান্ত থেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন গীতা বালা সরকার।  

নিহতের বড় ভাই মামলার বাদী আসীম কুমার সরকার বলেন, ‘আমার বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। ছোট ভাই উৎপলকে আমরা খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করাইছিলাম। আমরা পাঁচ ভাই এখনো একসঙ্গে থাকি। ওই ভাই (উৎপল) আমাদের পরিবার দেখাশুনা করতো। আমাদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। তিন বছর আগে ভাইকে বিয়ে করাইছি ওর বউ এর এখন কি হবে?’

‘আমার মাকে বাঁচাবো কি করে। বাড়িতে আসলেই আমার বৃদ্ধ মাকে উৎপল নিজ হাতে গোসল করাইতো। আমার মাকে বাঁচাইতে পারবো না ভাই’ বলেই সেও কেঁদে ফেলেন। তারপর আর তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার (২৫ জুন) দুপুরে হাজী ইউনুস আলী কলেজে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা চলার সময় পেছন থেকে শিক্ষক উৎপলকে কাঠের স্টাম্প দিয়ে হামলা করে জিতু দাদা নামের এক ছাত্র। পরে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে এক দিন পর রোববার (২৬ জুন) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় রোববারেই নিহতের ভাই অসীম কুমার সরকার বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় জিতুর নামে একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার তিনদিন পেরিয়ে গেলেও আসামিকে ধরতে পারেনি পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২২
এসএফ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।