ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সদরঘাটে কমেছে নৌ-যাত্রী, মিশ্র প্রতিক্রিয়া সংশ্লিষ্টদের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪০ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২২
সদরঘাটে কমেছে নৌ-যাত্রী, মিশ্র প্রতিক্রিয়া সংশ্লিষ্টদের

মাছুম কামাল, সদরঘাট (ঢাকা) থেকে ফিরে: পদ্মা সেতু দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যান চলাচল শুরু হয়েছে রোববার (২৬ জুন)। এতে আপাতত সীমিত আকারে হলেও এর প্রভাব পড়েছে নৌ-পথে চলাচলকারী যাত্রী ও লঞ্চ মালিকদের ওপর।

রোববার (২৬শে জুন) রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, তুলনামূলক লঞ্চের সংখ্যা কমেছে। একই সঙ্গে যাত্রীর সংখ্যাও কিছুটা কমেছে।

ঢাকা থেকে বরগুনার কুমড়াখালীর যাত্রী স্বপন চন্দ্র হাওলাদার বলেন, আমরা একটু রিলাক্সে যেতে চাই। বাসে গাদাগাদি হবে, সঙ্গে বাচ্চা-কাচ্চাও আছে, তাই লঞ্চে যাচ্ছি। তবে সময় বেশি লাগবে।

বরগুনার কাকচিড়া এলাকায় যাবেন মো. আলামিন। বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় খুশি হইছি। সামনে বাসে যাওয়ার ইচ্ছে আছে।

ঢাকা-বরিশাল-বরগুনার লঞ্চ এমভি রয়েল ক্রুজের সুপারভাইজার মিজানুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতুর প্রভাব তো পড়বেই। তবে, সত্যি বলতে আমরা এখনো সেভাবে টের পাচ্ছি না। তবে, যাত্রী আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। সামনে, আরও বেশি প্রভাব পড়তে পারে। তবে, আমরা পদ্মা সেতু হওয়াটাকে ইতিবাচক ভাবেই নিয়েছি।

ঢাকা-বেতুয়া-চরফ্যাশন-আয়শাবাগ অভিমুখী লঞ্চ এমভি তাশরীফের কর্মচারী হাসান বলেন, আজ তুলনামূলক যাত্রী কম। এখনো পদ্মাসেতুর প্রভাব সেভাবে পড়েনি। তবে, পড়বে। আমাদের আশঙ্কা আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে এটি ভাল ভাবে টের পাওয়া যাবে।

বরিশালের যাত্রী সেলিনা বলেন, আসলে পদ্মা সেতু হয়ে যেতে গেলে বাস ভাড়া পড়বে ৭০০-৭৫০ টাকা। যেখানে লঞ্চের ডেকে আমরা ৩৫০-৪০০ টাকায় যেতে পারছি। ফলে, ইচ্ছে থাকলেও আমরা বাসে যেতে পারব না। আমাদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি নদীপথে বেশ ভাল পরিমাণে যাত্রী কমতে পারে। তবে, সড়কপথে জট, তুলনামূলক বেশি ভাড়াসহ অন্যান্য কারণে কিছুটা কমলেও স্বাভাবিকই থাকতে পারে যাত্রী সংখ্যা। মূলত ঢাকা থেকে বরিশাল-শরিয়তপুর রুটে যাত্রী বেশি কমেছে। এছাড়া বরগুনা ও অন্যান্য রুটের যাত্রী মোটামুটি ভালই আছে এখনো।

বিআইডব্লিউটিএ'র যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবির বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে বাস চলাচলের ফলে তার প্রভাব তো নৌ-রুটে পড়বেই। এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে, ঠিক এই মূহূর্তে বোঝা কঠিন সেটা কত শতাংশ হবে। আমরা ধারণা করছি, আনুমানিক ২০ শতাংশ যাত্রী কমে যাবে।

বিআইডব্লিউটিএ'র এই কর্মকর্তা বলেন, এতদিন তো প্রতিযোগিতা ছিল না এই অঞ্চলের যাত্রীদের যাতায়াতে। এখন পদ্মা সেতু হওয়ায় বিকল্প সৃষ্টি হল। এখন কেউ চাইলে কলাবাগান, কল্যাণপুর বা  গাবতলী থেকে সরাসরি বাসে করে দক্ষিণাঞ্চলে চলে যেতে পারছে। সেক্ষেত্রে ওই এলাকায় থাকেন, দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দা, এমন যাত্রীরা তো সদরঘাট আসতে চাইবেন না, এটাই স্বাভাবিক।

বিআইডব্লিউটিএ'র অঙ্গ সংগঠন ঢাকা নদী বন্দর নৌযান চলাচল ব্যবস্থাপনা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও এমভি প্রিন্স আওলাদ লঞ্চের মালিক প্রিন্স আওলাদ হোসেন বলেন, আমরা তো বাসের তুলনায় ভাড়া কম নিচ্ছি। চেষ্টা করছি যাত্রীদের সেবা দেওয়ার। আশা করছি পদ্মা সেতু হওয়ায় তেমন একটা প্রভাব পড়বে না নৌ-পথের যাত্রীদের ওপর। আমরা অনেকগুলো বিলাসবহুল লঞ্চ নামিয়েছি। আমরা আশাবাদী প্রতিযোগিতা হলেও খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হব না।

তবে, সাধারণ মানুষের চাওয়া নৌ-পথের ব্যবস্থাপনা সুন্দর হোক, বৃদ্ধি করা হোক নিরাপত্তা ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা। একই সঙ্গে, পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচলকারী বাসগুলোর ভাড়া কমিয়ে সর্ব সাধারনের চলাচলের উপযোগী করা হোক। এতে করে লঞ্চ মালিকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, তেমনি স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে সওয়ারী হয়ে বাড়ি যেতে পারবেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, ২৬ জুন, ২০২২
এমকে/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।