ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সিলেটে দুর্গম এলাকায় দুর্গতদের মুখে হাসি ফোটালো বসুন্ধরার ত্রাণ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫১ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২২
সিলেটে দুর্গম এলাকায় দুর্গতদের মুখে হাসি ফোটালো বসুন্ধরার ত্রাণ

সিলেট: তিন মেয়েকে নিয়ে ভিক্ষা করে জীবন সংসার সিলেটের কানাইঘাটের কান্দিপুরের তৈমুননেছার। স্বামীহীন সংসারে জীবন সংগ্রামে ভিক্ষাবৃত্তি করে অবতীর্ণ তিনি।

এ অবস্থায় ভয়াবহ বন্যায় হারিয়েছেন ঘরবাড়ি। মেয়েদের নিয়ে একটি দোকানে আশ্রিত এখন।                      

তিনি বলেন, মানুষের বাড়ি ভিক্ষা করে খাই। পয়লা বিসমিল্লাতে বসুন্ধরার ত্রাণ পাইছি। এখন ‘কয়দিন আল্লায় খাওয়াইবা’।   

নয়াতালুক গ্রামের ছুরতুন্নেছা বলেন, ‘পানিতে আমার ঘর দুয়ার ভাঙি নিছেগি। বেমারি মানুষ, স্বামীও বেমারি। ইবার কোনো ত্রাণ পাইছি না। আজ বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ পাইয়ার। যেইন দিতরা (দিচ্ছেন), তানোর (তার) লাগি নামাজ পড়িয়া দোয়া করমু। আল্লায় দুনিয়া-আখেরে সওয়াব দিতা। ’ 

বসুন্ধরার ত্রাণ নিতে মাঠে লাইনে দাঁড়িয়ে দুর্লভপুর গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব জাইদুন নেছাকে বাড়ির খবর জিজ্ঞেস করতেই কেঁদে ফেলে বলেন, সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। কোনোমতে এক বাড়িতে আশ্রিত আছি। একইভাবে বাড়ি ছাড়া উপজেলার ডাইরচরের আমিনা বেগম। বসুন্ধরার ত্রাণ নিতে এসে মুখে খুশি বিরাজ করছিল তাদের।  

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় চরম ক্ষতির সম্মুখীন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলাও। কিন্তু দুর্গম ও রাস্তাঘাট ভাঙা হওয়ায় ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না সেখানে।  

এ অবস্থায় শুক্রবার (২৪ জুন) দুপুর আড়াইটায় দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরার পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণ হাতে পেয়ে চোখের কোনে খুশির জল ফেলেন বানভাসিদের অনেকে।  

এদিন কানাইঘাট পৌর এলাকায় জামিয়া দারুল উলুম দারুল হাদিস মাদরাসা প্রাঙ্গণে বসুন্ধরার ত্রাণ নিতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিল। অবশ্য সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ত্রাণ বিতরণ সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয়।  

নারী-পুরুষরা লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ নিতে এসে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা ও নিজেদের জীবনকাহিনী তুলে ধরেন।    

নয়াতালুক গ্রামের হরুনা বিবি বলেন, বন্যার পানিতে ঘর ভেঙে নিয়েছে। এর আগে কেবল যৎসামান্য চিড়ামুড়ি পাইছি। এবার বসুন্ধরার ত্রাণ পেয়ে আমরা খুশি। তখন লাইনে দাঁড়ানো আরও কয়েকজন বৃদ্ধা বলেন, ‘যেইন দিরা, তান লাগি কুরআর খতম করে, নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করমু। দুনিয়া আখেরে আল্লাহ তানোর (তার) ভালা করতা’ 

মইছপুরের ষাটোর্ধ্ব হারিছ উদ্দিন বলেন, আমার ঘরে এখনও পানি। পরিবার নিয়ে অন্য খানে আছি। রুজি নাই, কেউ দিলে খাই। তবে পেটভরে খাওয়া দায়। বসুন্ধরার ত্রাণ পেয়ে অন্তত দুবেলা পেটভরে খেতে পারবো। একইভাবে চাউরা দক্ষিণ গ্রামের বাসিন্দা আইয়ব আলী, মইজপুরের ইন্তাজ আলী, দুর্লভপুর গ্রামের আলিম উদ্দিন বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণসামগ্রী পেয়ে চোখেমুখে ছিল হাসির ঝিলিক।  

এদিকে সিলেটে ত্রাণ সরবরাহ অব্যাহত রাখায় প্রশংসায় ভাসছে বসুন্ধরা গ্রুপ। দুর্গম এলাকায় দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণ পৌঁছে দিতে খুশি বসুন্ধরা গ্রুপের কর্মকর্তারাও।

শুক্রবার সিলেটে বন্যার্তদের আরও ৮ হাজার প্যাকেট ত্রাণ দেয় দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। এদিন সকালে বন্যার্তদের জন্য ৫ হাজার প্যাকেট ত্রাণ সিলেট জেলা প্রশাসনে হস্তান্তর করেন বসুন্ধরা গ্রুপের কর্মকর্তারা। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ করেন।  

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বসুন্ধরা গ্রুপের ফরেন অ্যাডভাইজর ড. সাজ্জাদ হায়দার, হেড অব পাবলিক রিলেশন অফিসার (পিআর) এবং সিলেটে ত্রাণ বিতরণ কমিটির সমন্বয়ক মেজর (অব.) শেখ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, পিআর শাখার কর্মকর্তা মেজর (অব.) জুবায়ের আহমেদ সরকার, স্কোয়ার্ডন লিডার (অব.) গোলাম মোস্তফা, লেফটেন্যান্ট (অব.) আব্দুল মান্নান, সিলেট জেলা প্রশাসনের এনডিসি পল্লব হোম দাস, বসুন্ধরা গ্রুপের এমডির সেক্রেটারি আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।  

ত্রাণসামগ্রী আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ শেষে জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, এতদিন সুরমার পানি বৃদ্ধি পেয়েছিল, এখন কুশিয়ার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে দেওয়া ত্রাণসামগ্রী, শুকনো খাবার ও নগদ টাকাও বিতরণ করা হয়েছে। বেসরকারি উদ্যোগে অনেকে খাবার ও ত্রাণ দিচ্ছেন এবার দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। যে ত্রাণসামগ্রী দিয়েছে তা আমরা গ্রহণ করেছি এবং যথাযথভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দেব।  

বসুন্ধরা গ্রুপের ফরেন অ্যাডভাইজার ড. সাজ্জাদ হায়দার জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ তো দিচ্ছেনই, নগদ টাকাও পাঠাচ্ছেন সব জায়গায়।  

বসুন্ধরা গ্রুপ সব সময় মানুষের পাশে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে এখানে ত্রাণ হস্তান্তর করা হলো। একটি গ্রুপ এরই মধ্যে কানাইঘাট চলে গেছে। আরেকটা গ্রুপ মৌলভীবাজার যাবে। সিলেটে আজকে ত্রাণ দিলাম, আরও দেওয়া হবে। আগামী শনিবার (২৫ জুন) প্রায় ১০ হাজার প্যাকেট ত্রাণ যাবে উত্তরবঙ্গে, কুড়িগ্রামে, নীলফামারীতে। এভাবে আমাদের চলতেই আছে ইনশাল্লাহ। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।  

এরপর কানাইঘাটে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- পৌর মেয়র মো. লুৎফুর রহমান, বসুন্ধরা গ্রুপের হেড অব পাবলিক রিলেশন অফিসার (পিআর) এবং সিলেটে ত্রাণ বিতরণ কমিটির সমন্বয়ক মেজর (অব.) শেখ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, পিআর শাখার কর্মকর্তা মেজর (অব.) জুবায়ের আহমেদ সরকার, স্কোয়ার্ডন লিডার (অব.) গোলাম মোস্তফা, লেফটেন্যান্ট (অব.) আব্দুল মান্নান, বসুন্ধরা গ্রুপের এমডির সেক্রেটারি আমিনুল ইসলাম, সেনা কর্মকর্তা মেজর আহমাদুর রহমান ও ক্যাপ্টেন শরীফ আহমেদসহ পদস্থ কর্মকর্তারা।  

আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিলেটের নিজস্ব প্রতিবেদক শাহ দিদার আলম নবেল, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম সিলেটের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট নাসির উদ্দিন, কালের কণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার তামজিদ হাসান, কালের কণ্ঠের ফটো সাংবাদিক আসকার আমিন রাব্বি।  

এর আগে প্রথম দফা বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে ২০ হাজার প্যাকেট ত্রাণ বিতরণ করে বসুন্ধরা গ্রুপ। এবার সিলেটে সাড়ে ৮ হাজার প্যাকেট ত্রাণ সরবরাহ করা হয়। এ নিয়ে দুই দফায় সিলেট বিভাগে ২৮ হাজার প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী পাঠায় বসুন্ধরা গ্রুপ।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৭ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২২
এনইউ/আরবি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।