ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন হরতালের সাহস নেই বিএনপির: পরিকল্পনামন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১১ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২২
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন হরতালের সাহস নেই বিএনপির: পরিকল্পনামন্ত্রী

ঢাকা: পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন বিএনপির হরতাল দেওয়ার সাহস নেই বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি। তিনি বলেন, কারণ জনগণই তাতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

এই পদ্মা সেতুর সঙ্গে জনগণের স্বপ্ন এবং অভিলাষ জড়িয়ে আছে।

শুক্রবার (২৪ জুন) সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত 'জাতীয় বাজেট এবং অর্থনৈতিক গতিধারা শীর্ষক এক সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। প্রস্তাবিত বাজেটের নানামুখী বিশ্লেষণের লক্ষ্যে সিজিএস রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এই সেমিনারের আয়োজন করে।  

সেমিনারে উপস্থিত বক্তারা বাজেটে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির প্রতি জোর দেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারপারসন এবং অর্থনীতিবিদ ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।

আলোচনায় আরও অংশ নেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, ইউনিভার্সাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান এবং এফবিসিসিআই-এর পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী, বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স এন্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সাবেক সভাপতি আবদুল হক, উইমেন এন্ট্রাপ্রেনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি এবং বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা নাসরিন ফাতেমা আউয়াল, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পারভেজ করিম আব্বাসি প্রমুখ।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী এবং সঞ্চালনা করেন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।  

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি বলেন, দেশ চালাতে সুশাসন অবশ্যই দরকার। তবে সবার আগে প্রয়োজন সাধারণ জনগণের চাহিদাকে মূল্যায়ন করা। তিনি বলেন, সুশাসনের রাস্তা অনেক দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় সরাসরি কেউ যেতে পারে না। পৃথিবীর বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশগুলোও বহু বছরের অপেক্ষার পর সুশাসন অর্জন করতে পেরেছে।  

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বক্তব্যের জবাবে মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে বিগত ১৫ বছর ধরে দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। এই সরকারই দেশের মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। মহামারির সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি ছিল বাংলাদেশের। এমনকি ভারত এবং চীনের চেয়েও এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ।  

বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজেটে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। কিন্তু এটি কেবল মাত্র একটি খসড়া বাজেট। এই বাজেট নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হবে। তারপর এটি সংসদে পাস হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান বিষয়ক একটি প্রতিবেদনের ফলাফল তুলে ধরে বলেন, পরিসংখ্যান সক্ষমতার দিক দিয়ে বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের স্কোর ৬০, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। বর্তমান সরকারকে অনির্বাচিত সরকার দাবি করে বলেন, একটি রাষ্ট্রে যখন রাজনীতিকরণ অর্থনীতিকে গ্রাস করে ফেলে তখনই সরকার কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে যায়। এতে জনগণের কথা বলার সুযোগ থাকে না।  

বাজেটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাজেটে যেখানে সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হওয়ার কথা ছিল, সেখানে এই খাতগুলো এখন অবহেলিত।  

আমীর খসরু আরও বলেন, এসব কার্যকলাপ আড়াল করতে জনগণের মনোজগতে ঢুকে কর্তৃত্বপরায়ণ সরকার উন্নয়নের গল্প শোনাতে থাকে। তিনি আরও বলেন, দেশে দুর্নীতি এত বেড়েছে যে, দেশে টাকা রাখার জায়গা হচ্ছে না। দেশের টাকা বাইরের দেশে চলে যাচ্ছে। পরিচালন ব্যয় উন্নয়ন ব্যয়ের দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে, যা এই কর্তৃত্ববাদী সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করছে।  

তিনি বলেন, এই সরকার পৃষ্ঠপোষকতার রাজনীতি করছে যেখানে দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। এর উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, বর্তমানে বিএনপির ৩৫ লাখ নেতাকর্মী জেলে আছে। তিনি আরও বলেন, সরকার বার বার নাশকতার কথা বলে। যমুনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিন আওয়ামী লীগ হরতাল ডেকেছিল। বিএনপি তো হরতাল ডাকে নি পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন। তাহলে নাশকতা কোথায় এখানে? 

সেমিনারে মুখ্য আলোচক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারপারসন এবং অর্থনীতিবিদ ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, কার্যকরী গণতন্ত্রের জন্য জনপরিসরে অর্থনৈতিক আলোচনা বাঞ্ছনীয়। তিনি ইতিহাসের প্রসঙ্গ টেনে উল্লেখ করেন, মূল্যস্থীতিকে কেবল মাত্র সংখ্যা দিয়ে বিচার করলে হবে না। এর সঙ্গে জনগণের জীবন-যাত্রার ব্যয়ের প্রসঙ্গও জড়িত।  

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তাজউদ্দীন আহমেদ ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছিলেন, যার মধ্যে ৬০০ কোটি টাকা ছিল উন্নয়ন ব্যয় এবং ১৮৬ কোটি টাকা ছিল পরিচালন ব্যয়। তিনি বলেন, বর্তমান বাজেটে আমরা ঠিক এর বিপরীত চিত্র দেখতে পাই।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, বর্তমানে দেশে রাজনীতি অর্থনীতিকে ছাপিয়ে উঠেছে। ফলে বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট হচ্ছে না। এমনকি বছরের নির্দিষ্ট এই সময়টুকু ছাড়া সারাবছর বাজেট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না। সম্পূরক বাজেট নিয়ে কেউ কথা বলছে না, যেটি কিনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  

তিনি বলেন, পদ্মাসেতুর টোলের দায়িত্ব বাইরের দেশের একটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে জনগণের আয়ের একটি বড় অংশ দেশের বাইরে ডলারে চলে যাবে। এসব বিষয় নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আলোচনা করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, চার বছর পর এসে নির্বাচনের আগের বছরেই সার্বজনীন পেনশনের কথা তোলা হচ্ছে। এসব ঘটনা বাজেটে ধারাবাহিকতা না থাকাকেই প্রমাণ করে।  

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, যেকোনো সংকট সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখায়। বাংলাদেশ বর্তমানে এক সংকটকাল অতিক্রম করছে। এজন্য আয় বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে লোকবল বাড়াতে হবে। এর মাধ্যমে আমরা আরও বেশি রাজস্ব আয় করতে পারি।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। তিনি শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনের ওপর জোর দিয়ে বলেন, শিক্ষাব্যবস্থাকে সার্টিফিকেটমুখী না করে বাস্তবমুখী করতে হবে। তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)- এরও সংস্কার দরকার।  

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স এন্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সাবেক সভাপতি আবদুল হক বলেন, দেশে অপরিকল্পিত উন্নয়ন হচ্ছে। দেশে রাজস্ব ব্যয় বাড়ছে, কিন্তু আয় কমছে। এই ব্যয় কমানোর জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। সেই সঙ্গে রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাব।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, জুন ২৪ ২০২২
টিআর/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।