ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পদ্মা সেতু: সুদিন আসবে বাগেরহাটের পর্যটনে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৫ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২২
পদ্মা সেতু: সুদিন আসবে বাগেরহাটের পর্যটনে

বাগেরহাট: অপার সম্ভাবনার পদ্মা সেতু নিয়ে স্বপ্ন বুনছে দেশবাসী। স্বপ্ন দেখছে দুই বিশ্ব ঐতিহ্যের জেলা বাগেরহাটের মানুষও।

সেতু উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে বাগেরহাটের পর্যটন শিল্পে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে পর্যটন খাতে। কর্মসংস্থান হবে কয়েক হাজার মানুষের।  

২৫ জুন জাতির স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ২৬ জুন সকাল ৬টা থেকে সরকার নির্ধারিত টোল প্রদান সাপেক্ষে সেতু পারাপার হওয়া যাবে।

ইনেস্কো ঘোষিত মসজিদের শহর বাগেরহাটের ১৭ স্থাপনা ও সুন্দরবন ঘিরে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান। সেতু চালুর ফলে দিনে দিনে ঘুরে যাওয়ার সুবিধা সৃষ্টি হওয়ায় দর্শনার্থী বৃদ্ধি পাবে এই অঞ্চলে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন জেলার সরকারি-বেসরকারি পর্যটন খাতের আয় বাড়বে।  

জেলা প্রশাসন ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যের মধ্যে দুটিই অবস্থিত বাগেরহাটে। একদিকে সুন্দরবন অপরদিকে রয়েছে অপরদিকে ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মজসিদসহ ইউনেস্কো ঘোষিত ১৭টি স্থাপনা। ২০২১-২২ অর্থবছরে সুন্দরবনের বাগেরহাট অংশে পর্যটক এসেছেন ১ লক্ষ ২০ হাজার জন। এখান থেকে সরকারের রাজস্ব আয় এসেছে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা। একই সময়ে ষাটগম্বুজ মসজিদে এসেছেন ১ লক্ষ ৮০ হাজার দর্শনার্থী। রাজস্ব আয় হয়েছে ৬০ লাখ টাকা।

সুন্দরবন টুরিস্ট ক্লাবের শেখ শাকির হোসেন বলেন, বাগেরহাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য যাতায়াতের প্রধান ব্যবস্থা হচ্ছে সড়ক পথ। আর এই সড়ক পথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় দূর্ভোগে পড়তে হতো মানুষদের। তবে পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে সেই চিরচেনা রূপ একেবারেই পাল্টে যাবে। ঘুরে দাঁড়াবে সম্ভাবনাময় বাগেরহাটের পর্যটন শিল্প।

মোংলার ট্রলার ব্যবসায়ী রুবেল হোসেন বলেন, সুন্দরবনের ইকো টুরিজমকেন্দ্র ও বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্র করমজলকে কেন্দ্র করে আমাদের ব্যবসা। মোংলা থেকে আধাঘণ্টা ট্রলার চালিয়ে করমজল যাওয়া যায়। কিন্তু সড়ক পথে ভোগান্তি থাকার কারণে দর্শনার্থী কম আসে। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আশাকরি সুন্দরবনে দর্শনার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। আমাদের আয়ও বৃদ্ধি পাবে।

মোংলা জয়মনির ঘোল এলাকার বিজন কুমার রায় বলেন, সুন্দরবনের নিকটেই আমাদের বসবাস। যার ফলে বন কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের সঙ্গে আমাদের অনেকেই জড়িত। পদ্মা সেতুর দ্বার উন্মোচনের পাশাপাশি সুন্দবনের বিভিন্ন পয়েন্টের অবকাঠামো ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি হলে আমাদেরও ব্যবসা বাণিজ্য ভালো হবে, দর্শনার্থীরাও এসে বেশি আনন্দ পাবেন।

স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড ও ফটোগ্রাফার সোহেল হোসেন বলেন, ষাটগম্বুজ মসজিদ ও সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। বাগেরহাটে যে পরিমাণ দর্শনার্থী বর্তমানে ঘুরতে আসেন, পদ্মা সেতু হলে এই সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। দর্শনার্থী বাড়লে গাইডের প্রয়োজনীয়তাও বাড়বে। ফলে অনেক বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

খানজাহান আলী (র.) মাজার এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান বলেন, পর্যটকদের আনাগোনা কম থাকে  বলে হোটেল ব্যবসায়ীদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। পদ্মা সেতু খুলে দিলে, বছরজুড়ে পর্যটকদের আগমন ঘটবে বাগেরহাটে। চাপ থাকবে হোটেল-মোটেলগুলোতেও। নতুন নতুন হোটেল-মোটেল তৈরি হবে ফলে বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগও।

ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আক্তারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, সেতু চালু হলে বাগেরহাটসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে সমৃদ্ধি ফিরে আসবে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বেকারত্ব কমবে। কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে অগ্রগতি হবে। এখানে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে।

বাগেরহাট প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাস্টোডিয়ান যায়েদ জানান, পদ্মা সেতু যে সম্ভাবনা দেখাচ্ছে তাতে দর্শনার্থী সংখ্যা ধারণার চেয়েও বেশি হবে। ফলে স্থানীয়রা দর্শনার্থীদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা (হোম স্টে) করতে পারলে বেশ লাভবান হবে। এছাড়া দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে ষাটগম্বুজের সামনের বিশ্রামাগার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি মসজিদ সংলগ্ন ঘোড়াদিঘিকে নান্দনিক করতে ওয়াক ওয়ে তৈরি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পর্যটন করপোরেশনের অর্থায়নে ১২ কোটি ৭৭ লাখ ৬ হাজার টাকা ব্যয়ে খানজাহান আলী (রহ) এর মাজার মোড়ে একটি তিন তারকা মানের হোটেল নির্মাণের কাজ চলছে। যার প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর ফলে এই সংখ্যা কয়েকগুন বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সুন্দরবনকে আরও বেশি পর্যটনবান্ধব করে গড়ে তুলতে সুন্দরবনের আলীবান্ধা ও আন্ধারমানিক দুটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে।  
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. আজিজুর রহমান বলেন, বাগেরহাটে  অসংখ্য দর্শনীয় স্থাপনা রয়েছে। এসবের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি পদ্মা সেতুর হাত ধরে বাগেরহাটের পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে। এই খাতে আর্থিক উন্নতি ঘটবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১২০১ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২২
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।