ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

কুড়িগ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪০ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২২
কুড়িগ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

কুড়িগ্রাম: ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকায় কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেলেও জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে ৪৯টি ইউনিয়নে ৮৭ হাজার ২৩২ জন মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন।

বন্যা পরিস্থিতিতে কুড়িগ্রামে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৮৫টি মেডিক্যাল টিম, নয়টি উপজেলায় একটি করে মনিটরিং টিম ও সিভিল সার্জন অফিসে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে ১৮টি ভেটেনারি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। ১০ হাজার ৮৯৪ হেক্টর জমির ধানসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে। বন্যায় প্রাণিসম্পদের সাড়ে ১১ লাখ টাকা ও মৎস্য বিভাগের ৫৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।  

রোববার (১৯ জুন) দুপুরে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের যমুনা সরকারপাড়া গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে মাকসুদা জান্নাত (১১) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশুটি ওই গ্রামের মাঈদুল ইসলামের মেয়ে।

রোববার সন্ধ্যা ৬টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৪১ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৩৫ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বাংলানিউজকে জানান, রোববার থেকে উপজেলাগুলোর ক্ষয়ক্ষতির বিবরণী নেওয়া শুরু করা হয়েছে। রোববার সকালের তথ্য অনুযায়ী ৪৯টি ইউনিয়নে ৮৭ হাজার ২৩২ জন মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।  

কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় বাংলানিউজকে জানান, বন্যায় এখন পর্যন্ত ৫৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ৭৪২টি পুকুরের ৭০৫ জন মৎস্য চাষির ১১৫ মেটিক টন মাছ ভেসে গেছে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল হাই সরকার বাংলানিউজকে জানান, বন্যায় প্রায় অর্ধশতাধিক মুরগি মারা গেছে। এছাড়া গো-চারণভূমি, খড় ও দানাদার শষ্য তলিয়ে যাওয়ায় ১১ লাখ ৫২ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ১৮টি ভেটেনারি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রশীদ বাংলানিউজকে জানান, এখন পর্যন্ত বন্যায় ১০ হাজার ৮৯৪ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে কর্মকর্তারা পরামর্শ দেওয়াসহ তথ্য সংগ্রহ করছেন।

কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর-এ-মোর্শেদ বাংলানিউজকে জানান, বন্যার্তদের সহয়োগিতায় মেডিক্যাল টিমের সদস্যরা বন্যাকবলিত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দিয়ে সহযোগিতা করছেন।  

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে জানান, নাগেশ্বরীতে বেড়িবাঁধের ৫০ মিটার ওয়াস আউট হয়ে গেছে। এছাড়া দুধকুমর নদীর কালিগঞ্জ, বামনডাঙ্গা ও ধাউরারকুটি এলাকায় বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ এলাকায় ৪৮ কিলোমিটার বাঁধ মেরামতের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে কাজ শুরু করা হবে। বন্যার পানি আরও তিন দিন বাড়তি থাকবে। এরপর কমে নিম্নগামী হবে।

কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রুহুল আমিন জানান, বন্যায় দুর্গম চরাঞ্চলে যাতে চুরি ও ডাকাতি না হয় এজন্য বিচ্ছিন্ন এলাকায় পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। কোথাও ত্রাণ দিলে পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে। এছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় প্রচার-প্রচারণা ও উঠান বৈঠক করা হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যার প্রস্তুতি হিসেবে জেলা প্রশাসক দপ্তরে একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আজ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সব দপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতিদিনের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য দিতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০ লাখ টাকা ও ৪০৭ মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে। এছাড়া আরও ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও ২০ লাখ টাকার চাহিদা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২২
এফইএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।