হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জে কালনী, কুশিয়ারা ও খোয়াই নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। খানিক উজানের সুনামগঞ্জ ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ায় বিষয়টিকে ভীতিকর মনে করছে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
ইতোমধ্যে খবর এসেছে— জেলার আজমিরীগঞ্জ, লাখাই ও নবীগঞ্জ উপজেলার কিছু এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
শুক্রবার (১৭ জুন) দিনগত রাতে পাউবো হবিগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ্ নেওয়াজ তালুকদার জানান, সে সময় পর্যন্ত জেলার প্রধান তিন নদী কালনী, কুশিয়ারা ও খোয়াই-এর পানি বিপৎসীমার নিচে ছিল। তবে যে হারে পানি বাড়ছিল তা অত্যন্ত ভীতিকর বলেও তিনি মন্তব্য করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্প, বদলপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর ও অজয়পুর গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এছাড়া নবীগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর আশপাশে কামালপুর, চিক্কা, কেশরপাড়া, সুনামপুর, সুরিখাল ও আমনপুর- এ ছয়টি গ্রামের বাড়িগুলো জলে নিমজ্জিত। লাখাই উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোড়াকড়ি ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর, সুবিদপুর, ফুলবাড়িয়া, বামৈ ইউনিয়নের পূর্ব ভাদিকারা, পশ্চিম ভাদিকারা, নোয়াগাঁও এবং মুড়িয়াউক ইউনিয়নের সাতাউক এলাকার প্রায় দেড়শ’ হেক্টর আউশ, আমন ধানের জমি।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কৃষক ওয়ারিশ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, সধারণত সুনামগঞ্জে বন্যা হলে কুশিয়ারা এবং কালনী নদী দিয়ে সেখানকার পানি প্রবাহিত হয়। এবার সেদিকে বেশি পানি হওয়ায় নদীগুলোতে স্রোত অনেক বেশি। আজমিরীগঞ্জে বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করছে। আর দুইদিন এভাবে চলতে থাকলে হাওরাঞ্চল পুরোপুরিভাবে প্লাবিত হয়ে যেতে পারে।
নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আকুল মিয়া জানান, কুশিয়ারা নদীর পানি ব্যাপক হারে বাড়ছে। সেদিকের মাধবপুর, পশ্চিম মাধবপুর, গালিমপুর গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। অনেকের ঘর-বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় মানুষ পানিবন্দি অবস্থায়। যে কোনো সময় কুশিয়ারা ঘোঁষা বিবিয়ানা ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে পানি উঠতে পারে।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কুশিয়ারা নদীতে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পানির পরিমাণ ছিল ৭.৯৫ মিটার, যা বিপৎসীমার কিছুটা নীচে। কিন্তু দীঘলবাক ডাইক উপচে জনপদে পানি প্রবেশ করছে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আড়াই হাজার খালি বস্তা পাঠালেও সেখানে কোনো মাটি পাওয়া যাচ্ছে না। সেজন্য বস্তা ভরে ফেলা যাচ্ছে না। পানির গতি থাকায় পানিও আটকানো যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান জানিয়েছেন, উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে তিনি ত্রাণ সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে জরুরী আলোচনা করেছেন। সব উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সভা করা হয়েছে। শুকনো খাবার মজুদ রাখা এবং উচুস্থানগুলো তৈরি রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারও খাবার এবং ওষুধ সহায়তা লাগলে ৩৩৩-এ কল দেওয়ার জন্য ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪২ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২২
এসএ