ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আশুলিয়ায় ’কুকুরের মাংস দিয়ে বিরিয়ানি বিক্রি’ শুধুই গুজব

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৬ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২২
আশুলিয়ায় ’কুকুরের মাংস দিয়ে বিরিয়ানি বিক্রি’ শুধুই গুজব

সাভার (ঢাকা): সাভারের আশুলিয়ায় প্রায় এক মাস আগে ‘কুকুরের মাংস দিয়ে বিরিয়ানি’ বিক্রির একটি সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে। তখন উৎসুক জনরোষের মুখে নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই দোকানের এক মালিককে সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর মামলা দেয় পুলিশ।

দোকানের মাংসের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসের পরীক্ষাগারে। দেশের অনেক গণমাধ্যমও ফলাও করে প্রচার করে সংবাদটি।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার প্রায় এক মাসের মাথায় জট খুলেছে রহস্যের। সোমবার (১৩ জুন) রাতে সাভার উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাজেদুল ইসলাম পরীক্ষাগারে পাঠানো নমুনাটি 'কুকুরের মাংস নয়' বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) ও আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুব্রত রায় একই বিষয় নিশ্চিত করেছেন। তবে ততদিনে সম্মানহানি ও চরম আর্থিক লোকসানে ব্যবসা বন্ধের উপক্রম হয়েছে ভুক্তভোগী আল্লারদান বিরানি হাউজের মালিক পক্ষের।

এদিকে বৃহস্পতিবার (৯ জুন) প্রাণীসম্পদ অফিসের প্রতিবেদনে পাঠানো নমুনাটি ‘কুকুরের মাংস নয়’ এমন তথ্য পেয়ে আবারও ‘আল্লার দান বিরিয়ানি হাউজ-৫’ দীর্ঘ একমাস পর খোলা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৪ জুন) সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, আগের মতোই স্বভাবিকভাবে দোকানে ক্রেতা আসছেন। তবে দোকান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আগের তুলনায় ক্রেতা অনেক কমে গেছে। অনেকেই অনেক কথা বলছেন।

অভিযোগ ওঠা আল্লাহর দান বিরিয়ানি হাউজের একটি শাখার স্বত্তাধিকারী সায়েদ হোসেন বিল্লাল বলেন, আশুলিয়ার নরসিংহপুর, কাঠগড়া ও জিরাবো এলাকায় তিনটি এবং কাশিমপুর এলাকায় দুটিসহ আমাদের মোট সাতটি বিরিয়ানির দোকান আছে। দীর্ঘদিন ধরেই আমরা সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছি। প্রতিটি দোকানে সর্বনিম্ন ৩০-৪০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। কিন্তু গত ১৫ মে নরসিংহপুর এলাকার আল্লাহর দান বিরিয়ানি হাউজ-৫ শাখায় একটি চক্র ‘কুকুরের মাংস দিয়ে কাচ্চি বিরিয়ানি’ বিক্রি করছি এমন প্রপাগান্ডা ছড়ায়। এসময় উৎসুক জনতার চাপে অভিযোগ ছাড়াই আমার অংশীদার রাজীব হোসেনকে আটক করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। আমার দোকানের বিরিয়ানি ও মাংসের নমুনাও সংগ্রহ করে নিয়ে যায় তারা। পরে ৫৪ ধারায় মামলা দায়েরের পর তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। পরদিন রাজীবকে জামিনে মুক্ত করিয়ে আনি।

তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার (৯ জুন) রাতে জানতে পেরেছি মাংসের যে নমুনা নেওয়া হয়েছিল তার প্রতিবেদন এসেছে। তাাতে কুকুরের মাংসের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন আছে। তবে প্রতিবেদন হাতে পেলে যারা আমাদের নামে অপপ্রচার চালিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। কারণ মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর কারণে নরসিংহপুরের আল্লাহর দান বিরিয়ানি হাউজ-৫ এবং কাশিমপুরের দুটি দোকান বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। এতে আমার প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক সুব্রত রায় ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, আলামত হিসেবে আল্লাহর দান বিরিয়ানি হাউজ-৫ হোটেল থেকে মাংস জব্দ করে পরীক্ষার জন্য উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসে পাঠানো হয়েছিল। সেই অফিসের প্রতিবেদন পেয়েছি। এতে কুকুরের মাংসের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ রয়েছে। পরীক্ষার এই ফলাফল অনুযায়ী আমরা আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আবেদন করব।

সাভার উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাজেদুল ইসলাম জানান, পুলিশ মাংস পরীক্ষার জন্য আমাদেরকে ‘নমুনা’ দিয়েছিল। যা ঢাকায় আমাদের ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছিলাম। সেই পরীক্ষার ফলাপল সোমবার আমাদের হাতে এসেছে। তাতে উল্লেখ রয়েছে যে, পাঠানো নমুনাটি কুকুরের মাংসের নয়। যদিও সেটি কীসের মাংস সেটা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়নি। তবে কুকুরের মাংস নয় এটা নিশ্চিত।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৩ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২২
এসএফ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।