ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কুড়িগ্রামে পাহাড়ি ঢলে ৩৫ গ্রাম প্লাবিত

ফজলে ইলাহী স্বপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৪ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২২
কুড়িগ্রামে পাহাড়ি ঢলে ৩৫ গ্রাম প্লাবিত

কুড়িগ্রাম: ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের সবকটি নদ-নদীর পানি বেড়ে গেছে। ঢলের পানিতে নিচু এলাকাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে জেলার রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলায় ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

সোমবার (১৩ জুন) কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে ৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ কুড়িগ্রামের সবকটি সদ-নদীর পানি বেড়ে গেছে। তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা থাকলেও অন্য নদ-নদীর সেই আশঙ্কা আপাতত নেই বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, রৌমারী উপজেলার ২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি মাধ্যমিক বিদ্যলয়ে পানি ওঠায় পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। নিচু এলাকার প্রায় ৬০ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষজন।  

রৌমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ১৫টি, দাঁতভাঙা ইউনিয়নের পাঁচটি, যাদুরচর ইউনিয়নের সাতটি, শৌলমারী ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম ও রাজিবপুর উপজেলার তিনটি গ্রাম ঢলের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে রয়েছে। নিমজ্জিত হয়েছে প্রায় ২০০ হেক্টর জমির পাট, তিলসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত।

রৌমারী উপজেলার চর নতুন বন্দর স্থলবন্দরটিও পানিতে তলিয়ে থাকায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। রৌমারী-ইজলামারী ও কর্তিমারী-বড়াইবাড়ি পাকা সড়ক পানিতে নিমজ্জিত থাকায় উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।  

রৌমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, কয়েকদিনের টানা বর্ষণে আমার ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। প্লাবিত এলাকায় খাদ্য, পশুখাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। আরও কয়েকদিন এ অবস্থা থাকলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে।

রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সরবেশ আলী বাংলানিউজকে বলেন, বানের পানিতে তিল, আউস ও সবজিসহ বেশ কিছু ফসলের ক্ষতি হয়েছে। রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়া মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি।

রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ৩৫ হেক্টর পাট আংশিক, আউস ধান ৩০ হেক্টর, শাকসবজি পাঁচ হেক্টর ও প্রায় তিন হেক্টর তিল ক্ষেত তলিয়ে গেছে।

রৌমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, চরইটালুকান্দা, নামা বারবান্ধা ও পাহাড়তলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ উপজেলার ২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পানি ওঠায় সাময়িকভাবে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

রৌমারী উপজেলা প্রকৌশলী যুবায়ের হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, রৌমারীর ২২ কিলোমিটার পাকা রাস্তা ও ৩৫ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া কয়েকটি কালভার্ট ও বাঁশের সাঁকো পানির নিচে রয়েছে। পানি কমলে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত হিসাব নির্ণয় করা যাবে।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম রাসেল বাংলানিউজকে জানান, বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা হিসেবে তিন লাখ টাকার শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের কাজ চলছে। ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ের পর পুনর্বাসন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২২
এফইএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।