ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ইট দেওয়ার নামে আ. লীগ নেতার প্রতারণা, নিঃস্ব দেড়শ পরিবার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৯ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২২
ইট দেওয়ার নামে আ. লীগ নেতার প্রতারণা, নিঃস্ব দেড়শ পরিবার

যশোর: যশোরের কেশবপুরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে 'বিশেষ ছাড়ে' নিজের ভাটার ইট দেওয়ার নামে প্রতরণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে নিঃস্ব হয়েছেন দেড় শতাধিক দিনমজুর-প্রবাসী পরিবার।

রোববার (১২ জুন) বিকেলে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেছেন তারা।
ভুক্তভোগীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে তৌহিদুর রহমান বলেন, কেশবপুর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিক নিজের রিপন ব্রিকস থেকে 'বিশেষ ছাড়ে' স্বল্প মূল্যে ইট বিক্রির নামে ফাঁদে ফেলে তাদের কাছ থেকে অগ্রীম ৪ কোটি টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।

২০১৮ সাল থেকে রিপন ব্রিকস প্রতি বছর স্বল্পমূল্যে ইট বিক্রির কথা বলে বিভিন্ন ধাপে শতাধিক মানুষের কাছ থেকে ৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মূলত স্বল্পমূল্যে ইট বিক্রির নামে তারা প্রতারণার ফাঁদ পাতেন। এই প্রতারণার মূল হোতা রিপন ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী আবু বক্কর ছিদ্দিক। তার কাছে ভোক্তভোগীরা ইট বা টাকা ফেরত চাইতে গেলে তার স্থানীয় ক্যাডার দিয়ে হুমকি ও থানায় নিয়ে মামলা দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, পুলিশ ফাঁড়ি বা থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও ভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়াতে ভুক্তভোগীরা কোনো  প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।

ভুক্তভোগী তৌহিদুর রহমান জানান, ২০১৮ সাল থেকে আবু বক্কর ছিদ্দিক রিপন ব্রিকস্ থেকে স্বল্পমূল্যে ইট বিক্রির নামে ফাঁদ পাতেন এবং একটি চক্র গড়ে তোলেন। চক্রটির কাজ হলো স্থানীয় প্রবাসী, চাকরিজীবী ও দিনমজুরদের কাছে যেয়ে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ইট নেওয়ার আগ্রহ সৃষ্টি করা। চক্রের সদস্য পারভেজ, কামরুজ্জামান শিশু, মোশারফ গাজীসহ ৫-৬ জনকে এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে ও তাদের দিয়ে চাপ সৃষ্টি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক ইট কিনতে রাজি করায়। তাদের কথা মতো ভাটার ম্যানেজারের কাছে দু’দফায় সাড়ে চার লাখ টাকা আমি জমা দেই। এ বিষয়ে আমাদের রশিদও দেওয়া হয়। কিন্তু মৌসুমে আমরা ইট সংগ্রহ করতে গেলে বলে, ‘এখনো পোড়ানো হয়নি, ইট তৈরি হলে দেওয়া হবে। ’ অথচ, মৌসুমে বাইরে বিভিন্ন ক্রেতার কাছে তারা ঠিকই ইট বিক্রি করেছেন। বিষয়টি আমরা জেনে ভাটা মালিক আবু বক্কর ছিদ্দিকের কাছে গেলে তিনি টালবাহানা শুরু করেন। বিদেশ থেকে দেশে এসে নিজের সঞ্চয় করা এতগুলো টাকা আত্মসাৎ করে নেওয়ায় আমি অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছি। আমার মতো অনেকই এই ইটভাটার প্রতারণার শিকার।

স্থানীয় এক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, শিক্ষকতা করে নির্মাণের জন্য অল্প অল্প করে টাকা সঞ্চয় করেছিলাম। স্থানীয় রিপন ব্রিকস্ কাছে ৫ লক্ষাধিক টাকা জমা দেই। কিন্তু ইটও নেয়নি, টাকাও দেয়নি। টাকা চাইতে গেলে বলে সামনের বছরে দেব। এমন করে তিন বছর ঘুরালেও তারা আমার টাকা বা ইট কোনটাই দিচ্ছে না।

সাতবাড়িয়ার পাঁচানি এলাকার ভুক্তভোগী আব্দুস সোবহান বলেন, ইট দেওয়ার জন্য আমার কাছ থেকে তার এজেন্টরা তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়েছে। এখন ইটও দিচ্ছে না, টাকাও দিচ্ছে না। টাকা চাইতে গেলে ছেলের সন্ত্রাসী বাহিনী ও পুলিশ দিয়ে মামলা দেওয়ার ভয়ভীতি দেখান। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি আমাদের টাকাগুলো ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিক।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইটভাটা মালিক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমরা কারো সঙ্গে প্রতারণা করছি না, বা কাউকে হুমকি-ধামকিও দিচ্ছি না। বর্তমানে ইটভাটা বন্ধ রয়েছে। সবার ইট দেওয়া হবে।

আর কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, রিপন ব্রিকসের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে আমরা ইটাভাটা মালিককে নোটিশ করেছি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। সত্যতা মিললে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২২
ইউজি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।