ঢাকা, বুধবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সবজি খাতে শতকোটি টাকা মধ্যস্বত্বভোগীর পকেটে

বদরুল আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১২ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২২
সবজি খাতে শতকোটি টাকা মধ্যস্বত্বভোগীর পকেটে

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের বাহুবলে পরিবেশবান্ধব কৌশলে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের মডেল ইউনিয়ন পাঁচ নম্বর লামাতাশি। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে এ প্রকল্পে ২৫টি দলের ৫০০ জন কৃষক পাইকারি ক্রেতাদের কাছে চিচিঙ্গা বিক্রি করেছেন সর্বনিম্ন ৭ টাকা কেজিতে।

অথচ সেগুলোই বাজারে উঠে কেজি প্রতি দাম হয়ে যাচ্ছে ৫০ টাকা।

একইভাবে সেখানে উৎপাদিত ঝিঙে, কুমড়া, বেগুনসহ নানা ধরণের সবজি পাইকারি ব্যবসায়ীরা অল্প দামে কিনে বাজারে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন কয়েকগুণ বেশিতে। এতে মুনাফার বড় অংশই যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীর পকেটে। আর ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক এবং খুচরা বিক্রেতারা। শুধু এখানেই নয়, এ চিত্র দেখা যায় হবিগঞ্জ জেলার আরও নয়টি উপজেলায়।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেলে পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের জমিগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, পাইকাররা প্রতি কেজি চিচিঙ্গা ৭ টাকা, ঝিঙে ২০ টাকা, বেগুন ২০ টাকা এবং মাঝারি আকারের কুমড়া ক্রয় করছেন প্রতিটি ১৫ টাকায়। পরে উপজেলার মিরপুর বাজারের আড়তে গিয়ে দেখা যায়, খুচরা বিক্রেতাদের কাছে একই চিচিঙ্গা ২০ টাকা, ঝিঙে ৩০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা এবং মাঝারি আকারের কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।

অন্যদিকে জেলার খুচরা বাজারগুলোতে চিচিঙ্গা, ঝিঙে ও বেগুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং মাঝারি আকারের কুমড়া ৫০ টাকায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেবে, রবি ও খরিপ মৌসুম মিলিয়ে জেলায় প্রতি বছর সবজি আবাদ হয় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন অন্তত ১৬ মেট্রিক টন। সেই হিসেবে জেলায় বছরে সবজির উৎপাদন আনুমানিক ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। আর জমি থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত সবজির দামের ফারাকের কারণে বছরে কয়েকশ' কোটি টাকা চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগীর পকেটে।

বাহুবলের লামাতাশী এলাকার কৃষক দুলাল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, তিনি ৪০ শতক জমিতে ঝিঙে ও চিচিঙ্গা চাষ করেছিলেন। বুধবার (৮ জুন) তিনি চিচিঙ্গা বিক্রি করেছেন ৭ টাকা এবং ঝিঙে ২২ টাকায়। এভাবে বিক্রি হতে থাকলে জমি থেকে খরচের টাকাও উঠবে না।

একইভাবে লোকসানের কথা জানিয়েছেন পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের কৃষক আরফান আলী, আজাদ মিয়া, ছাদেক মিয়া, তাহির মিয়া, আবুল মন্নাফ, আব্দুল কাইয়ুম ও জুয়েল মিয়াসহ আরও কয়েকজন।

তারা বলেন, পাইকারি ক্রেতারা একেক দিন একেক দাম নির্ধারণ করে আমাদের কাছে সবজি ক্রয় করতে আসেন। তাদের নির্ধারিত দামে সবজি না বিক্রি করলে তারা ক্রয় করেন না। তাই আমরা বাধ্য হয়েই অল্পদামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হই।

আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হিলালপুর গ্রামের কৃষক ওয়ারিশ মিয়া বলেন, পাইকারি ক্রেতাদের সিন্ডিকেটের কারণে সবজি চাষিরা প্রকৃত মূল্য পাচ্ছেন না। এজন্য তার এলাকার অনেকেই সবজি চাষ বাদ দিয়ে অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরীবাজার এলাকার সবজি বিক্রেতা নূরুল আমীন বলেন, পাইকারি বিক্রেতারা প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানের চাষিদের কাছ থেকে সবজি আনেন। তাদের কাছ থেকে চিচিঙ্গা ২০ টাকা, ঝিঙে ৩০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা এবং মাঝারি আকারের কুমড়া কিনতে হয় ৩০ টাকায়। যানবাহন খরচ ও দোকানভাড়া মিলিয়ে অনেক খরচের পর আমরা এগুলো ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে বাধ্য হই।

হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ আধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আশেক পারভেজ বাংলানিউজকে জানান, জেলায় প্রতি বছর সবজি আবাদ হয় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টর জমিতে কমপক্ষে ১৬ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন হয়। সেই হিসেবে জেলায় বছরে সবজি উৎপাদন হয় আনুমানিক ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি বিভাগের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী চাষিদের বিষমুক্ত সবজি চাষের জন্য নানা প্রক্রিয়া সেখানো হয়েছে। এখনও প্রশিক্ষণ চলছে। জৈব সারসহ ক্ষতিকর কীট দমন এবং উপকারী কীট বাঁচিয়ে রাখতে কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক মাঠে থাকছে। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন এবং সাধারণ ক্রেতারা অতিরিক্ত মূল্য গুণছেন। এক্ষেত্রে কৃষকদের সংগঠিত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৭ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।