ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মেহেরপুরে মার্কেটের দোকান উচ্ছেদ, ব্যবসীয়দের বিক্ষোভ-ধর্মঘট

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৬ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০২২
মেহেরপুরে মার্কেটের দোকান উচ্ছেদ, ব্যবসীয়দের বিক্ষোভ-ধর্মঘট

মেহেরপুর: মেহেরপুর কোর্ট মসজিদ মার্কেট উচ্ছেদকে কেন্দ্রে করে ব্যবসায়ীরা ও জেলা প্রশাসন এখন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। কোনো নোটিশ না দিয়েই জেলা প্রশাসনের এ উচ্ছেদ অভিযান চালছে বলে অভিযোগ করেছেন দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা।

মঙ্গলবার (৭ জুন) সকাল ৯টার দিকে মেহেরপুর কোর্ট মসজিদ মার্কেট উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা সহকারী কমশিনার (ভূমি) ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া শেষ করেই এ অভিযান চালানো হচ্ছে। মেহেরপুর জেলা মডেল মসজিদের সামনে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ২৬টি দোকানের এ মার্কেটটি উচ্ছেদ করা হয়েছে।

মার্কেটের ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের মালিক আকছেদ আলী জানান, জেলা প্রশাসন থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে জেলা প্রশাসকের কোনো সিল বা সাক্ষর ছিল না। যে কারণে আমরাও তেমন গুরুত্ব দেইনি।

পলাশ এন্টারপ্রাইজের মালিক মিনারুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসক এ মার্কেটটি উচ্ছেদ করে অনেক পরিবারের সদস্যের পেটে লাথি মারলেন। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে আমাদের পথে বসা ছাড়া উপায় রইলো না।

আসিফ পেপার্সের মালিক মাহমুদুর রহমান আসিফ বলেন, আমরা এখন যাবো কোথায়? জেলা প্রশাসক আমাদের বিকল্প কোনো কিছুর ব্যবস্থা না করেই উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছেন। আমরা এ জন্য আইনি প্রক্রিয়ায় যাবো।

বাজার কমিটির সঙ্গে জেলা প্রশাসকের কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। সেখানে মসজিদের প্রবেশদারের তিনটি দোকান ভাঙার পরিকল্পনা হয়। কিন্তু সেই পরিকল্পনার কোনো সুরাহা করে হঠাৎ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়।

এদিকে উচ্ছেদ অভিযানের শুরুতেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে পড়েন। এক পর্যায়ে ওই মার্কেটের কসমেটিকস ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম এস্কেভেটরের চাবি কেড়ে নেন। পরে দোকান রক্ষা করতে ওই মার্কেটের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। এসময় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠি চার্জ করে।

দোকান উচ্ছেদ শুরু হলে প্রতিবাদে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে কোর্ট রোডের ব্যবসায়ীরা তাদের সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন। এছাড়া এলাকার মোড়ে মোড়ে কয়েকটি স্থানে টায়ার জালিয়ে তারা বিক্ষোভ, প্রতিবাদ সমাবেশ ও জেলা প্রশাসকের বদলীর দাবী করেন। এসময় সেলিম হোসেন, আজহারুল ইসলাম ও মনিরুল ইসলাম মনি নামে তিনজন ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, হোটেল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপাতি আব্দুল হান্নান, সহ-সভাপতি আবু আক্তার, সাধারণ সম্পাদক জাহিদ ইকবাল শিমন, সদস্য রাশেদ, আজহারুল ইসলামসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী। মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে সমাবেশ করবেন বলেও জানান তারা।

বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুল হান্নান বলেন, কোনো রকম নোটিশ ছাড়াই দোকান উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসককে বিবাদী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখনও সে মামলায় আদালত বিচারাধীন। কিন্তু আদালতের রায়ের আগেই জেলা প্রশাসনের এ ধরনের উদাসিনতায় ২৬ জন ব্যবসায়ী আজ পথে বসতে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীর ভ্যাট, ট্যাক্স, করের টাকাতেই সরকারী কর্মকর্তাদের বেতন হয়। অথচ, সেই ব্যবসায়ীদেরই পেটে লাথি মারছেন জেলা প্রশাসক।

আব্দুল হান্নান আরও বলেন এর আগে তিন-চার লাখ টাকা সিকিউরিটি নিয়ে এ মার্কেটের দোকান বরাদ্দ দেন জেলা প্রসাশক। আর এডিসি আমাদেরকে ব্যাংক একাউন্ট করিয়েছেন সেখানে দোকান ভাড়া জমা দেওয়ার জন্য।

ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য ফজলুল হক বলেন, কারো কু পরামর্শে অনৈতিকভাবে এ উচ্ছেদ করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক লিংকন বিশ্বাস জানান, জেলা প্রশাসন সকল ধরনের আইনি জটিলতা শেষ করে তারপরেই এ মার্কেটটি উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছেন।

জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেন, মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সামনের মার্কেট উচ্ছেদ করা হয়েছে। এছাড়া সরকারী জমিতে এতদিন কোনো মার্কেট থাকতে পারে না। অনেকবার নোটিশ দেওয়া হলেও কোনো লাভ হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে রমজান মাসের আগেই সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। কিন্তু মানবিক কারণে তাদেরকে আরও আড়াই-তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছিল বলেও জানান তিনি।

তবে আগের জেলা প্রশাসক কোনো দোকান বরাদ্দ দিয়েছিলেন কিনা বিষয়টি নিয়ে কিছু বলবেন না বলে জানিয়েছেন মুনসুর আলম খান। ব্যবসায়ীরা বিকল্প ব্যবস্থার দাবী জানালেও জেলা প্রশাসনের এ ধরনের কোনো বরাদ্দের সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।