ঢাকা, বুধবার, ৩১ চৈত্র ১৪৩১, ১৫ মে ২০২৪, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

হিজড়াদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী

মাছুম কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৩ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২২
হিজড়াদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী

ঢাকা: রাজধানীতে বেড়েছে হিজড়াদের দৌরাত্ম্য। এনিয়ে চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

লোকাল বাস, খালি রাস্তা কিংবা অলিগলিতে যে কেউ পড়তে পারেন এদের খপ্পরে।

কথা হয় বাছিরুল নামে একজনের সঙ্গে। মালিবাগ থেকে পল্টন যাচ্ছিলেন তিনি। গ্রাম থেকে বৃদ্ধ মাকে নিয়ে এসেছেন ডাক্তার দেখাতে। বাস কাকরাইল পৌঁছে জ্যামে আটকালে সেখানে হঠাৎ দু'জন হিজড়া ওঠেন। উঠেই অতর্কিতে তার জামার কলার চেপে ধরে টাকা দাবি করতে থাকেন তারা। অনেক অনুনয়-বিনয় করলেও রেহাই মেলেনি। শেষ পর্যন্ত শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়ে ২০০ টাকায় তাদের হাত থেকে মুক্তি মেলে।

সোমবার (৬ জুন) সরেজমিনে রাজধানীর বনানী, উত্তরা, বসুন্ধরা, পল্টন, হাতিরঝিল ও প্রেসক্লাব এলাকা ঘুরে সবখানেই এমন চিত্র দেখা গেছে।

হাতিরঝিলে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে আসা স্বাধীন নামে এক ব্যাক্তি জানান, হিজড়াদের কয়েকটি দল এখানে নিয়মিত চাঁদা তোলে। এর ভাগ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে অনেক স্তরে বাটায়োরা হয়।

অধিকাংশ মানুষের অভিযোগ, লোকাল বাসগুলোতে এমন চাঁদাবাজির সঙ্গে হেলপার এবং চালকরাও জড়িত। ‘গেটলক সার্ভিস’ বলা হলেও গেট খুলে রাখায় হিজড়ারা বাসে ওঠে চাঁদাবাজির সুযোগ পায়।

পল্টন এলাকায় এক রাইড শেয়ারিং চালক বলেন, ‘এটা ভাই কমন ব্যাপার। প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ টাকা ওদের দেওয়া লাগে। নাহলে রাস্তায় কাপড় খুলে ফেলে। এটা নিযে কারো কোনো মাথাব্যাথা নেই। ’

সূত্র জানায়, সরকার তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের কর্মমুখী ও পুনর্বাসনের চেষ্টা চালালেও খুব একটা লাভ হয়নি। মূলত, সহজ উপায়ে অধিক উপার্জনের সুযোগ থাকায় এমন অনৈতিক কাজের সঙ্গে তারা জড়িয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মনির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, হিজড়াদের জীবনমান উন্নয়নে আমাদের একটি কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এর আওতায় দেশের প্রায় ২৬০০ হিজড়াকে আমরা ৬০০ টাকা করে ভাতা দিচ্ছি। এছাড়াও ১২২৫ জনকে আমরা শিক্ষাবৃত্তি দিয়েছি। সর্বমোট ১৯২০ জনকে আমরা কর্মমুখী করার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছি। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়।

এসব কাজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতোদিন নীতি অনুযায়ী ৫০ বছরের কম কাউকে ভাতা দেওয়া হতো না। তবে সম্প্রতি নতুন নীতিমালায় আমরা এটাকে ৩০ বছরে নামিয়ে এনেছি, অর্থাৎ এখন ৩০ বছর বয়স থেকেও ভাতা দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, আরেকটি বিষয়ে এতদিন আমাদের সীমাবদ্ধতা ছিল। সেটি হচ্ছে, কেউ হিজড়া কিনা তা যাচাই করার জন্য আমাদের ডাক্তারি পরীক্ষা করতে হত। বর্তমানে আমরা সেটি না করে চেষ্টা করছি যারা মানসিকভাবে হিজড়া, অর্থাৎ জন্মগতভাবে হিজড়া না, কিন্তু নিজেকে হিজড়া ভাবে এমন ব্যক্তিদেরও ভাতা-প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করছি।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাঁদাবাজি এবং অনৈতিক কাজ বন্ধে হিজড়াদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য তাদের দীর্ঘমেয়াদী কাউন্সেলিং দরকার। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে। যাতে করে তারা কর্মমুখী হয় এবং নিজেদের সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, ৬ জুন, ২০২২
এমকে/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।