ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ডিএফসি পেতে আইএলও রোড ম্যাপ বাস্তবায়ন চায় যুক্তরাষ্ট্র

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৫ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০২২
ডিএফসি পেতে আইএলও রোড ম্যাপ বাস্তবায়ন চায় যুক্তরাষ্ট্র

ঢাকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন আর্থিক সংস্থার (ডিএফসি) তহবিল পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। তবে আইএলও রোড ম্যাপ বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশের এই অনুরোধ বিবেচনা করবে বলে নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনৈতিক সংলাপে এই আলোচনা হয়েছে।

২ জুন ওয়াশিংটনে আয়োজিত এই সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এতে আরো যোগ দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র বিভাগের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জ্বালানি এবং পরিবেশবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জোসে ডাব্লিউ ফার্নান্দেজ।

শুক্রবার (৩ জুন) বৈঠকের বিষয়ে যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র - বাংলাদেশের মধ্যে শক্তিশালী এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব উদযাপন করেছে, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০ বছরের একটি হাইলাইট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডিজিটাল বাণিজ্যে আঞ্চলিক নেতা হওয়ার জন্য বাংলাদেশের সুস্পষ্ট সম্ভাবনা তুলে ধরেছে। ডিজিটাল অর্থনীতি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষিত করার জন্য একটি স্বচ্ছ নিয়ন্ত্রক পরিবেশ গ্রহণে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসার সঙ্গে উল্লেখ করেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, টেলিযোগাযোগ, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাত, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বাংলাদেশে মার্কিন সংস্থাগুলোর বিনিয়োগকে বাংলাদেশ স্বাগত জানিয়েছে।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ইউএস-বাংলাদেশ নারী কাউন্সিলের একটি মার্কিন ধারণাকে উষ্ণভাবে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশে , যা ভবিষ্যতে নারীদের কর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা এবং শিক্ষার সুযোগ বাড়াবে। উভয় পক্ষই বাংলাদেশে বিদ্যমান স্বচ্ছ বাণিজ্যিক নীতি বাস্তবায়ন এবং মেধা সম্পত্তি অধিকারের ধারাবাহিক প্রয়োগের বিষয়ে আরও সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আরো বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের অগ্রগতি স্বীকার করেছে। উদাহরণস্বরূপ, পোশাক রপ্তানি খাতে নিরাপত্তা , ট্রেড-ইউনিয়ন নিবন্ধন সহজীকরণ, সর্বজনীনভাবে ট্রেড-ইউনিয়ন ডাটাবেস তৈরি, হেল্পলাইন স্থাপন, শ্রম পরিদর্শন ডিজিটালাইজ এবং শ্রম আদালতকে শক্তিশালী করা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রম অধিকার মানদণ্ড মেনে চলার জন্য আরও পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) রোড ম্যাপ অনুযায়ী বাংলাদেশ দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং আইএলও রোড ম্যাপের চারটি অগ্রাধিকার ক্ষেত্র সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।

যার মধ্যে শ্রমিকদের সংগঠনের স্বাধীনতা, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলসহ (ইপিজেড) ধীরে ধীরে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যান্য খাতে যৌথ দর কষাকষির উন্নতি করা। উভয় পক্ষই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, আন্তর্জাতিক শ্রম মানগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন এবং প্রয়োগ, উভয় দেশের অর্থনীতিকে মহামারি থেকে পুনরুদ্ধার, অর্থনৈতিক লাভালাভ বিস্তৃত এবং একটি আকর্ষণীয় ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি করে অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে আরও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা খুলতে সহায়তা করতে পারে।

কোভিড-১৯ মহামারিতে প্রশংসনীয় সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রশংসা করেছে। বাংলাদেশ তার জনসংখ্যার ৭৬ শতাংশেরও বেশি এবং টিকার যোগ্য জনসংখ্যার ৯৯ শতাংশেরও বেশিকে আংশিকভাবে টিকা দিয়েছে। বাংলাদেশের কোভিড-১৯ প্রতিক্রিয়া প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য কোভ্যাক্সের সঙ্গে অংশীদারিত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দান করা ৬৪ মিলিয়নেরও বেশি ভ্যাকসিন ডোজগুলির জন্য বাংলাদেশ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র কোভিড-১৯ অগ্রাধিকারভিত্তিক বৈশ্বিক কর্মপরিকল্পনায় বাংলাদেশের আগ্রহকে স্বাগত জানিয়েছে, যেন বাংলাদেশ তার জনসংখ্যা এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের কার্যকর টিকাদানের বিষয়ে বিশ্বের সঙ্গে সর্বোত্তম অনুশীলন ভাগাভাগি করতে পারে।  

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব জলবায়ু নেতা হিসেবে বাংলাদেশের ভূমিকাও তুলে ধরেছে। উভয় পক্ষই কপ -২৭ -এর নেতৃত্বে বিদ্যমান প্রতিশ্রুতিগুলো প্রদান এবং শক্তিশালী করার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে।


অবকাঠামো ও বাণিজ্য উন্নয়নে উভয় দেশ একটি মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সমৃদ্ধির অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করে নেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক (আইপিইএফ) সম্পর্কে ব্রিফ করেছে৷ বাংলাদেশ আইপিইএফ-এর অতিরিক্ত তথ্যকে স্বাগত জানিয়েছে। বাংলাদেশ তার সমুদ্র সম্পদ টেকসইভাবে অন্বেষণ, পরিবেশ সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য তার সমুদ্র অর্থনীতির আরও বিকাশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত সহায়তা চেয়েছে।

বাংলাদেশ জানিয়েছে, নিউইয়র্ক এবং ঢাকার মধ্যে বিরতিহীন ফ্লাইট পুনরায় চালু করা একটি উচ্চ অগ্রাধিকার। উভয় পক্ষই এটিকে দ্রুত এগিয়ে নিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৪ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০২২ 
টিআর/এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।