ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

সেতু দেখতে দেখতে নৌকায় করে রত্নাই নদী পার হই

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৬ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২২
সেতু দেখতে দেখতে নৌকায় করে রত্নাই নদী পার হই

লালমনিরহাট: সেতু থাকলেও সংযোগ ঘটেনি দুই পাড়ের সড়কের সঙ্গে। তাই সেতু দেখতে দেখতে নৌকায় করে রত্নাই নদী পার হই।

 

ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের মেঘারাম গ্রামের কৃষক কাদের আলী (৬০)।  

তিনি বলেন, সরকারের লোকজন আসে আর যায়। শুধু বলে এ মাসে ও মাসে কাজ শেষ হবে। কিন্তু ছয় বছরেও কাজ শেষ করছে না। আমাদের কষ্ট কমছে না। সামান্য কাজটুকু শেষ হলে হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ কমে যাবে। সেতুটি দেখি আর নৌকায় রত্নাই নদী পার হই। নৌকায় মানুষ পার হতে পাঁচ টাকা, বাইসাইকেল পার করতে ১০ টাকা ও মোটরসাইকেল পার করতে ২০ টাকা ভাড়া গুণতে হচ্ছে। এভাবে আর কতদিন কষ্ট করতে হবে?

১০ দফায় সময় বাড়িয়ে নিয়ে দীর্ঘ ছয় বছরেও শেষ হয়নি লালমনিরহাটের রত্নাই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ১০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।

জানা গেছে, লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের মেঘারাম গ্রামের ওপর দিয়ে রত্নাই নদী প্রবাহিত। সেতুর অভাবে নৌকা বা ভেলায় রত্নাই পাড়ি দিতে হতো তাদের। সড়ক পথে আট/১০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হতো প্রায় সাত/আটটি গ্রামের মানুষকে। এজন্য নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন নদীর দুই পাড়ের গ্রামবাসী। অবশেষে স্থানীয়দের দাবি পুরণে মেঘারাম গ্রামের সঙ্গে দুরাকুটি গ্রামের সংযোগ করতেই রত্নাই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। সেই অনুযায়ী দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) লালমনিরহাট।  

লালমনিরহাটের এলজিইডি সূত্র জানায়, এলজিইডির অধীনে ছয় কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে রত্নাই নদীর ওপর ১২০ মিটার দৈর্ঘ্য ও আট মিটার প্রস্থের সেতুটির নির্মাণ কাজ পান ঠিকাদার গোলাম রব্বানী। ২০১৮ সালের মে মাসে সেতুটির নির্মাণ সম্পন্ন করার চুক্তি করে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাজ শুরু করেন ঠিকাদার। পরে নানান অজুহাতে ১০ দফায় সময় বাড়িয়ে নেন ঠিকাদার। ২০২১ সালে নভেম্বর মাসে সেতুটির মূল অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঠিকাদার এ পর্যন্ত পাঁচ কোটি ৬০ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করেছেন।

সেতুটির দুই পাড়ের সড়কও নির্মাণ করা রয়েছে। কিন্তু সেতুটির রং ও সংযোগ সড়কের কাজ বাকি রেখেই চলে গেছেন ঠিকাদার। ফলে দুই পাড়ের সড়কের সঙ্গে সেতুটির মেলবন্ধন হয়নি। বাকি কাজটুকু শেষ না করায় সেতুটি ব্যবহার করতে পারছেন না স্থানীয়রা। ফলে সেতুটি নদীর ওপর দাঁড়িয়ে থাকলেও কোনো কাজেই আসছে না। ঠিকাদার ও এলজিইডি কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলায় এ সেতুটি এখনো অবহেলায় পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।  

সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দিলে মোগলহাট ইউনিয়নের দুরাকুটি, দক্ষিণ দুরাকুটি, মেঘারাম, ইটাপোতা, কর্ণপুর, কোদালগাছাসহ বেশ কিছু গ্রামের হাজার হাজার মানুষের প্রায় সাত/আট কিলোমিটার পথ কমে আসবে। দ্রুত কাজ সমাপ্ত করে সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দিতে ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।  

দুরাকুটি গ্রামের আশরাফুল বলেন, চাইতে চাইতে যদি সেতু পাইনো। এলা ফির সেতুতে চড়ার (ওঠার) রাস্তা নাই। হামার কষ্ট কয় বুঝে? ইনজিনিয়াররা তো প্রতিদিন এ পথে আসেন না। তাই হামার কষ্টও তারা বোঝেন না।  

মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, চাপ দিয়ে সেতুটির অবকাঠামো নির্মাণ হলেও এখনো সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ নিয়ে চলছে টালবাহানা। জনভোগান্তি তো বেড়েই চলেছে। আবার বর্ষাকাল আসছে। এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। সেতুটি নির্মাণে শুরুর পর থেকে এলজিইডির তিনজন নির্বাহী প্রকৌশলী বদলি হয়েছেন। কিন্তু এখনো সেতুটি চলাচলের উপযোগী করা হয়নি।  

লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুর কাদের এলাহী বলেন, ভূমি জটিলতায় সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ পিছিয়ে গেছে। বর্ষার আগে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে সেতুটি চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সংযোগ সড়ক নির্মিত না হওয়ায় ঠিকাদারকে এখনো সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করা হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২২ 
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।