ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক কর বৃদ্ধি জরুরি’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৪ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২২
‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক কর বৃদ্ধি জরুরি’

ফেনী: কার্যকরভাবে করারোপের অভাবে বাংলাদেশে তামাকপণ্য অত্যন্ত সস্তা এবং সহজলভ্য হয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিগারেটের ব্যবহার প্রায় একইরকম রয়েছে।

সার্বিকভাবে, বিদ্যমান তামাক কর ব্যবস্থা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারছে না।

ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) সহযোগিতায় ঢাকা আহছানিয়া মিশন ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক কর বৃদ্ধি জরুরি’ শীর্ষক প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা।

বৃহস্পতিবার (২২মে) সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে তামাকপণ্যের কর ও মূল্য বৃদ্ধির দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।  

ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত (এমপি), বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি (এমপি)।

আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মাদক দ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, সিটিএফকে-বাংলাদেশের লিড পলিসি এডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশেদুল ইসলাম।  

স্বাগত বক্তব্য রাখেন, আহছানিয়া মিশনের প্রকল্প সমন্বয়ক শরীফুল ইসলাম। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তামাকবিরোধী সংগঠনসমূহের প্রতিনিধিরা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত (এমপি) বলেন, একটি সিগারেটের শলাকায় ৪ হাজারের বেশি কেমিক্যাল রয়েছে। এসব কেমিক্যাল মানুষের শরীরকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সর্বক্ষেত্রে সর্বগ্রাসী ভূমিকা রাখছে এই তামাক।

প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকলে অবশ্যই সে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে। কার্যকর করারোপের মাধ্যমে এদেশে কমবে তামাকের ব্যবহার। এর সঙ্গে প্রয়োজন আইন সংশোধন।  

সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, তামাকের উপর নির্ভর করে আমাদের অর্থনীতি নির্ভর করতে পারেনা। এর বিকল্প সোর্স আমাদের নিতে হবে।  

অরুপ রতন চৌধুরী বলেন, তামাক পৃথিবীর জন্য আরেক মহামারী। প্রতিবছর ৮০ লাখ মানুষ তামাকের কারণে মারা যান। আমাদের দেশে যেমন ভেজাল বিরোধী অভিযান হয় তেমনি যেন তামাক বাস্তবায়নে জন্য অভিযান হয়। তামাক আইন থাকলেও তা যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছেনা।  

সংবাদ সম্মেলনে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সিগারেটের কর প্রস্তাব এবং সুপারিশ করা হয়। প্রস্তাবে সিগারেট প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের নিম্ন স্তরে খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৩২.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। মধ্যম স্তরে খুচরা মূল্য ৭৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৮.৭৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

উচ্চ স্তরে খুচরা মূল্য ১২০ টাকা নির্ধারণ করে ৭৮.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক এবং প্রিমিয়াম স্তরে ১৫০ টাকা খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে ৯৭.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

এর ফলে সকল মূল্যস্তরে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্কের হার হবে চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬৫ শতাংশ। সিগারেটের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল থাকবে।

বিড়ি ও ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের কর প্রস্তাব এবং সুপারিশ হয়। বিড়ি: ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১.২৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

এর ফলে উভয় ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্কের হার হবে চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৪৫ শতাংশ। বিড়ির খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল থাকবে।

ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য (জর্দা ও গুল): প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

এর ফলে উভয় ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্কের হার হবে চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬০ শতাংশ। জর্দা ও গুলের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল থাকবে।

সুপারিশে বলা হয় এ প্রস্তাবিত করারোপের ফলে সিগারেটের ব্যবহার ১৫.১ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ১৪ শতাংশ হবে। প্রায় ১.৩ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে এবং ৮ লাখ ৯৫ হাজারের অধিক তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে।

দীর্ঘমেয়াদে ৪ লাখ ৪৫ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৪ লাখ ৪৮ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠীর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।

প্রায় ৩৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে যা সম্পূরক শুল্ক, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ এবং ভ্যাট বাবদ ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রত্যাশিত রাজস্বের চেয়ে ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা বেশি, অর্থাৎ প্রথম বছরে সিগারেট খাত থেকে ৩০ শতাংশ বাড়তি রাজস্ব আয় হবে।

মূল্য বৃদ্ধি তুলনামূলক স্বল্প আয়ের মানুষকে ধূমপান ছাড়তে উৎসাহিত করবে এবং একই সঙ্গে উচ্চ স্তরে সিগারেটের দাম বাড়ানো হলে ধূমপায়ীদের সস্তা ব্রান্ডে স্থানান্তর হওয়ার সামর্থ্য সীমিত হবে।

নিম্নস্তরে সিগারেট, বিড়ি ও ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে এসব পণ্য ব্যবহার নিরুৎসাহিত করবে এবং একই সঙ্গে সরকারের রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২২
এসএইচডি/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।