ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভোগান্তির অবসান হতে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৮ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২২
ভোগান্তির অবসান হতে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের ফাইল ছবি

মাদারীপুর: 'বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুট। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যোগাযোগের সহজতর পথ।

প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত এ রুট দিয়ে।  

উৎসব আর ছুটির দিনে ঘাটে বাড়ে মানুষের চাপ, বাড়ে অযাচিত বাড়তি ভাড়া, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে বসে থাকা, ঘাট সংশ্লিষ্টদের দুর্ব্যবহার আর ভোগান্তি! সেতু চালুর মধ্য দিয়ে হাজার হাজার মানুষের অসহনীয় ভোগান্তি তো দূর হবে! আমরা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচছি, সেতু উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণায়! 

এভাবেই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবরে নিজেদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের যাত্রীরা।  

সেতু চালুর দিনক্ষণ ঘোষণায় এ নৌরুট ব্যবহারকারীদের চোখে মুখে স্বস্তির ঝিলিক! আসছে কুরবানির ঈদে ঘরে ফিরতে দুর্ভোগে পড়তে হবে না যাত্রীদের। পদ্মা পাড় হতে মধ্য রাত থেকে বসে থাকতে হবে না ঘাটে। সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজির শিকার হতে হবে না। আর ফেরিতে পার হতে 'ভিআইপি' যন্ত্রণায় অসহায় হতে হবে না! লঞ্চ, ফেরিতে গাদাগাদি করে পার হতে হবে না পদ্মা নদী! লঞ্চ-ফেরি-স্পিডবোটে পার হওয়া যাত্রীদের অভিমত এমনই।

বুধবার (২৫ মে) সকালে শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে যাত্রীদের সঙ্গে আলাপ করে পদ্মা সেতু নিয়ে তাদের স্বপ্ন আর ঘাটের দুর্ভোগ থেকে মুক্তির আনন্দের কথা জানা গেছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে প্রতিদিন ৮৭টি লঞ্চ চলাচল করছে। এর মধ্যে দূরপাল্লার পরিবহনের যাত্রীদের জন্য রয়েছে আলাদা লঞ্চ ব্যবস্থা। দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী যাত্রীরা ঘাটে নেমে লঞ্চে পার হয়ে শিমুলিয়া থেকে আবার একই পরিবহনে ঢাকা গিয়ে থাকেন। এছাড়া ছোট-বড় অন্যান্য লঞ্চগুলোতে সাধারণ যাত্রীরা নিয়মিত পার হয়ে থাকেন। যাত্রীপ্রতি বর্তমানে ৪৫ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হয়। এছাড়া উভয় ঘাট মিলিয়ে দেড় শতাধিক স্পিডবোট চলাচল করছে। এদিকে ফেরি চলছে মাত্র পাঁচ/ছয়টি।

বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা গেছে, নৌরুটের যাত্রীদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে কুরবানির ঈদে এবার আর চরম ভোগান্তি মাথায় নিয়ে ঘরে ফিরতে হবে না। ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হবে না পদ্মা নদী। বিশেষ করে ফেরিতে পার হওয়ায় যানবাহন নিয়ে চালক ও যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে অপেক্ষার অবসান হবে। এ আনন্দ এখন থেকেই যাত্রীদের চোখে মুখে দেখা যাচ্ছে। আর পদ্মা সেতু চালুর খবরই এখন ঘাট এলাকার আলোচনার প্রধান বিষয়।

ঢাকাগামী যাত্রী বিকাশ বিশ্বাস বলেন, গত ঈদের সময় বাড়ি ফিরতে এবং ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। হাজারো যাত্রীর মধ্যে গাদাগাদি করে বাড়তি ভাড়া দিয়ে নৌযানে উঠতে হয়েছে। আমরা যারা এ রুটের যাত্রী, তারা বুঝি, ঘাটের দুর্ভোগ কত অসহনীয়। সেতু চালুর খবর যেন আমাদের কাছে ঈদ আনন্দ।

আরেক যাত্রী মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, এ ঘাটের শ্রমিকদের হাতে একাধিকবার লাঞ্ছিত হয়েছি। অনিয়মের বিরুদ্ধে সামান্যতম কথা বললেই ঘাটের নৌযান শ্রমিকদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হয়। বিশেষ করে স্পিডবোট চালক- শ্রমিকদের দ্বারা যাত্রীরা বেশি 'হ্যারাজমেন্টে’র শিকার হচ্ছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরবে চলে যেতে হয়। সেতু চালুর মধ্য দিয়ে যাত্রীদের এ 'জিম্মি' অবস্থার অবসান হবে। নির্বিঘ্নে যাতায়াত করা যাবে।

আফরোজা আক্তার নামে গোপালগঞ্জের এক যাত্রী বলেন, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং নৌশ্রমিকদের অবহেলায় অসংখ্য দুর্ঘটনার সাক্ষী এ নৌরুট। স্পিডবোট ডুবে অসংখ্য প্রাণহানি এবং পিনাক-৬ নামে একটি লঞ্চ ডুবির ঘটনার 'ভয়াল স্মৃতি' বয়ে বেড়াচ্ছে স্বজন হারানো পরিবারগুলো। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন এবং অদক্ষ চালকদের কারণেই বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে নৌরুটে। ঘাট এলাকায় এলেই অসহায় হয়ে পড়েন যাত্রীরা। অনিয়মকেই নিয়ম নেমে নিরবে পার হতে হয়। এ দুর্ভোগ দূর হবে। ইনশাআল্লাহ আগামী মাস থেকেই সেতুতে পার হবো।

যাত্রীরা আরও জানান, সেতু চালুর মধ্য দিয়ে সময় বাঁচবে যাত্রীদের। জরুরি প্রয়োজনে যে কোনো সময়ই যাওয়া-আসা করা যাবে। বিশেষ করে রোগী নিয়ে ঘাটে বসে থাকতে হবে না আর। আগামী ২৫ জুন সেতু চালুর খবরে আনন্দিত এ রুটের যাত্রীরা।

বিআইডব্লিউটিএ'র বাংলাবাজার লঞ্চঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আক্তার হোসেন বলেন, সেতু চালুর তারিখ ঘোষণার খবরে হাজার হাজার যাত্রী অপেক্ষার প্রহর গুণছেন। ২৪ মে থেকে যাত্রীদের মুখে শুধু 'সেতু চালু'র কথাবার্তা। পদ্মা সেতু নিয়ে যাত্রীদের আলাপ-আলোচনা। সেতু চালুর মধ্য দিয়ে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত তৈরি হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে!

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad