ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

‘ফকিরের রুটি পড়া’ খেয়ে একজনের মৃত্যু, আরেকজন হাসপাতালে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৭ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২২
‘ফকিরের রুটি পড়া’ খেয়ে একজনের মৃত্যু, আরেকজন হাসপাতালে

শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় চোর শনাক্ত করার জন্য ইসরাফিল ফকির নামে তথাকথিত এক ফকিরের দেওয়া ‘রুটি পড়া’ খেয়ে শওকত বেপারী (৫৫) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। আর মান্নান হাওলাদার (৬০) নামে আরেক ব্যক্তি বর্তমানে ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

 

সোমবার (২৩ মে) বিকেলে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।  রোববার (২২ মে) আনুমানিক সকাল ৮টার দিকে জাজিরা উপজেলার পশ্চিম নাওডোবা ইউনিয়নের কালু ব্যাপারিকান্দি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ মে (বুধবার) দিবাগত রাতে জাজিরা উপজেলার পশ্চিম নাওডোবা ইউনিয়নের কালু বেপারিকান্দি এলাকার শওকত বোপারি (৫৫) ও মান্নান হাওলাদার (৬০) নামে দুই ব্যক্তির আনুমানিক প্রায় ৯ লাখ টাকা মূল্যের তিনটি গরু চুরি হয়ে যায়। পরে তারা চোর ধরার জন্য পার্শ্ববর্তী মাদারীপুর জেলার টেকেরহাটের দিগনগর-নিশ্চিন্তাপুর এলাকার মৃত রাজ্জাক ফকিরের ছেলে ইসরাফিল ফকিরের শরণাপন্ন হন। ইসরাফিল ফকির ২০ হাজার টাকার বিনিময় একটি ডিম ও দুই ধরনের আটা পড়ে দেন। এক ধরনের আটা দিয়ে রুটি তৈরি করে এলাকার মানুষকে খাওয়াতে ও আরেক ধরনের আটার রুটি গরু মালিকদের খেতে বলেন। ২২ মে (রোববার) সকাল ৮টার সময় এলাকাবাসীর সঙ্গে শওকত ও মান্নানও রুটি খায়। এর ২০ মিনিট পরেই শওকত বেপারি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আরেক মালিক মান্নান হাওলাদার রুটি খাওয়ার পরে ব্যক্তিগত কাজে শরীয়তপুর যাওয়ার পথে প্রেমতলা নামক স্থানে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি দেখে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন বলেন, আমরা থানায় এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করিনি। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থায় যাবো।

এলাকাবাসীর ধারণা, দুই ধরনের রুটির মধ্যে যে রুটি এলাকাবাসীকে খাওয়ানোর কথা ছিল, ভুলবশত সে রুটি মালিকপক্ষ খেয়ে ফেলেছে। হয়তো রুটির মধ্যে বিষাক্ত কিছু মেশানো ছিল। এটা জানার জন্য কথিত ফকির ইসরাফিলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, তথাকথিত ফকিরি চিকিৎসা একটি অপচিকিৎসা। এ ধরনের চিকিৎসার কোনো ভিত্তি নেই। এ ধরনের অপচিকিৎসা থেকে সবাইকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করছি।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান সোহেল বলেন, তথাকথিত ফকিরের রুটি পড়া খেয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এটির বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। এটি সম্পূর্ণ প্রতারণা। তবে ভুক্তভোগীরা আইনি সহায়তা চাইলে যথাযথ আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।

জাজিরা থানার উপ-পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুক আহমেদ বলেন, ভুক্তভোগীরা কোনো অভিযোগ করেনি। তারা ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ দাফন করতে চেয়েছিল। আমরা মরদেহের ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করেছি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সাপেক্ষে, যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৪ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।