ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ফজলি আমকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দাবি করে শিল্প মন্ত্রণালয়ে আপত্তি, শুনানি মঙ্গলবার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৫ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২২
ফজলি আমকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দাবি করে শিল্প মন্ত্রণালয়ে আপত্তি, শুনানি মঙ্গলবার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : ক্ষিরশাপাতের পর এবার রসালো, আঁশবিহীন, আকারে বিশাল ফজলি আমের ভৌগলিক নির্দেশক(জি আই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির দাবি করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সেই সঙ্গে ফজলি আম জিআই পণ্য হিসেবে রাজশাহী জেলার পক্ষে নিবন্ধনের বিরোধিতা করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পক্ষে নিবন্ধনের দাবিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ডিজাইন, পেটেন্ট ও ট্রেড মার্কস বিভাগে একটি আপত্তি দাখিল করা হয়েছে।

এর প্রেক্ষিতে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস বিভাগ এই আপত্তির যৌক্তিকতা বিবেচনা করে আগামীকাল মঙ্গলবার (২৪ মে) উভয়পক্ষের শুনানির দিন ধার্য করেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফজলি আম বলতে চাঁপাইনবাবগঞ্জকেই বোঝায় এবং সেটি প্রায় ১০০ বছরেরও অধিক সময় ধরে। দেশ বিভাগের প্রায় দেড়শ বছর আগে থেকেই মালদহ তথা গৌড়ের ফজলি আমের সুখ্যাতি রয়েছে। গৌড়ের অংশ হিসেবে সেই সুখ্যাতির পরিপূর্ণ অধিকারী চাঁপাইনবাবগঞ্জ। ১৮০০ সালের দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত সংলগ্ন গৌড়ে ফজলবিবি নামে এক বৃদ্ধা বাস করতেন। সেই সময় মালদহ জেলা কালেক্টর রাজভেনশ সরকারি কাজে গৌড়ে আসেন ও বৃদ্ধার বাড়ির কাছে শিবির স্থাপন করেন। কালেক্টরের আগমন বার্তা শুনে বৃদ্ধা কালেক্টরের জন্য উপঢৌকন হিসেবে তার বাড়ির আঙিনার আমগাছের আম উপহার দেন। কালেক্টর আম খেয়ে তৃপ্ত হয়ে বৃদ্ধাকে সেই আমের নাম জানতে চান। বৃদ্ধা ইংরেজি বুঝতে না পেরে তার নিজের নাম বলেন। সেই থেকে আমটির নামকরণ হয় ‘ফজলি’। আমটির স্বাদে আকৃষ্ট হয়ে ফজলি বিবির নামানুসারে এ আমটির নাম হয় ফজলি। যার উৎপত্তি বর্তমান গৌড়ীয় অঞ্চল সোনামসজিদ ও ভোলাহাট এলাকায়।  

গবেষকদের দাবি, সুরমা ফজলি ছাড়া ফজলি আমের কোনো জাত নেই। আর ফজলির জন্ম জানতে আন্দোলনকারীরা কার্বন টেষ্টের দাবি করে বলেন, পরীক্ষা ও বাগানের আকৃতিই প্রমান করে ফজলি আম চাঁপাইনবাবগঞ্জেরই।

 দেশের কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে উৎপাদিত মোট আমের এক চতুর্থাংশ চাপাইনবাবগঞ্জ জেলাতেই উৎপাদিত হয় । এ জেলায় ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৪ লাখ টন আম উৎপাদিত হয়।  যার শতকরা ২৩ ভাগ বা প্রায় ৮৮ হাজার টন ফজলি আম উৎপাদিত হয় । অপরদিকে রাজশাহী জেলায় ফজলি আম উৎপাদন হয় মাত্র ২৮ হাজার টন । সারা দেশের উৎপাদিত ফজলি আমের ৫৬ ভাগ আম চাঁপাইনবাবগঞ্জের এবং  ১৮ ভাগ রাজশাহীতে উৎপাদিত হওয়ায়  এই আমকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জি আই পন্য হিসেবে দাবি করা হয়।

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক জাহাঙ্গির সেলিম জানান, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যেহেতু চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাজশাহী জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়, সেই সুবাদেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে তাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বলে দাবি করে। যেমনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট থানা হচ্ছে রেশমের সুতিকাগার এবং সমগ্র দেশের ৬০ শতাংশ রেশম সুতা সেখানে উৎপাদিত হয় এবং শিবগঞ্জ উপজেলার হরিনগর লাহারপুরের তাঁতে বোনা রেশম বস্ত্র দেশখ্যাত। কিন্তু রাজশাহী শহরে পাওয়ারলুম বসিয়ে রেশমনগরী করে রেশমের জিআই স্বীকৃতি লাভ করেছে রাজশাহী। একই কায়দায় ফজলির কোনো জাত না থাকলেও বাঘা ফজলি নামে জাত দাবি করে আবারো রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আমকে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করছে।

এ দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ উদ্যানতত্ব ও গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুখলেসুর রহমান দাবি করেন, রাজশাহীর দাবিকৃত বাঘা ফসলি নামে কোন আমের জাত নেই।

অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি  অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক ও রাজশাহীর পক্ষে জি আই সনদ না দিতে আপত্তিদানকারী  মো. মুনজের আলম জানান, ১৮০০ সালের দিকে চাপাইনবাবঞ্জ সীমান্ত সংলগ্ন গৌড়ে ফজলির চাষ শুরু হয় এবং বিশাল আকৃতির অসংখ্য আমগাছ তারই সাক্ষী ।  

তিনি আরও বলেন, পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস বিভাগ যেসব শর্তের পরিপ্রেক্ষিতে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি প্রদান করে (অর্থাৎ ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক, উৎপাদন, বিপণন) সবই ফজলি আমের ক্ষেত্রে পূরণ করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। শুধু তা-ই নয়, বাস্তবে একটি প্রমাণ দিলে আরও স্পষ্ট হবে। যে কোনো ভোক্তার সামনে যদি চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর ফজলি আম রাখা যায় তা হলে ভোক্তা প্রথমেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আমই বেছে নেবে। তাই জি আই সনদ আমাদেরই হওয়া উচিত।

এদিকে ফজলি আমের জিআই স্বীকৃতির দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও শিবগঞ্জের বাগানমালিক, আম ব্যবসায়ী চেম্বার অব কমার্স, সাংবাদিকসহ জেলার বিভিন্ন  শ্রেণী-পেশার মানুষ ইতিপূর্বে মানববন্ধন করেছেন। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপিও প্রদান করেছেন তারা।

আন্দোলনে অন্যতম নেতৃত্বদানকারী শিবগঞ্জ ম্যাঙ্গো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব মো. আহসান হাবিব দাবি করেন, কার্বন টেষ্টসহ সবরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ফজলি আম উৎপাদন এবং স্বাদের ভিত্তিতে এ ফলটির একমাত্র জি আই সনদের হকদার চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলামও দাবি করেন, জি আই পন্য হিসেবে ফজলি আমের হকদার একমাত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জই।

 উল্লেখ্য, বাংলাদেশের নয়টি পন্য জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন (জি আই) বা ভৌগলিক নির্দেশক হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারী স্বীকৃতি পায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে ক্ষিরসাপাত আম।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৬ ঘণ্টা, ২৩ মে, ২০২২
ইআর

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।