ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ও ঋণ থেকে বাঁচতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৫ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২২
প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ও ঋণ থেকে বাঁচতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা

নরসিংদী: নরসিংদীর বেলাবতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেফতার গিয়াস উদ্দিন শেখ। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ও ঋণের বোঝা থেকে বাঁচতে তিনি এ হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

 

সোমবার (২৩ মে)বিকেলে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাকিবুল হকের  আদালতে এ জবানবন্দি দেন গিয়াস। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।  

এদিকে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে এলাকবাসী। সোমবার বিকেলে উপজেলার পাটুলী ইউনিয়নের ভাবলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন করেন তারা।

 আদালত সূত্রে জানা যায়, নরসিংদীর বেলাবতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার ঘটনায় নিহত রাহিমার ভাই মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত নামা ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করে বেলাব থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার নিহত রাহিমার স্বামী গিয়াস উদ্দিন শেখ পিবিআই এর কাছে হত্যার দায় স্বীকার করেন। পরে সোমবার বিকেলে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়। ওই সময় হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতের বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়, নিহত রাহিমা বেগমের স্বামী গিয়াস উদ্দিন শেখ পেশায় রং মিস্ত্রি। একই সঙ্গে মাদকাসক্ত ও জুয়াড়ি। জুয়ার টাকা যোগার করতে নিহত রাহিমা বেগমের নামে বিভিন্ন এনজিও থেকে আড়াই লাথ টাকা, শ্বশুর-শ্যালক ও শ্যালকের শ্যালকের (বিয়াই) কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ও সুদে আরও দুই লাখ টাকাসহ মোট সাড়ে ৯ লাখ টাকা ঋণ নেন। এই ঋণ নিহত রাহিমা বেগমের নামে আনা হয়। সুদেআসলে ঋণের টাকা ১২ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এই টাকা পরিশোধের জন্য নিহতের স্বামী গিয়াস উদ্দিনের ওপর চাপ ছিল। সর্বশেষ জুয়া খেলার মতো কোনো টাকা তার হাতে ছিল না। তাই বাড়ির আঙিনা থেকে কয়েকটি গাছ বিক্রি করেন। তা নেওয়ার সময় প্রতিবেশী চাচাতো ভাই রেনু মিয়ার সঙ্গে ঝগড়া হয়। এরই মধ্যে তিনি জানতে পারেন ঋণ গ্রহীতা মারা গেলে ঋণের টাকা মওকুফ হয়ে যায়। এই চিন্তা থেকে গিয়াস স্ত্রী রহিমা বেগমকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী গিয়াস রাতে বাড়ি ফিরে সন্তানদের সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েন। পরে রাত আড়াইটার দিয়ে স্ত্রীকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে ও গরু জবাইয়ের ছুরি দিয়ে হত্যা করেন। স্ত্রীকে হত্যার পর সন্তানরা সবাইকে বলে দেবে এই ভয়ে গিয়াস সন্তানদেরও হত্যা করেন। হত্যার পর পুলিশ ও মানুষের চোখ ফাঁকি দিতে রাতেই বাড়ি ছেড়ে চলে যান। পরে সকালে তাকে ফোন দিয়ে বাড়িতে ডেকে আনেন।

নরসিংদী পিবিআই এর উপ-পরিদর্শক জামাল উদ্দিন বলেন, গিয়াসের আচরণ দেখে প্রথমেই আমাদের সন্দেহ হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনা স্বীকার করেন। আজকে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

এদিকে সোমবার বিকেলে উপজেলার পাটুলী ইউনিয়নের ভাবলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মা ও দুই সন্তানের হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বেলাব সাংগঠনিক জেলা শাখা ও ভাবলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে মহিলা পরিষদ, শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী অংশগ্রহণ করেন। এতে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচার আইনে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

জানা যায়, শনিবার দিবাগত রাতে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার পাটুলি ইউনিয়নের বাবলা গ্রামের শেখবাড়ির প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ও ঋণের বোঝা থেকে বাঁচতে স্ত্রী রহিমা বেগম (৩৫), তার ছেলে রাব্বি (১৩) ও মেয়ে রাকিবা আক্তারকে (৬) হত্যা করেন গিয়াস। হত্যাকাণ্ডের পর গিয়াস পালিয়ে যাননি। বাড়িতে থেকেই পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মিথ্যে তথ্য দেওয়া শুরু করেন। একই সঙ্গে ঝগড়ার রেশ ধরে প্রতিপক্ষ রেনু মিয়া এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে বেলাবো থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ সাংবাদিকেদের কাছে অভিযোগ করেন। পরে দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থলে তদন্তে যান পিবিআই। নানা বিচার বিশ্লেষণ শেষে নিহতের স্বামী গিয়াসের অসংঙ্গতিপূর্ণ আচরণে পিবিআইএর পুলিশ সুপার মো. এনায়েত হোসেন মান্নানের সন্দেহ হয়। পরে তাকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআই এর এসপির কাছে হত্যার কথা স্বীকার করেন গিয়াস।

** প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ২ সন্তানসহ স্ত্রীকে খুন করেন গিয়াস!
** ঘরে পড়ে ছিল ২ সন্তানসহ মায়ের গলা কাটা মরদেহ

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad