ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

সিলেটে তলিয়ে গেছে আশ্রয়কেন্দ্রও

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৬ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২২
সিলেটে তলিয়ে গেছে আশ্রয়কেন্দ্রও সিলেটে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে মানুষের ঘরবাড়ি, সরকারি দফতর, আশ্রয়কেন্দ্র | ছবি: মাহমুদ হোসেন

সিলেট: গত কয়েকদিন উজানের ঢলে ও টানা ভারী বর্ষণে সিলেট নগরসহ জেলার অন্তত ১০টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় তলিয়ে যাওয়া বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে মানুষজন।

সেখানে গিয়েও পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটছে তাদের। একতলা বিশিষ্ট অনেক আশ্রয়কেন্দ্রের ভেতরেও বন্যার পানি উঠে গেছে। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাটে এমন চিত্র দেখা গেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অনেকগুলো আশ্রয়কেন্দ্রের নিচতলায় পানি উঠেছে। আর একতলা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে পানিবন্দি থাকায় জরুরি প্রয়োজনে নৌকা ব্যবহার করে অন্যত্র ঝুঁকি নিয়ে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে।

সময় যত গড়াচ্ছে ততই বাড়ছে বানবাসী মানুষের সংখ্যা। বিভিন্ন উপজেলায় কয়েক লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন সড়ক ডুবে গিয়ে উপজেলা ও জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার ও সরকারি দফতরগুলোতে উঠেছে পানি। বন্যাকবলিত হয়ে পড়া সিলেট নগরের আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গ্রামীণ এলাকায় জিনিসপত্রের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।



স্থানীয় নারী-পুরুষদের অনেকে জানান, গত দুই দিনে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘরে প্রবেশ করেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে না পারা মানুষজন ঘরেই অবস্থান করছে। ঘরের চৌকির নিচে পানি আসায় সন্তানদের নিয়ে খাটের উপরে অবস্থান করতে দেখা গেছে অনেককে।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান লুসিকান্ত হাজং বলেন, উপজেলার ৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে তিন শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। মোট ৪৬ হাজার ৫০০ বানভাসি মানুষ রয়েছে এ উপজেলায়। তাদের জন্য ১২ মেট্টিক টন চাল, ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আরও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের চিড়া ও গুড় বিতরণ করা হবে। ৪০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দুর্গত মানুষের সেবায় ৬টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতির কারণে উপজেলায় ৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে। এ যাবত সাড়ে ৩০০ জন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। বানভাসি মানুষের সংখ্যা ৬৯ হাজার নির্ণয় করা হয়েছে। এসব মানুষের জন্য আগে ২৪ টন চাল ও নতুন করে আরো ৫ টন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলায় মানুষের চিকিৎসায় ১০টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।



সিলেটের জকিগঞ্জর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি) পল্লব হোম দাস বলেন, উপজেলায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলায় ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ যাবত ১২টি পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। অন্যরা স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এরই মধ্যে দুর্গতদের জন্য বরাদ্দকৃত ১৮ মেট্টিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে। আর শুকনো খবার দিতে নগদ একলাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। আরও ৩ হাজার প্যাকেটের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

সিলেট জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, জেলায় ২৭৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৮টিতে মানুষ অবস্থান করছে। এছাড়া বন্যার্তদের জন্য এ যাবত ১৪৯ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবারও বরাদ্দ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২২
এনইউ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।