ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশবান্ধব: প্রধানমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৮ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২২
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশবান্ধব: প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা: পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সব থেকে পরিবেশবান্ধব বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গ্যাস ফুরিয়ে গেলে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আমাদের বিদ্যুৎ দেবে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।

বুধবার (১৮ মে) আওয়ামী লীগ আয়োজিত শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।  

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত ওই সভায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন থেকে তিনি ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।

সরকারের উন্নয়ন ও অর্জন তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আজ বাংলাদেশ পৃথিবীতে উন্নয়নের রোল মডেল। এর ভেতরে আমাদের কিছু নতুন আঁতেল আবার জুটেছে। একজন অর্থনীতিবিদ বলেই দিলেন আমরা যে, রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছি এটা না কি অর্থনৈতিকভাবে ভীষণ ক্ষতিকর। আমরা প্রশ্ন হচ্ছে, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এটা হচ্ছে সব থেকে পরিবেশবান্ধব। গ্যাস তো চিরদিন থাকে না। এক একটা কূপের তার তো সময় নির্দিষ্ট থাকে। তেলভিত্তিক গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ আমরা করি, অনেক খরচেরও ব্যাপার। যদি কোন দিন এমন হয় যে, আমাদের গ্যাস ফুরিয়ে যাচ্ছে তখন আমাদের এই নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টই বিদ্যুৎ দেবে। আর এটা পরিবেশবান্ধবও একটা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এখানে বিনিয়োগটা বড় করে দেখা যায়। কিন্তু এর বিদ্যুৎ যখন উৎপাদন হবে আর এর বিদ্যুৎ যখন মানুষ ব্যবহার করবে আমাদের অর্থনীতিতে অনেক বেশি অবদান রাখবে। আজ আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি বলেই সারা বাংলাদেশে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পেরেছি। আমরা যখন রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করলাম তখন কত সমালোচনা। আমরা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিলাম তখন কত সমালোচনা। এখন ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করেই আমাদের সমালোচনা করছে। তারা যে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন এটা কিন্তু আমরা দিচ্ছি। খালেদা জিয়ার আমলে, জিয়ার আমাল বা এরশাদের আমলে তাদের কি কথা বলার কোনো সুযোগ ছিল। অধিকার ছিল, কতটুকু অধিকার ভোগ করতেন তারা। টক শো তারা করেই যাচ্ছেন, টক টক কথা বলেই যাচ্ছেন। তাদের তো গলাটিপে ধরি না, মুখ চিপেও ধরি না। বলেই যাচ্ছেন, সব কথা বলার শেষে বলে কথা বলতে দেওয়া হয় না। বিএনপির এক নেতা তো সারা দিন মাইক মুখে লাগিয়ে আছেন। সারাক্ষণ বলেই যাচ্ছেন। একবার কথা বলতে বলতে গলায় অসুখও হলো। চিকিৎসা করে তিনি আবারও কথা বলছেন। কথা তো কেউ বন্ধ করছেন না। তাদের আন্দোলনে যদি জনগণ সাড়া না দেয় সে দোষটা কাদের?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে যে, অর্থনীতিবিদ তিনি হিসাব দেখালেন তাকে আমি বলবো, তিনি কী এটা প্রকৃতপক্ষে জেনেই বলছেন, না কি না জেনেই বলছেন। আমি তার জ্ঞান নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলবো না কারণ তারা অনেক ভালো লেখাপড়া জানেন। কিন্তু একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পেয়ে একটি মানুষের বা একটা জাতি যে কতটুকু উন্নতি হতে পারে সে তো আজকের বাংলাদেশ। দেশের উন্নয়নটা বাইরের লোকে দেখে কিন্তু তারা দেখেন না চোখে।

পদ্মাসেতুর প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আরেকটি হচ্ছে পদ্মাসেতু, এই পদ্মাসেতুর অর্থ বন্ধ করালো ড. ইউনুস। কেন, গ্রামীণ ব্যাংকের একটা এমডির পদে তাকে থাকতে হবে। তাকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম গ্রামীণ ব্যাংকে উপদেষ্টা হতে। এমিরেটাস উপদ্ষ্টো হিসেবে থাকার জন্যে, আরও উচ্চ মানের। সেটায় সে থাকবে না, তার এমডিই থাকতে হবে। কিন্তু তার বয়সে কুলায় না। ড. ইউনুস কিন্তু আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন। কিন্তু কোর্ট আর যাই পারুক তার বয়স তো কমিয়ে দিতে পারবেন না ১০ বছর। গ্রামীণ ব্যাংকের আইনে আছে ৬০ বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। তখন তার বয়স ৭১ বছর। এই বয়সটা কমাবে কীভাবে, তিনি মামলায় যে হেরে যায়। কিন্তু প্রতিহিংসা নেয় ড. ইউনুস এবং যেটা আমরা শুনেছি মাফুজ আনাম তারা আমেরিকায় চলে যায়, স্টেট ডিপার্টেটমেন্টে, হেলারির কাছে ই-মেইল পাঠায়। হিলারি লাস্ট একেবারে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে যিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তার শেষ কর্মদিবসে পদ্মাসেতুর টাকা বন্ধ করে দেয়। যাক একদিকে সাপে বর হয়েছে। বাংলাদেশের নিজের অর্থায়নে পদ্মাসেতু করতে পারে সেটা আজকে আমরা প্রমাণ দিয়েছি। কিন্তু আমাদের এখানে একজন জ্ঞানী লোক বলে ফেললেন পদ্মাসেতু দিয়ে যে রেললাইন হচ্ছে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে, এ টাকা তো ঋণ নিয়ে করা হচ্ছে এই ঋণ শোধ হবে কী করে কারণ দক্ষিণবঙ্গের কোনো মানুষ তো রেলে চড়বে না। তারা তো লঞ্চে যাতায়াত করে। তারা রেলে চড়তে যাবে কেন, এই রেল ভায়াবল হবে না। সেতুর কাজ হয়ে গেছে এখন সেতু নিয়ে আর কথা বলে পারছে না। রেলে কাজ চলছে, রেলের কাজ নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছে। আমার মনে হয় আমাদের সবার উনাকে চিনে রাখা উচিত। রেলগাড়ি যখন চালু হবে উনাকে রেলে নিয়ে চড়ানো উচিত।

পদ্মাসেতু নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আর খালেদা জিয়া বলেছিলেন জোড়াতালি দিয়ে পদ্মাসেতু করা হচ্ছে। কারণ স্প্যান‌গুলো যে বসাচ্ছে ওটা ছিল তার কাছে জোড়াতালি দেওয়া। বলেছিলেন জোড়াতালি দিয়ে পদ্মাসেতু বানাচ্ছে ওখানে চড়া যাবে না, চড়লে ভেঙে পড়বে। তার সঙ্গে তার কিছু দোসসরাও। তাদেরকে কী করা উচিত, পদ্মাসেতুতে নিয়ে যেয়ে ওখান থেকে টুস করে ফেলে দেওয়া উচিত। আর যিনি একটা এমডি পদের জন্য পদ্মাসেতুর মতো সেতুর টাকা বন্ধ করে দেন তাকেও পদ্মানদীতে নিয়ে দুইটা চুবানি দিয়ে উঠিয়ে নেওয়া উচিত। মরে যাতে না যায়, একটু চুবানি দিয়ে সেতুতে তুলে দেওয়া উচিত, তাহলে যদি এদের শিক্ষা হয়। বড় অর্থনীতিবিদ জ্ঞানী, গুণী তারা এই ধরনের অর্বাচীনের মতো কথা বলেন কিভাবে, সেটাই আমার প্রশ্ন। মেগা প্রজেক্টগুলো করে না কী খুব ভুল করছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি, এতো টাকা দিয়ে স্যাটেলাইট করে কি হবে এ প্রশ্নও কিন্তু তুলেছেন তারা। অর্থাৎ বাংলাাদেশের জন্য ভালো কিছু করলেই তাদের গায়ে লাগে। কেন তারা কী এখনও সেই পাকিস্তানি জান্তাদের পদলেহনকারি খোসামোদি-তোসামোদি দল। গালিটালি দেই না, দেওয়ার রুচিও নাই তবু একটু না বলে পারি না পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী যেভাবে মেয়েদের ওপর নির্যাতন করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে, অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে, পেড়ামাটি নীতি নিয়ে বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল সেই পাকিস্তানিদের পদলেহনকারি সাবমেয়র দল এখনও বাংলাদেশে জীবিত। এখনও এরা বাংলাদেশে ভালো কিছু হলে এরা ভালো দেখে না। বাংলাদেশ এগিয়ে গেলে তাদের ভালো লাগে না। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবো ভ্যাকসিনটা বিনা পয়সা দিয়েছি আমরা হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেছি। সে ভ্যাকসিন তো তারা নিয়েছেন, এটা তো বাদ দেননি। আমরা বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি। বুস্টার ডোজও আমরা শুরু করেছি। তারা তো নিশ্চয়ই দুটো ডোজ নিয়েছেন, বুস্টার ডোজও নিয়েছেন। বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন নিতে পারলো আর আমাদের উন্নয়নটা চোখে পড়ে না। এখন কি ভ্যাকসিন চোখেও দিতে হবে না কি সেটাই মনে হচ্ছে, তাহলে যদি দেখে, তাছাড়া দেখবে না। মেগা প্রজেক্ট জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই বাংলাদেশের এই উন্নতি হচ্ছে। এর আগে, যারা ক্ষমতায় ছিল তারা কি একটা দৃষ্টান্ত দেখাতে পারবে যে তারা বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করে বা দেশের কোনো উন্নয়ন করেছে বা বিদেশে ভাবমুর্তি উজ্জ্বল করেছে, করতে পারে নাই। বাংলাদেশকে ভিক্ষুকের জাতি বানিয়েছিলেন, আজকে আমরা মর্যাদাশীল জাতি। আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে আমাদের প্রায় ৯০ শতাংশ নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতা অর্জন করেছি।

বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেশি কথা বলে যাচ্ছে বিএনপি, এদের নেতৃত্ব কোথায়, নেতৃত্ব নাই। সব তো সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এই সাজাপ্রাপ্ত আসামি দিয়ে নির্বাচনে জেতা যায় না। আর নির্বাচনে পরাজয় হবে জেনে তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, কলুষিত করতে চায়। যারা একটু আমাদের জ্ঞানী-গুণী আঁতেলরাও উল্টোপাল্টা কথা বলেন তাদেরকেও বলবো দেশ চালাবার যদি ইচ্ছা থাকে তো মাঠে আসেন, ভোটে নামেন, কেউ ভোট কেড়ে নেবে না। আমরা বলতে পারি, আমরা ভোট কেড়ে নিতে যাই না। আমরা জনগণের ভোট পাই এবং আমরা পাবো কারণ আমরা জনগণের জন্য কাজ করেছি। সেজন্যই জনগণ আমাদের ভোট দেবে।

সবশেষে তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অনেক দিন পর মন খুলে কথা বললাম। এ সময় তিনি বলেন, আসলে এই করোনা ভাইরাস বন্দি করে রেখে দিয়েছে আমাকে। ২০০৭ সালে ছিলাম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে বন্দি। এখন আমি নিজের হাতে নিজেই বন্দি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৫ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২২
এসকে/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।