ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

শিক্ষকদের বেতনের টাকা ঘুষের অভিযােগসহ ৩ অভিযানে দুদক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৯ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২২
শিক্ষকদের বেতনের টাকা ঘুষের অভিযােগসহ ৩ অভিযানে দুদক

ঢাকা: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) এক শিক্ষা পরিদর্শকের বিরুদ্ধে মিনিস্ট্রি অডিটের নামে ২০০ শিক্ষক-কর্মচারীর একমাসের বেতনের অর্ধকোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযােগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বৃহস্পতিবার (১২ মে) দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সিলভিয়া ফেরদৌস ও মো. আবুল কালাম আজাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম অভিযান পরিচালনা করে।

জানা যায়, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা-এর শিক্ষা পরিদর্শকের বিরুদ্ধে মিনিস্ট্রি অডিটের নামে ২০০ জন শিক্ষক-কর্মচারীর পুরো একমাসের বেতনের অর্ধকোটি টাকা ঘুষ হিসেবে নেওয়ার অভিযােগের এ অভিযান চালানো হয়।  

এনফোর্সমেন্ট টিম সরেজমিনে শিক্ষা ভবন পরিদর্শন করে। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালকের অনুপস্থিতে যুগ্ম পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকারের সঙ্গে অভিযােগের বিষয় নিয়ে আলােচনা করে। ওই অভিযােগের বিষয়ে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ চলছে এবং কোনো প্রকার ঘুষ দেওয়া হয়েছে কি না তা যাচাই-বাছাই করে বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করবে দুদক টিম।  

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, মার্চ মাসের শুরুতে যশোরের মণিরামপুর পৌর শহরের মণিরামপুর মহিলা আলিম মাদ্রাসা, হাজরাকাঠি মহিলা আলিম মাদ্রাসা, ডুমুরখালি দাখিল মাদ্রাসা, মনোহরপুর দাখিল মাদ্রাসা, বালিধা-পাঁচাকড়ি দাখিল মাদ্রাসা, রোহিতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাজীআলী নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দেলুয়াবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে অডিট করবে জানিয়ে চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর।

যশোর জেলা ও মণিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে পাঠানো চিঠিতে, অডিটে নিযুক্ত কর্মকর্তাকে সহযোগিতার অনুরোধ জানানো হয়। পরে অধিদপ্তরের পরিদর্শক পদমর্যদার কর্মকর্তা ড. এনামুল হক যশোরে এসে একটি রেস্ট হাউজে ওঠেন এবং শিক্ষা অফিসের কর্মচারীদের মাধ্যমে ওই ১০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানকে রেস্ট হাউজে দেখা করতে বলেন। এরপর কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ড. এনামুল হকের সঙ্গে দেখা করে অডিটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা বলেন, ‘তিনি একজন আজব অডিট কর্মকর্তা এবং আজব অডিট করে গেলেন’। কারণ হিসেবে বলেন, ‘ওই রেস্ট হাউসে দেখা করলে তিনি প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের কাছে সরাসরি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ধরে বলেন, আপনাদের অনেক ফাঁক-ফোকর! প্রকৃত অডিট হলে পুরাতন-নতুন বহু শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জটিলতা ধরা পড়বে। এতে তার বেতন বন্ধ হবে, অবসরে গেলে পেনশন পেতে দুর্ভোগ হবে আবার ক্ষেত্রবিশেষ বহু শিক্ষকের চাকরিও যাবে। ফলে, আপনারা ঝামেলা না চাইলে, আমিও ঝামেলা করতে চাই না। আপনারা কোন পথে যাবেন, নিজেরা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ঠিক করেন। ’

আরও পড়ুন
>>> ২০০ শিক্ষক-কর্মচারীর এক মাসের বেতন ‘অডিট কর্মকর্তার’ পকেটে!

অডিটরের কথা মতো এবং পুরাতন রেওয়াজ অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা স্ব স্ব বিদ্যালয়ে ফিরে কথাগুলো শিক্ষক-কর্মচারীদের জানিয়ে দিয়ে বলেন, ‘এটা নতুন কিছু না, প্রতি ১০ বছর অন্তর ‘মিনিস্ট্রি অডিট’ হয়। ফলে আমাদের বাড়াবাড়ি না করে এ মাসের বেতন তাকে ঘুষ হিসেবে দিয়ে ঝামেলামুক্ত হওয়া ভালো। ’

এরপর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের কথায় ইচ্ছা না থাকলেও ঝামেলার ভয়ে বেতনের টাকা ঘুষ হিসেবে দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব মেনে নেন সবাই। পরদিনই জেলার ওই ১০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অডিট শুরু করেন ড. এনামুল হক। কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গভীর রাতেও চলে অডিট। শিক্ষকদের ভাষায়, ‘মিনিস্ট্রি অডিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ড. এনামুলের প্রতিষ্ঠানে আগমন উপলক্ষে তাকে খুশি করতে পূর্ব মতামতের ভিত্তিতে আয়োজন করা হয় ভুরিভোজের। প্রথমে নাস্তায় অন্তত ১০ রকম ফল ও মিষ্টির আয়োজন থাকে। পরে গল্প-গুজবের মধ্য দিয়ে অডিট সম্পন্ন শেষ হলে, খানাপিনায় ছিটা রুটি, দেশি মুরগির মাংস, সাদা ভাত, পোলাও চাউলের ভাত, দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির বিলের মাছ, খাসির মাংস ও বিভিন্ন স্বাদের মিষ্টি ও কোমল পানীয়ের বিরাট আয়োজন চলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে।

এদিকে আরেক অভিযানে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের বিচ রক্ষা ও উন্নয়ন প্রকল্পে নিম্নমানের বালু দিয়ে টিউব ও জিও ব্যাগ ভর্তি করার অভিযােগে কুয়াকাটায় দুদক, সজেকা, পটুয়াখালীর সহকারী পরিচালক মো. আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে আরেকটি অভিযান চালানো হয়েছে।  

সরেজমিনে অভিযানকালে দেখা যায়, সৈকত রক্ষার্থে ২ কিলোমিটার এলাকায় জিও টিউভ বসানোর কাজ চলমান রয়েছে। আনুমানিক ৬০ শতাংশ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ২ কিলোমিটার এলাকায় ১২৭টি জিও টিউবের মধ্যে ৮৭টি স্থাপন করা হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলমান রয়েছে যার মেয়াদ আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত রয়েছে। অভিযানকালে জিও টিউব ও ব্যাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। অভিযানকালে কুয়াকাটা সৈকত এলাকায় গর্ত করে বালি উত্তোলনের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। স্থানীয় প্রায় অর্ধ শতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, ট্রাকে করে বালি এনে সৈকতে একটি অস্থায়ী কুয়া খনন করে নিচে পলিথিন ব্যবহার করে সেখানে বালির সঙ্গে পানি মিশিয়ে তরল করা হয়েছে। যা পরবর্তীতে জিও ব্যাগ ও টিউবে ভরা হয়েছে। যেহেতু প্রকল্পটি চলমান রয়েছে, বাকি কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পাদনের জন্য দুদক টিমের পক্ষ থেকে ঠিকাদারের প্রতিনিধিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দুদক টিম কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠাবে।

অপরদিকে, আঞ্চলিক পাসপাের্ট অফিস, নােয়াখালী-এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রাহকের পাসপাের্ট সেবা প্রদানে ঘুষ দাবি ও হয়রানির অভিযােগে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, নোয়াখালীর উপ-সহকারী পরিচালক আরিফ আহম্মদ ও সহকারী পরিদর্শক মো. শরিফুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত চার সদস্যের এনফোর্সমেন্ট টিম ওই অফিসে অভিযান চালায়। অভিযানে ছদ্মবেশে টিম পাসপোর্ট অফিস ও তার আশেপাশের বিভিন্ন ফটোকপির দোকান পর্যবেক্ষণ করেন।  

পর্যবেক্ষণকালে টিম বিভিন্ন সেবা গ্রহীতার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে, তাদের নিজ নিজ এলাকায় বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত সরকারির ফি'র অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে আবেদন করেছেন। দালালদের সম্পর্কে তথ্য দিতে সেবা গ্রহীতারা অনিচ্ছুক। টিম পাসপোর্ট অফিসে ছদ্মবেশে জিজ্ঞাসাবাদ করে কোনো দালালের সন্ধান পায়নি।  

এ ব্যাপারে পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক টিমকে জানায়, তার অফিসে সেবা গ্রহীতা ব্যতীত বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ। টিম পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত সকল কর্মচারীকে সতর্ক করে এবং আশেপাশের ফটোকপির দোকানগুলোকে মৌখিকভাবে সতর্ক করে। এ ব্যাপারে পরবর্তীতে টিম বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করবে।

বাংলাদেশ সময়: ২২২৯ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২২
এসএমএকে/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।