ঢাকা, বুধবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ মে ২০২৪, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

বর্তমান ও সাবেক মেম্বারের দ্বন্দ্বে ভাতাভোগীদের পোয়াবারো

এ কে এস রোকন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৬ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২২
বর্তমান ও সাবেক মেম্বারের দ্বন্দ্বে ভাতাভোগীদের পোয়াবারো

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: ইউনিয়ন পরিষদের ভোটে হেরে বিভিন্ন ভাতার কার্ড নিয়ে পাল্টাপাল্টি হয়রানির অভিযোগ উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে।  

অভিযোগ রয়েছে, ভোটে হেরে গিয়ে শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়নের ০৮ ও ০৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফটিক আলী ও আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে ভাতার কার্ড নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।

এমনকি অর্থের বিনিময়ে ভাতাভোগীদের দিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেয়ানো হচ্ছে গণমাধ্যমে। ইউপি সদস্যদের রেশে ভাতাভোগীরাও সুবিধা নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ০৮ ও ০৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য শুকুর মিয়া ও সুবহান আলী অংশ নেন। ধাইনগর ইউনিয়নের ০৮ নম্বর ওয়ার্ডে সাবেক ইউপি সদস্য শুকুরকে হারিয়ে নির্বাচিত হন ফটিক আলী। আর ০৯ নম্বর ওয়ার্ডে সুবহানকে হারিয়ে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন আব্দুল মালেক। অভিযোগ আছে, নির্বাচনে হেরে দুই ইউপি সদস্যকে হয়রানি করতেই অর্থের বিনিময়ে ভাতার কার্ড করে দেয়ার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন, সমাজসেবা অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন পরাজিত প্রার্থী সাবেক ইউপি সদস্য শুকুর ও সুবহান।

সমাজসেবা অধিদপ্তর, ইউনিয়ন পরিষদ ও সুবিধাভোগী সূত্রে জানা যায়, নবনির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এখনও নতুন করে কোনো ভাতা কার্ডের জন্য আবেদন করার সুযোগ পাননি। আগের ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সুপারিশ করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পন্ন হওয়া বিভিন্ন বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড বিতরণের কাজ করেছে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, ৮০ বছর বয়সী মোহাম্মদ আলী ২০ দিনের মাথায় ২ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন গণমাধ্যমে। তিনি বলেন, ‘৬ মাস আগে তৎকালীন ইউপি সদস্য শুকুরের হাতে বয়ষ্ক ভাতার সব কাগজপত্র দিয়েছিলাম। কয়েকদিন আগে বর্তমান মেম্বার ফটিক আমাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বুঝিয়ে দিয়েছেন। এই কার্ড পেতে আগের বা এখনকার কোনো মেম্বারকে টাকা দিতে হয়নি। কিন্তু ২০ দিন আগে হঠাৎ করে সাবেক মেম্বার শুকুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশে ডেকে নিয়ে বলেন, ‘এক হাজার টাকা দিব, বিনিময়ে ক্যামেরা ও উপস্থিত জনতার সামনে বলতে হবে, ‘টাকার বিনিময়ে বর্তমান মেম্বার আমাকে কার্ড দিয়েছে’।

‘কেন এ ধরনের দ্বিমুখী বক্তব্য’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, ‘আমি মুর্খ মানুষ। আমাকে শিখিয়ে দেয়া কথাই ২০ দিন আগে বলেছি। ’

এছাড়াও ০৯ নম্বর ওয়ার্ডের সখিনা বেগম ও মুসলেমা বেগম স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা, ০৮ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুস সাত্তার বয়স্ক ভাতা, হাজেরা বেগম বিধবা ভাতা, মজিবুর রহমানের মা বয়স্ক ভাতার কার্ড পেয়েছেন। তাদের দাবি, আগের ইউপি সদস্যকে কাগজপত্র দেওর পর বর্তমান ইউপি সদস্য ফটিক আলী ও আব্দুল মালেক তাদের কার্ড বিতরণ করেছে। তারাও এ প্রতিবেদকের সামনে একই ধরনের বক্তব্য দেন।

তদন্তের সময় বর্তমান ইউপি সদস্যরা টাকা নিয়ে বিধবা ভাতার কার্ড দিয়েছেন বলে বক্তব্য দিয়েছেন ৮ নম্বর ওর্য়াডের নাসিমা বেগম (ছদ্মনাম)। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘এই মিথ্যা কথা না বললে কেউই আর কার্ড পাইনা। তাই কার্ড পাওয়ার লোভে মেম্বারদের শিখিয়ে দেয়া কথাই বলেছি। কারণ আমার স্বামী মারা যাওয়ার ২৪ বছর পেরিয়ে গেলেও অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কেউ একটা কার্ড করে দেয়নি। তিনি আবারো আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘বাবারে আমার নাম যেন কোনোভাবে প্রকাশ না পায়। না হলে বিপদে পড়ব। ’

এদিকে স্থানীয় কলেজ শিক্ষক হুমায়ন কবীর বলেন, এখানে প্রতিহিংসার রাজনীতি নিয়ে খেলা চলছে। ভোটে হেরে বর্তমান ইউপি সদস্যদের হয়রানি করতে এসব মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। উল্টো আমরা শুনেছি, আগের মেম্বাররা ভাতার কার্ডের আবেদনের সঙ্গে বিভিন্ন পরিমাণে টাকা নিয়েছে। তবে বর্তমান মেম্বাররা কী করবে তা ভবিষ্যতই বলে দেবে। তিনি বিভিন্ন ভাতার কার্ড বিতরণে স্বচ্ছতা ও হয়রানি বন্ধের অনুরোধ জানান।

এদিকে বর্তমান ইউপি সদস্য ফটিক ও আব্দুল মালেকের অভিযোগ পাওয়ার পর উপজেলা প্রশাসন উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

০৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ফটিক আলীর দাবি, ভোটে হেরো সাবেক মেম্বার সুকুর আলী তার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ করেছেন। সরেজমিনে তদন্ত করলেই সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।

০৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল মালেক বলেন, জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। ভোটে হেরে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করার বিষয়টি দুঃখজনক। তার দাবি তিনি কারো কাছে কোনো অর্থ আদায় করেননি।

অপরদিকে, মিথ্যা অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে সাবেক ইউপি সদস্য শুকুর মিয়া বলেন, কার্ড বিতরণের সময় বর্তমান ইউপি সদস্য অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। ভোটে হারার সাথে এই অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই।  

তবে ০৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য সুবহান আলীর সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে ধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলাতে ভাতার কার্ডে টাকা নেওয়ার বিষয়ে একটি অভিযোগ হয়েছে। অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ভোটে হেরে যাওয়ার পর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নানাভাবে হয়রানি করতেই এসব অভিযোগ করা হয়েছে। আমরা চাই, মাঠ পর্যায়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে যারা প্রকৃত অপরাধী বা মিথ্যা অভিযোগকারী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক।

শিবগঞ্জ উপজেলার ইউএনও সাকিব-আল-রাব্বী বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তদন্ত চলমান থাকায় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।