ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঘূর্ণিঝড় অশনি

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় শ্যামনগর উপকূলবাসী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৩ ঘণ্টা, মে ৯, ২০২২
ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় শ্যামনগর উপকূলবাসী

সাতক্ষীরা: ঘূর্ণিঝড় অশনির স্থলভাগে আঘাত হানার শঙ্কা কমলেও সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলের মানুষ রয়েছেন চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায়।

সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর উপজেলাকে ঘিরে থাকা ৫ ও ১৫ নম্বর পোল্ডারের উপকূল রক্ষা বাঁধের ১৭টি ঝুঁকিপূর্ণ  অংশ নিয়ে ভাঙন আতংকে দিন কাটাচ্ছেন তারা।

খোলপেটুয়া, কপোতাক্ষ ও কালিন্দি নদী থেকে সমগ্র লোকালয়কে সুরক্ষা দেওয়া বাঁধের এসব অংশ নিচু হয়ে যাওয়ায় তা ভীতিকর অবস্থায় পৌঁছেছে।

স্বাভাবিকের তুলনায় নদীতে জোয়ারের পানি বাড়লে সংলগ্ন অংশের বাঁধ ছাপিয়ে ও ভেঙে পানি লোকালয়ে ঢোকার আশঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা।

যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দাবি, সমন্বয়ের ভিত্তিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঝুঁকিপূর্ণ অংশগুলোতে মাটি ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন।

শ্যামনগর উপজেলার উপকূলবর্তী কাশিমাড়ী, বুড়িগোয়ালীনি, গাবুরা ও কৈখালীর বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা যায়, অব্যাহত ঢেউয়ের তোড়ে কৈখালী বিজিবি ক্যাম্প, ভামিয়া ও হরিশখালী এলাকার বাঁধ রীতিমত সরু আইলে পরিণত হয়েছে।

এছাড়া কপোতাক্ষ পাড়ের নেবুবুনিয়া ও খোলপেটুয়া নদী তীরবর্তী ৯নং সোরাসহ আরও কয়েকটি এলাকার বাঁধ নিচু হয়ে পানি ছাপিয়ে লোকালয়ে প্রবেশের ঝুঁকি রয়েছে। বাঁধের ওপর নুতন করে মাটি না দেওয়াসহ চর দেবে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ার কারণে এসব অংশের বাঁধ ভয়াবহভাবে ভাঙনের মুখে পড়েছে। এছাড়া দুর্গাবাটিসহ বিড়ালাক্ষ্মী কুনের মাথা অংশে বাঁধের ভেতরে গড়ে ওঠা চিংড়ি ঘেরগুলোতে আউট ড্রেন না থাকায় সেসব অংশের বাঁধ দু’পাশের লবণ পানির চাপে জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানান, নুতন পরিকল্পনায় টেকসই বাঁধ নির্মাণ না করায় এক বছরের ব্যবধানে তারা আবারও বড় ধরনের ভাঙন আতংকের মধ্যে পড়েছেন।

দুর্যোগ আসার পর ভাঙন কবলিত অংশ সংস্কারের উদ্যোগের সমালোচনা করে তারা জানান, শুষ্ক মৌসুমে ভাঙন কবলিত অংশ মেরামত করা হলে ‘অশনি’র আঘাতের আগে অন্তত পরিবার পরিজন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কাটাতে হতো না।

বিড়ালাক্ষ্মী গ্রামের জোবায়ের হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস’র পর থেকে তাদের বিড়ালাক্ষ্মী কুনের মাথা অংশের বাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘদিন কোনো কাজ না করে এখন অশনির খবরে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের টনক নড়েছে। গত প্রায় এক বছর ধরে ভাঙন কবলিত একই অংশ দিয়ে অব্যাহতভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের হাজারো অভিযোগের পর সংশ্লিষ্টরা ন্যূনতম ব্যবস্থা নেয়নি বলেও তার অভিযোগ।

নৈকাটি গ্রামের আনিছুর রহমান জানান, কৈখালী বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন বাঁধের ভাঙন ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা চলার পরও কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় বর্তমানে সেখানে বাঁধ সরু আইলে পরিণত হয়েছে। শেষ মুহূর্তে এসে কাজের নামে ভাঙন কবলিত অংশে মাটি ফেলা হলেও বড় ধরনের জলোচ্ছ্বাসে তা ধসে সমগ্র এলাকা প্লাবিত হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা।

একইভাবে আব্দুর রশিদ, তৈয়েবুর রহমান এবং শ্যামাপদ মন্ডলসহ অন্যরা জানান, পৃথক একটি প্রজেক্টের অংশ হিসেবে হরিশখালী ও নেবুবুনিয়াসহ গাবুরার ৩০ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কারের কথা গত এক বছর ধরে বলা হচ্ছে। তবে কার্যাদেশ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়াসহ আরও কিছু কারণে দীর্ঘদিন ধরে ভাঙন কবলিত এসব অংশে কাজ না হওয়ায় বতর্মানে অশনি’র প্রভাবে তারা ভেসে যাওয়ার আতঙ্কে ভুগছেন।

শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম জানান, তার এলাকার অন্তত ১২টি পয়েন্টের কয়েক কিলোমিটার বাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। স্বাভাবিকের তুলনায় জোয়ার বাড়ার সঙ্গে ঝড়ো বাতাস একসঙ্গে আঘাত করলে গোটা ইউনিয়ন সাগরের সঙ্গে একাকার হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শ করে ইউনিয়নের প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে ১৫টিরও বেশি সাইক্লোন শেল্টারসহ দ্বিতল ভবন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম জানান, সীমান্তবর্তী কালিন্দি নদীর অব্যাহত ঢেউয়ে তদসংলগ্ন বাঁধের বিভিন্ন অংশ নিঁচু হয়ে গেছে।

এছাড়া কৈখালী বিজিবি ক্যাম্পসহ আরও কয়েকটি এলাকায় চর দেবে বাঁধ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ভেতরের অংশে আউট ড্রেন ছাড়া চিংড়ি ঘের পরিচালনার কারণে এসব অংশের বাঁধের দু’পাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তা সরু হয়ে ভীতি ছড়াচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেন।

তবে স্থানীয় গ্রামবাসীদের নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ভাঙন কবলিত এসব অংশে মাটি ফেলে অশনি মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেছেন।

এবিষয়ে সাতক্ষীরা পাউবো-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে উপকূলীয় এলাকার সুরক্ষায় ঝুঁকিপূর্ণ ১৭টি স্থান চিহ্নিত করে তা মেরামতের কাজ চলছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারসহ এলাকাবাসীকে এসব অংশের কাজে সম্পৃক্ত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রায় ৩৫ হাজার সিনথেটিক বস্তা বালু ভর্তি অবস্থায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ  সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, ৯ মে, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।