ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

টিটিই বরখাস্তের ঘটনায় তদন্ত কমিটির কাজ শুরু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫১ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২২
টিটিই বরখাস্তের ঘটনায় তদন্ত কমিটির কাজ শুরু

পাবনা (ঈশ্বরদী): রেলমন্ত্রীর সহধর্মিণীর আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণকারী যাত্রীদের জরিমানা করে টিকেট পরীক্ষকের (টিটিই) সাময়িক বরখাস্তের ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের তদন্ত কমিটি।

রোববার (৮ মে) পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় দফতরের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা (এটিও) সাজেদুল ইসলাম বাবু, সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী শিপন আলীর নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি তদন্ত কাজ শুরু করেছেন।

এ ঘটনায় তদন্ত শুক্রবার (৬ মে) রাতে গঠিত তদন্ত কমিটির কার্যকাল তিনদিন বাড়িয়ে মোট ৫ কার্যদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।  

রোববার (৮ মে) রেল মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে টিটিই শফিকুল ইসলামের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার ও আদেশ প্রদানকারী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন শোকজ হওয়ায় আলোচিত ঘটনার নাটকীয় মোড় নিয়েছে।  

জানা যায়, বুধবার (৪ মে) রাতে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস টেনে বিনা টিকিটে রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে ট্রেনে ওঠেন ইমরুল কায়েস প্রান্ত, হাসান ও ওমর নামের তিন যাত্রী। টিকিট চেকিংয়ের সময় তাদের জরিমানা করলে রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মি আকতার মনির ফোনে টিটিইকে সাময়িক বরখাস্ত করেন বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন। গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়।  

প্রথমে রেলমন্ত্রী নিজের আত্মীয় নন বলে দাবি করলেও বিনা টিকেটের যাত্রী ও অভিযোগকারী প্রান্তের মা ইয়াসমিন আক্তার নীপার বক্তব্যে ভ্রমণকারীরা রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ভাগ্নে ও মামাতো ভাই বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। পরে রোববার সংবাদ সম্মেলনে ওই যাত্রীদের সঙ্গে রেলমন্ত্রীর আত্মীয়তার সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকার করেন।  

মন্ত্রী পত্মীর ফোন পেয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কাউকে না জানিয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপককে (ডিআরএম) অবগত না করেই পাকশীর রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন বেশ স্বপ্রনোদিত হয়ে টিটিই শফিকুল ইসলামকে (৩৮) সাময়িক বরখাস্ত করেন।

বিষয়টি মন্ত্রী পত্মী তাকে জানাননি বলে দাবি করেন রেলমন্ত্রী। একই সঙ্গে কেন নাসির উদ্দিন টিটিই শফিকুল ইসলামকে বরখাস্ত করেছেন তা জানতে চেয়ে কারন দর্শানোর নোটিস প্রদানের কথাও জানান মন্ত্রী।  

রোববার (৮ মে) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাকশী সহকারী পরিবহন কর্মকর্তার দফতরে তদন্ত কমিটি টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগকারী ইমরুল কায়েস প্রান্ত, টিটিই শফিকুল ইসলামসহ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সকলের সঙ্গে কথা বলেন। মৌখিক ও লিখিত বক্তব্যসহ সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত শুনেন।  

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক, পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা (এটিও) সাজেদুল ইসলাম বাংলাননিউজকে জানান, আমরা অভিযোগকারী এবং অভিযুক্তের বক্তব্য গ্রহন করেছি। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য জানারও চেষ্টা করছি। বিনা টিকিটের ট্রেন যাত্রীদের সঙ্গে টিটিই শফিকুল অসদাচরণ করেছে কিনা? সেটা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিন সদস্যরা যে তদন্তের কাজ করছেন, মন্ত্রী, পশ্চিমাঞ্চলের রেল কর্মকরর্তাদের কোন কমিটির উপরে কোন ধরনের চাপ আছে কিনা? জানতে চাইলে তারা জানান, আমরা স্বস্তিতে কাজ করছি। অবশ্যয় নিরপেক্ষতা থাকবে।

টিটিই শফিকুল ইসলামকে বরখাস্তের কথা জানিয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় পাকশীর বিভাগীয়  বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন জানান, টিটিই শফিকুল ইসলাম আইন বিষয়ে এলএলএম করেন। তার সকল বন্ধুরা জজ হিসেবে কর্মরত আছেন। কিন্তু তিনি ভালো একটি চাকরি পাননি বলে মানসিকভাবে খুব হীনমন্যতায় ভোগেন। কর্মস্থলে সহকর্মীদের সঙ্গে অকারণেই চিৎকার চেঁচামেচি করেন। তার নিয়ন্ত্রণকারী (এসআরআই) সাধারণ ডিগ্রি পাস বলে তাকে তাচ্ছিল্য করতেন। মূলত তিনি তার মানসিক স্টিগমায় ভুগছেন।  

ঈশ্বরদী হেডকোয়াটার্সের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক শফিকুল ইসলাম বাংলাননিউজকে জানান, ২০১৩ সালের দিকে বাংলাদেশ রেলওয়েতে টিকিট কালেক্টর (গ্রেড-২) পদে যোগদান করে লালমনিরহাট চাকরি শুরু করি। ২০১৪ সালে ডিভিশন বদলে চুয়াডাঙ্গা ও পোড়াদহে চাকরি করেছি। পরবর্তীকালে পদোন্নতি পেয়ে ২০১৮ সালে ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক হিসাবে ঈশ্বরদী রেলজংশন স্টেশনে যোগদান করে অদ্যাবধি দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার চাকরিটা যদি পছন্দ না হতো তবে কবেই তো চাকরি ছেড়ে চলে যেতাম।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহীদুল ইসলাম বাংলাননিউজকে জানান, মন্ত্রী পত্মীর ফোন পেয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কাউকে না জানিয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপককে (ডিআরএম) অবগত না করে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন বেশ স্বপ্রনোদিত হয়ে টিটিই শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত কেন করেছেন? তাকে শোকজ করে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে কারণ চাওয়া হয়েছে।   

একজন রেল কর্মচারীর বিরুদ্ধে তদন্তের আগে একজন রেলওয়ে কর্মকর্তার এমন বক্তব্যকে বিব্রতকর এক মন্তব্য বলে আখ্যায়িত করেছেন, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহীদুল ইসলাম। তিনি বাংলাননিউজকে বলেন, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব কিংবা অতি উৎসাহী হয়ে ডিসিও নাসির উদ্দিন বরখাস্তের আদেশ দিয়েছেন কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ দর্শানো নোটিসের জবাব পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।