ঢাকা, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

আম গাছের পর এবার নষ্ট করা হচ্ছে রাস্তার তাল গাছ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২২
আম গাছের পর এবার নষ্ট করা হচ্ছে রাস্তার তাল গাছ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: আমের ফলন কম এবং দাম না পাওয়ার অজুহাতে গত ৬ মাস থেকে বড় বড় আম গাছ কেটে ফেলছে কৃষকরা। এমনকি গাছগুলোতে মুকুল আসার পর আমের গুটিসহ আম গাছ কাটতে দেখা গেছে।

কিন্তু এতেও ক্ষান্ত হয়নি কৃষকরা। এবার রাস্তার পাশের সরকারি জমিতে লাগানো তাল গাছগুলোও পুড়িয়ে বা কেটে নষ্ট করে দিচ্ছে এক শ্রেণীর কৃষক।  

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বজ্রপাতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এ ধরনের কাজ আত্মঘাতি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ হলেও খোদ এ রাজধানীতেই আমের ফলন কম এবং দাম না পাওয়ার অজুহাতে গত ৬ মাস থেকে বড় বড় আম গাছ কেটে ফেলছে চাষিরা। আমের মৌসুমেও এ ধারা অব্যাহত আছে। আর এক শ্রেণীর দিনমজুর প্রায় ১৪ হাজার টাকায় গাছ কাটা ইলেকট্রিক মেশিন নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরছে গাছ কাটার জন্য। বিশেষ করে জেলার শিবগঞ্জে বিষয়টি ব্যাপক হারে লক্ষ্য করা গেছে।  

কানসাটের দিনমজুর সায়েম জানান, তিনি দেড় মাস আগে একটি ইলেকট্রিক করাত কিনেছেন সাড়ে ১৪ হাজার টাকায়। এ সময়ে তিনি অন্তত আড়াই হাজার আম গাছ কেটেছেন। ইতোমধ্যেই তার মেশিনের টাকা উঠে এখন লাভের মুখ দেখছেন। তার দেখাদেখি এখন অনেকেই এ মেশিন কিনে গাছ কাটা অব্যাহত রখেছেন। আর আমচাষিরাও দেদারছে কাটছেন আম গাছ।

শিবগঞ্জের ঝাবু বাজারের আমচাষি সাহিন আলি জানান, তার বাড়ির পাশের ২টি বড় ফজলি আম গাছ কেটে বিক্রি করে জমি চাষ করবেন। আমের মৌসুমেও গাছে আশানুরুপ আম না থাকায় এ আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত তার।

শুধু আম গাছই নয় শিবগঞ্জের কানসাট ইউনিয়নের পশ্চিম বিলাতহরিপুর মৌজার পুঁঠিমারি বিলের একটি রাস্তার পাশের ৪ শতাধিক তালগাছ পুড়িয়ে নষ্ট ও কেটে ফেলেছে দুবৃর্ত্তরা। কৃষকরা জমির সামনের স্থানটি ফাঁকা করতে রাস্তার ধারে লাগানো তাল গাছগুলোও কেটে ও পুড়িয়ে সাবাড় করছে বলে অভিযোগ একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের। তাদের দাবি ইতোমধ্যেই ৪ শতাধিক তাল গাছ নষ্ট করা হয়েছে। ন্যাচারালি সেভ স্বেচ্ছাসেবীদের অভিযোগ কানসাট শিবনগর গ্রামের মৃত আ. বাশিরের ছেলেদের জমির সামনের তাল গাছগুলো পুড়িয়ে নষ্ট করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় এর পাশের অন্তত শতাধিক তালগাছের হদিশ পাওয়া যায়নি। রাতের অন্ধকারে দুবৃর্ত্তরা গাছগুলো উঠিয়ে নষ্ট করেছে এবং কয়েকটি স্থানে গর্তেরও সন্ধান পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে সংগঠনটির আহ্বায়ক আতিকুর রহমান মিলন জানান, তার নেতৃত্বে ২৫ জনের একটি দল গত ২ বছর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের বরেন্দ্র এলাকা থেকে ৫ হাজার তালবীজ রোপণ করে সেবা করে আসছিলেন। কিন্তু গত কয়েকদিনে দুবৃর্ত্তরা তাল গাছগুলো নষ্ট করে ফেলেছে। কৃষকদের আত্মঘাতি কাজের কারণে তাল গাছ রোপণকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গাছগুলো রক্ষার আকুতি জানিয়েছেন।

অপর এক স্বেচ্ছাসেবী আবদুল্লাহ জানান, ৪ শতাধিক গাছের মধ্যে তাদের পরিচর্যায় পুড়ে যাওয়া কিছু গাছে আবারও প্রাণের সঞ্চার হলেও লাগানো বাকি গাছ রক্ষার আবেদন তার। তার দাবি সরকারি সম্পদ নষ্টকারীদের আইনের আওতায় না আনলে বাকি গাছগুলোও নষ্ট করতে উৎসাহী হবে তারা।

আর স্থানীয় সচেতন মহল জানায়, ফাঁকা মাঠে রোদ ও বজ্রপাত থেকে রক্ষার জন্য তাল গাছগুলো রক্ষা করতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।

তবে এ বিষয়ে মৃত বাসির আলীর এক ছেলে রবিউল ইসলাম জানান, তার ভাইয়ের জমির সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। কারা করেছে তা তাদের জানা নেই। অপর ভাই আলমের দাবি কে বা কারা গাছগুলো পুড়িয়েছে তা তারা জানেন না। তবে যারাই পুড়িয়ে থাক না কেন, এটা ঠিক করেনি তারা।

অপরদিকে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাকিব আল রাব্বি জানান, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক জেলার শিবগঞ্জে ১০ লাখ তাল গাছ লাগানোর সীদ্ধান্তের বিপরীতে ২ লাখ তাল গাছ লাগানো হয়েছে এবং এসব গাছ যেন কেউ নষ্ট না করতে পারে সে দৃষ্টি প্রশাসনের আছে। অল্প কিছু গাছ যারা পুড়িয়েছে তাদের খোঁজা হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও গ্রাম পুলিশদের গাছগুলো রক্ষার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে কতগুলো তাল গাছ জীবিত আছে তার কোনো পরিসংখ্যান দিত পারেননি এ কর্মকর্তা।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাকে বজ্রপাতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দাবি করে শিবগঞ্জ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, এসব গাছ কাটা বন্ধ না হলে এর প্রভাব আগামী প্রজন্মকে ভোগ করতে হবে।

জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে বজ্রপাতের কারণে একদিনে ১৭ জনের প্রাণহানিসহ গত এক বছরে ৫১ জনের প্রাণহানি ঘটে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।