ঢাকা, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

তেঁতুলতলা মাঠ ফিরিয়ে না দিলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২২
তেঁতুলতলা মাঠ ফিরিয়ে না দিলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও

ঢাকা: থানা ভবনের নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ স্থানীয়দের এবং শিশু-কিশোরদের ফিরিয়ে দেওয়া না হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ঘেরাও করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মানবাধিকার কর্মী, পরিবেশকর্মী, সাংকৃতিক কর্মী ও স্থানীয়রা।

তারা বলেছেন, সংশ্লিষ্টরা এ সিদ্ধান্ত থেকে না সরে এলে এলাকাবাসীকে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

এটিকে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

বুধবার (২৭ এপ্রিল) তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন স্থাপনের প্রতিবাদে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত আন্দোলনকর্মীরা এসব কথা বলেন। এরপর মাঠের সীমানা ঘেষে ১৪টি দেশীয় গাছ রোপণ করা হয়।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, যারা এখানে খেলে, যারা এ মাঠের প্রকৃত মালিক তারা এখানে আছে। তারা প্রতিবাদ করছে, আমাদের মাঠ কেন দখল করা হচ্ছে? আমরা সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করছি, সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথাবার্তা বলেছিলাম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ, তিনি এখানকার স্থানীয় কয়েকজনকে কথা বলার জন্য ডেকেছেন, তারা ওখানে গেছেন।

তিনি বলেন, আপনারা যেখানে-সেখানে যখন খুশি মাঠ নিয়ে নেবেন, পুলিশ যদি এটা প্রতিষ্ঠিত করে ফেলে তাহলে আর মাঠ থাকবে না। দ্বিতীয়ত, বলা হচ্ছে এখানে যারা খেলতো তারাতো কলাগান মাঠে গিয়ে খেলতে পারবে। কিন্তু কলাবাগান মাঠেতো সবসময় সবাইকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। তাহলে এ এলাকার নতুন প্রজন্ম কোথায় যাবে?

ঢাকা শহরে আমরা শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মরে যাওয়ার অবস্থায় আছি, সেখানে যদি মাঠ দখল হয়ে যায়। তারা বলেছে ভবন নির্মাণে রাজউকের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাজউক জানে না। তাহলে কীভাবে এখানে থানা ভবন নির্মাণ হয়! অবিলম্বে এখানে থানা ভবন নির্মাণ বন্ধ হোক।

মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, আপনারা কয়েকদিন ধরে দেখছেন এখানে দেয়াল তোলা হচ্ছে। স্থানীয় বাসীন্দারা যখন আন্দোলন শুরু করেন, নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়েছে, আটক হয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে আমরা বেশ কয়েকটি সংগঠন কর্মসূচি পালন করছি।

এতোকিছুর পরও আজকে আমরা লক্ষ্য করছি এখানে দেয়াল তৈরি হচ্ছে, এর মাধ্যমে তারা একধরনের অপকৌশল নিচ্ছে। দেয়াল নির্মাণের মধ্য দিয়ে মাঠ ব্যবহার সীমিত হয়ে যাবে।

অনতিবিলম্বে সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত আসুক, এটিকে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার মাঠ হিসেবেই বিবেচনা হোক। কোন গোষ্ঠীকে যেন না দেওয়া হয়, কোন থানা বা কোন স্থাপনা যেন তৈরি না হয়। এখানকার শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠ, সামাজিক কর্মকাণ্ড, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্যই যেন উন্মুক্ত থাকে।

তিনি আরও বলেন, আমরা একটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেছি। আপনারা যদি সিদ্ধান্ত নিতে কালক্ষেপণ করেন, স্থানীয় বাসীন্দাদের পাশাপাশি আমরা এমন আন্দোলন তৈরি করব যাতে এটি খেলার মাঠ হিসেবেই উন্মুক্ত থাকে, স্থানীয় জনগণ যাতে এটি ব্যবহার করতে পারে।

তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সৈয়দা রত্না বলেন, আমি এই মাঠ উন্মুক্ত দেখতে চাই। এই মাঠে এলাকার ছেলে-মেয়েরা খেলা করবে। মাঠটি শিশুদের জন্য উন্মুক্ত করাই আমার একমাত্র চাওয়া। মাঠে শিশু কিশোররা খেলতে পারলে আমার আর কোনো অভিযোগ থাকবে না।

উদীচির সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন বলেন, তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা না করা হলে, থানা ভবন নির্মাণ বন্ধ না হলে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ঘেরাও করা হবে।

এ সময় স্থানীয় শিশু-কিশোররা মাঠে উপস্থিত হয়ে 'মাঠ চাই-মাঠ চাই, দাবি মোদের একটাই' সহ নানা স্লোগান দিতে থাকে।

আমাদের মাঠে আমরাই খেলব: মাঠে আন্দোলনকরীদের স্থাপিত সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে তেতুঁলতলা মাঠ, আমাদের মাঠে আমরাই খেলব। এখানে ড্যাপের প্রস্তাবিত কলাবাগান এলাকার একটি মানচিত্র রয়েছে, যাতে স্থানটি মাঠ হিসেবেই চিহ্নিত রয়েছে। সাইনবোর্ডটি প্রচারে- শিশু কিশোর ও নাগরিকবৃন্দ লেখা আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২২
পিএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।